Tag Archives: Armenia

Armenia Tourism: পুজোর লম্বা ছুটিতে অফবিট জায়গায় যেতে চাইছেন? তাহলে ঘুরে আসতে পারেন আর্মেনিয়ায়; দেখে নিন এখানকার প্রধান আকর্ষণগুলি

সিদ্ধার্থ সরকার- ইয়েরেভান, আর্মেনিয়া: বিশ্বভ্রমণের সুযোগ এখন হাতের মুঠোয়। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ছেন পর্যটকরা। তবে তথাকথিত ইউরোপ কিংবা আমেরিকার জনপ্রিয় স্থান ছেড়ে পর্যটকরা বেছে নিচ্ছেন অফবিট ডেস্টিনেশন। এর মধ্যে অন্যতম হল আর্মেনিয়া। যা ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। আসলে বিশ্বের প্রাচীনতম দেশগুলির মধ্যে অন্যতম হল আর্মেনিয়া। এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যবর্তী ককেশাস পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যেই অবস্থান করছে এই দেশটি। ফলে এখানে এলে ঘুরে দেখতেই হবে গ্রাম্য সৌন্দর্যে মোড়া মনেস্টারি কিংবা গির্জা। এর পাশাপাশি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রাজধানীর কেন্দ্রস্থলের অনতিদূরে থাকা পাহাড়ি শ্যাক। এখানেই শেষ নয়, এই দেশে এলে ঘুরে দেখার রয়েছে আরও অনেক কিছু। আজকের প্রতিবেদনে আর্মেনিয়ার দ্রষ্টব্য তথা আকর্ষণীয় কিছু জায়গার বিষয়ে আলোচনা করে নেওয়া যাক।

আরও পড়ুন– ইউরোপ-এশিয়ার সুন্দর দেশগুলির থেকে কোনও অংশে কম নয়; ধীরে ধীরে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে রাশিয়ায়, রইল ভ্রমণের খুঁটিনাটি

রাজধানী শহরে ঘোরাঘুরি:

আর্মেনিয়ার রাজধানী শহর ইয়েরেভান বড়ই সুন্দর। পায়ে হেঁটে দিব্যি ঘুরে নেওয়া যাবে শহরটা। সারি সারি ক্যাফে, সুন্দর সাজানো-গোছানো পার্ক, দুর্দান্ত দোকান তো আছেই। এর পাশাপাশি নদীর উপত্যকা শহরের কেন্দ্রস্থলকে যেন সবুজে মুড়ে রেখেছে। আর ইয়েরেভানের স্ট্রিট কালচারে মার্সেইল আর পুরাতন বেইরুটের মিশেল লক্ষ্য করা যাবে। এর মধ্যে অবশ্য প্রতিফলিত হয় সোভিয়েত প্রভাবও। নয়া ধাঁচের সমকালীন এক আর্ট মিউজিয়াম হল কাফেসজিয়ান সেন্টার ফর দ্য আর্টস (Cafesjian Center For The Arts)। সেখান থেকে গোটা শহরটাকে দেখার সুযোগ পাবেন পর্যটকরা।

আরও পড়ুন– ‘আইএএস হয়ে তবেই ফিরব’ বলেছিলেন শ্রেয়া; ছোট থেকে একই ইচ্ছা ছিল তানিয়ারও, সব স্বপ্নের সলিল সমাধি ঘটল দিল্লির রাজেন্দ্রনগরে

মনেস্টারির সৌন্দর্য:

আর্মেনিয়ার প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় দেখা মিলবে মধ্যযুগীয় গির্জা এবং মনেস্টারিগুলি। পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে উঠে সুন্দর দৃশ্য যেন চোখ জুড়িয়ে দেবে। ইয়েরেভান থেকে কিছু দূরেই রয়েছে Vagharshapat (formerly Ejmiatsin)-এ থাকা Etchmiadzin Cathedral এবং গির্জা ঘুরে দেখা যেতে পারে। এর পাশাপাশি দশম শতকে প্রতিষ্ঠিত হাঘপাত ও সানাহিন বাইজ্যানটাইন মনেস্টারির প্রাঙ্গণও অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। তবে এর মাঝে দুর্ধর্ষ আপার এজাত উপত্যকার Geghard Monastery ঘোরার কথা ভুললে চলবে না। গার্নি মন্দির থেকে এজাত নদীর পাশ দিয়ে হাঁটার সময় ব্যাসল্টের খাড়াই পাহাড় এবং টিউবের মতো পাথরের গঠন উপভোগ করতে পারেন।

গার্নির দুর্ধর্ষ পাথুরে গঠন:

রাজধানী শহর থেকে মাত্র ২৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গ্রাম হল গার্নি। এখানে রয়েছে প্রথম শতকের হেলেনিস্টিক-ধাঁচের মন্দির। গ্রামের নিচে অবস্থিত মন্দির থেকে এজাত নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে উঠতে হবে। আর হেঁটে ওঠার পথেই পাথুরে গঠন দেখা যাবে। যা রীতিমতো চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। এটাই সিম্ফোনি অফ স্টোনস (Symphony of the Stones) নামে পরিচিত। এখানে আসার পথে পেরোতে হবে ১১ শতকের একটি সেতু। আর সেই পথে পড়বে চোখ জুড়ানো কিছু জলপ্রপাতও।

ধর্মীয় সম্প্রদায় মলোক্যানদের দেখার সুযোগ:

ফিওলেতোবো গ্রামেই বাস করেন প্রায় ৩০০০ মলোক্যান। এঁরা আসলে ধর্মীয় সম্প্রদায়। আর তাঁরা খ্রিস্টধর্মাবলম্বী ঐতিহ্যবাহী ইস্টার্ন অর্থোডক্সি, ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্টদের বাইরে হন। তবে তাঁরা সাধারণত বাইবেলের শব্দগুলিকে আক্ষরিক অর্থেই মেনে চলেন। তবে তাঁরা ক্রুশের সামনে প্রার্থনা করেন না। কারণ এটি মানুষের তৈরি। তাঁরা শতাব্দীপ্রাচীন রীতি নিয়ম মেনে চলেন। মলোক্যানদের নিজেদের সম্প্রদায়ের বাইরে বিয়ে করার অনুমতি নেই। পুরুষদের গাঢ় রঙা প্যান্ট এবং সাদা শার্ট পরতে হয়। দাড়ি রাখতে হয়। আর মহিলারা পরেন লম্বা ঝুলের পোশাক এবং তাঁদের মাথায় থাকে স্কার্ফ।

ব্রাজিলের ফ্যাভেলার কথা মনে পড়বেই:

এই দেশ দারিদ্র্যে বিদীর্ণ। মধ্য ইয়েরেভানের রাস্তায় প্রচুর ভিক্ষুকের দেখা মিলবে। তবে শহরের কেন্দ্রস্থলে থাকা বহু নাগরিকই বেশ ধনী। পাঁচ মিনিট পাহাড়ি পথে হেঁটে শহরের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে কোন্ড এলাকায় পৌঁছনো যাবে। রাজধানী শহরের প্রাচীনতম এলাকার মধ্যে অন্যতম এটি। যা তৈরি হয়েছিল সতেরো শতকে। এখানে ঘোরাঘুরি করলে ব্রাজিলের ফ্যাভেলার কথা মনে পড়ে যাবে। তবে দিনের বেলায় এখানে হেঁটে ঘুরে বেড়ানো নিরাপদ। আর এই এলাকায় ঘুরলে আর্মেনীয়দের জীবনযাপনের হদিশ মিলবে।

দেশের ইতিহাস:

অতীতের শাসক এবং আক্রমণকারীদের সঙ্গে বহু শতাব্দীর দ্বন্দ্ব এবং বিরোধের পর ১৯৯১ সালে স্বাধীন হয়েছিল আর্মেনিয়া। এই আক্রমণকারীদের মধ্যে ছিল গ্রিক, রোমান, মোঙ্গল, পার্সিয়ান, অটোমান এবং সোভিয়েতরা। সেই ইতিহাসের একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায় ইয়েরেভানের কেন্দ্রের পশ্চিমে একটি পাহাড়ের চূড়ায় মিউজিয়াম অফ দ্য আর্মেনিয়ান জেনোসাইড (Museum of the Armenian Genocide) দেখতে পাওয়া যাবে।

আর্মেনিয়ার নৈশজীবন:

রাজধানী শহরের পানশালা, ক্লাব, রেস্তোরাঁর পাশাপাশি রয়েছে দারুণ অপেরা হাউজও। মালখাস জ্যাজ ক্লাবে (Malkhas Jazz Club) রাতের লাইভ পারফরম্যান্স দেখার সুযোগ মিলবে। ভোর ৩টে পর্যন্ত এটা চলে। সপ্তাহে বেশ কয়েক রাত সেখানে পারফর্ম করেন আর্মেনিয়ান জ্যাজের জনক এবং প্রতিষ্ঠাতা লেভন মালখাসিয়ান। এছাড়া রয়েছে ইয়েরেভান প্লাজা বিজনেস সেন্টারের এল স্কাই বারও। দুর্দান্ত দৃশ্য, সুস্বাদু পানীয় এবং দারুণ ডিজে সেটও উপভোগ করা যাবে।

রাজকীয় পর্বত আরারতের দুর্ধর্ষ সৌন্দর্য:

ইয়েরেভান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূর থেকে দেখা মিলবে সুন্দর এই আগ্নেয় পর্বতের। যা ৫১৩৭ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এর নীচে রয়েছে তীর্থস্থান। তুরস্ক-আর্মেনিয়ার সীমান্তে রয়েছে আর্মেনিয়ার সবথেকে ঐতিহাসিক এবং ছবির মতো মনুমেন্ট – খর ভিরাপ মনাস্ট্রি (Khor Virap Monastery)। যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে।