শিক্ষা সামগ্রী তুলে দেওয়া হচ্ছে

South Bengal News: বাড়ি বাড়ি ঘুরে অর্থ সঞ্চয় একদল দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়ার! কারণ চোখে জল আনবে

পশ্চিম মেদিনীপুর: ওদের বয়স অল্প, কিন্তু চিন্তাভাবনা অন্যান্য আর পাঁচজনের থেকে অনেকটাই আলাদা। এই বয়সে এসে যখন অন্যান্য ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা কিংবা খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে, তখন এই সমস্ত ছেলেমেয়েদের কর্মকান্ড শুনলে আপনারও শ্রদ্ধায় মাথা নত হবে। যখন অন্যান্য আর পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষজন এই বিষয় নিয়ে ভাবেই না, তখন দ্বাদশ শ্রেণীর বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়ে তা বাস্তবে করে দেখিয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের এহেন মানসিকতা ও চিন্তা ভাবনাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলে। সকলের হাত খরচ এমনকী টিফিনের খরচ সংগ্রহ করে এলাকারই বেশ কয়েকজন অসহায় পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা।

আরও পড়ুনঃ ব্যবসায়ীদের সরাসরি উচ্ছেদ নয়, আগাম সর্তক করছে ঝালদা পৌরসভা!

“প্রত্যেকে আমরা পরের তরে” বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় এই ছোট্ট লাইনের তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে শুধু পড়াশোনা নয়, পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের সমাজ প্রতি তাঁদের উদ্যোগ জানলে আপনিও চমকে যাবেন। প্রায় বছর খানেক আগে একাদশ শ্রেণীর কয়েকজন মিলে একত্রিত হয়ে গড়ে তোলে একটি সংগঠন। নাম দেয় চারুলতা। এরপর বিভিন্ন সময়ে কখনও শীতবস্ত্র, আবার কখনও শিক্ষাসামগ্রী প্রদান করে আসছে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। শুধু তাই নয়, তাঁদের বয়স এবং তাঁদের ক্ষমতা স্বল্প হলেও তাঁদের ভাবনা বহুদূর বিস্তৃত।

এখন প্রত্যেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ে। কেউ বিজ্ঞান, কেউ কলা বিভাগ, কেউ আবার বাণিজ্যিক বিভাগে পড়াশোনা করছে। প্রত্যেকে পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিমাসে নিজেরা সঞ্চয় করে তাদের হাত খরচের সামান্য টাকা কিংবা টিফিনের টাকা। সেই জমানো অর্থে তৃতীয় বার পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াল দ্বাদশ শ্রেণীর এই পড়ুয়ারা। শনিবার বিকেলে অনাড়ম্বর আয়োজনে এলাকায় পারিবারিকভাবে অসচ্ছল তিনজন পড়ুয়ার হাতে অর্থ এবং ১০ জন পড়ুয়ার হাতে নানান শিক্ষার সামগ্রী তুলে দেয়। নিজেদের জমানো কিংবা শিক্ষক-শিক্ষিকা, বাবা-মা, অভিভাবকদের থেকে অর্থ জোগাড় করে তাঁরা করেছে এই কাজ।

বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে বোধিসত্ত্ব সাউ, জ্যোতি ঘোষ, অনুষ্কা প্রধান, অনিরুদ্ধ প্রধান, স্বপ্ননীল মাইতি, শ্রেয়া দাস, বন্দনা দাস, সৌম্যদীপ দে’রা তৈরি করে চারুলতা। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য ছিল নিজেরা পড়াশোনা করার পাশাপাশি পাশে দাঁড়াবে অন্যান্যদের। কখনও অসহায়দের মুখে খাবার তুলে দেওয়া, কখনও আবার পড়াশোনায় অন্যান্যদের সহযোগিতা করা, এই ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য। নানা বাধা-প্রতিকূলতা পেরিয়ে তৃতীয়বার তাঁদের এই আয়োজন। নারায়ণগড়, বেলদা, কেশিয়াড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় পারিবারিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের পড়ুয়াদের হাতে নানান সামগ্রী তুলে দিল দ্বাদশ শ্রেণীর এই পড়ুয়ারা।

পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের এহেন উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলে। যে ভাবনা হয়ত প্রাপ্তবয়স্করা ভাবেইনা, তা করে দেখিয়েছে এই ছাত্রছাত্রীরা। বয়স অল্প হলেও তাদের এই মহতী ভাবনা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে।

রঞ্জন চন্দ