শিক্ষার্থী থেকে এখন আইআইটির প্রথম মহিলা ডেপুটি ডিরেক্টর! অবাক করা সাফল্যের গল্প

West Medinipur News: শিক্ষার্থী থেকে এখন আইআইটির প্রথম মহিলা ডেপুটি ডিরেক্টর! অবাক করা সাফল্যের গল্প

পশ্চিম মেদিনীপুর: ছোটবেলা শুরু হয়েছিল বাংলার প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা থেকে। জন্ম, বড় হয়ে ওঠা এবং পড়াশোনা ওড়িশার রাউরকেল্লাতে। তবে আইআইটি ছিল তার কাছে স্বপ্ন। স্বপ্ন সফল করতে তিনি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে যোগ দেন আইআইটি খড়্গপুরে। এর পর অবশ্য তাঁকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

পড়াশোনা, অধ্যাপনা এবং বর্তমানে দেশের প্রাচীনতম প্রযুক্তিবিদ্যার প্রতিষ্ঠানের তিনি সহকারী প্রধান। আইআইটির ইতিহাসে তিনিই প্রথম মহিলা প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। শুধু তাই নয়, একদিকে যেমন নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলাচ্ছেন, তেমনই এখনও বজায় রেখেছেন অধ্যাপনা পেশাকে।

আরও পড়ুন- মাত্র ১৬০০ টাকায় হয়ে যাবেন MBBS! এত কম খরচে দেশের কোথায় ডাক্তারি পড়া যায়? জেনে নিন!

এখনও নিয়ম করে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেন তিনি। অত্যন্ত মিষ্টিভাষী এবং গুণী মানুষ আইআইটি খড়্গপুরের ডেপুটি ডিরেক্টর অধ্যাপিকা রিন্টু ব্যানার্জি। ছোট থেকে তার জীবনের সংগ্রাম এবং বর্তমানে তার সফলতা সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে প্রিয় শিক্ষিকা আইআইটি খড়্গপুরের ডেপুটি ডিরেক্টর।

শিক্ষার্থী যেন তার কাছে সন্তান। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আইআইটির জন্য এবং আইআইটির শিক্ষার্থীদের জন্য তার নিরলস চেষ্টা। মেয়েদের পড়াশোনা এবং মেয়েদের শিক্ষা বিস্তারে তার ভূমিকা অপরিসীম। যখন তিনি আইআইটি খড়্গপুরে এসেছিলেন তখন ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যা ছিল সামান্য। তবে বর্তমানে আইআইটি খড়্গপুরে একাধিক মেয়েদের হোস্টেল এবং পড়াশোনার মান বৃদ্ধিতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

আরও  পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র পাখি, যেটির ডানা নেই! কোন পাখি? বলুন দেখি…উত্তর মিলিয়ে দেখুন

ভারতের প্রাচীনতম প্রযুক্তিবিদ্যার প্রতিষ্ঠান তথা আইআইটি খড়্গপুরের সুদীর্ঘ ৭৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ডেপুটি ডিরেক্টর (Deputy Director)-র মতগুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ পদে একজন মহিলার ‘অভিষেক’ নিঃসন্দেহে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলানকিংবা অধ্যাপনাই নয়, প্রফেসর রিন্টু ব্যানার্জি কাজ করেছেন গ্রামীন এলাকার মূলবাসী মানুষদের জন্য। গ্রামীন এলাকায় অতি পরিচিত মুখ তিনি।

প্রায় ৩০ বছর ধরে গ্রামীন এলাকার জন্য তিনি কাজ করে চলেছেন। তিনি লোধা সম্প্রদায়ের মহিলাদের কাজে লাগিয়ে, কাজুর পাকা ফল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের হেলথ ড্রিঙ্ক, জ্যাম, জেলি প্রস্তুত করে বাজারে বিক্রি করে স্বনির্ভরতার দিশা দেখিয়েছেন। যা শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় ভারতের বিভিন্ন জায়গা এই বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।

জানা গিয়েছে, অধ্যাপিকা রিন্টু ব্যানার্জী আইআইটি খড়্গপুরের পি.কে সিনহা সেন্টার ফর বায়োএনার্জি অ্যান্ড রিনিউয়েবলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান এবং বর্তমানে চেয়ারপার্সন। গত তিন বছর ধরে তিনি আইআইটি খড়গপুরের কৃষি ও খাদ্য প্রকৌশল বিভাগের (Agriculture and Food Engineering) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

শুধু তাই নয়, আইআইটি খড়্গপুরের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ডিন (Dean of Research and Development) হিসেবে এবং গ্রামীণ উন্নয়ন, উদ্ভাবনী ও টেকসই প্রযুক্তি কেন্দ্রের (Centre for Rural Development, Innovative and Sustainable) প্রধান হিসেবে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর উদ্বাবনী ভাবনা ও আবিষ্কার কেবল ভারতেই নয় আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসিত। জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের আর্থিক ও বৈজ্ঞানিক জগতে অসামান্য অবদান জন্য ICAR-র অসামান্য মহিলা বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি ‘পাঞ্জাবরাও দেশমুখ পুরস্কার’- এ ভূষিত হয়েছেন।

এছাড়াও, ভারতের বায়োটেক রিসার্চ সোসাইটি দ্বারা ‘সেরা মহিলা জীববিজ্ঞানী’; অ্যাসোসিয়েশন ফর ফুড সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড টেকনোলজিস্ট (ভারত) থেকে ‘ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড’, লুই পাস্তুর পুরস্কার; মদন মোহন মালব্য পুরস্কার এবং রফি আহমেদ কিদওয়াই পুরস্কার-ও পেয়েছেন অধ্যাপিকা রিন্টু ব্যানার্জি। একজন জীববিজ্ঞানী হিসেবে সারা পৃথিবী জুড়ে নিজের অসামান্য প্রতিভা ও উদ্ভাবনী সত্ত্বার স্বাক্ষর রেখেছেন। আইআইটির মতশ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এবং আইআইটিকে আরও শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সুন্দর ব্যবহার, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি ভালবাসা এবং সমাজের প্রতি নিষ্ঠাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সকলে।

রঞ্জন চন্দ