কলকাতা: একজন ফটোগ্রাফার এবং শিল্পী হলেন বিশ্বকর্মা। অথচ তাঁর নান্দনিক বোধ আশপাশের কেউই বুঝতে পারেন না। সকলেই ভাবেন, তিনি একজন খারাপ ফটোগ্রাফার। তাই তিনি উপেক্ষিত। ফলে কাজ আর জোটে না। জোটে কেবলই মৃত মানুষের ছবি তোলার বায়না। সংসারে অনটন রয়েছে। কারখানায় কাজ করে কোনওক্রমে সংসার টানেন বিশ্বকর্মার স্ত্রী মালা। আর টানাটানির এই সংসারেও স্বামীর প্রতি এক সম্মানমিশ্রিত মমত্ববোধ কাজ করে তাঁর। গল্পের পট-পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে একটা সময়ে মালা আর বিশ্বকর্মা এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছন, যেখানে তাঁরা দু’টি চূড়ান্ত অনভিপ্রেত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। কিন্তু কী সেই সিদ্ধান্ত? আর কী-ই বা পরিণতি হয় তাঁদের? একজন শিল্পী কি এই সময়ে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের শিল্পবোধ নিয়ে টিকে থাকতে পারবেন? আর এই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে ‘নেগেটিভ’ ছবিতে।
আরও পড়ুন– মাস্কারা চোখকে আকর্ষণীয় করে তোলে তো বটেই, শুধু যদি লাগানোর আগে আর পরে এই নিয়মগুলো মেনে চলেন
শান্তনু নাথের মর্মস্পর্শী লেখনীতে পরিচালক বাপ্পা বুনেছেন একজন অসহায় শিল্পীর জীবনের এই ঘাত-প্রতিঘাতের গল্প। এর আগে বাদল সরকারের বহুলচর্চিত জনপ্রিয় নাটক অবলম্বনে তৈরি ‘শহরের উপকথা’-র মতো প্রশংসিত ছবি বানিয়েছেন বাপ্পা। সেই ছবিতে ফুটে উঠেছিল সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপট। এবার নিজের পরবর্তী ছবি ‘নেগেটিভ’-এর শ্যুটিং শেষ করলেন তিনি। এই ছবির মূল কাহিনিতে ফুটে উঠেছে আর্থিক দৈন্য এবং মর্মান্তিক জীবন সংঘর্ষের যুযুধান-চিত্র।
‘নেগেটিভ’ ছবিতে বিশ্বকর্মা এবং তাঁর স্ত্রী মালার ভূমিকায় দেখা যাবে রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেবলীনা দত্তকে। এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করবেন শ্রীলেখা মিত্র, রাণা বসু ঠাকুর, শান্তনু নাথ, রিমি দেব এবং খালেদ মেহমুদ তূর্যকে। ছবিটির প্রডাকশনের দায়িত্বে রয়েছে A4J ফিল্মস। আর চিত্রগ্রহণ করেছেন অপু মুখোপাধ্যায়। শিল্প এবং সঙ্গীত নির্দেশনা করেছেন যথাক্রমে নীল কৌশিক এবং সৌম্য রীত। নেগেটিভ ছবিটির সম্পাদনার দায়িত্বে রয়েছেন সায়ন্তন নাগ।
আরও পড়ুন– ভাই-বোনের বিয়ে বাধ্যতামূলক, লঙ্ঘন করলেই শাস্তি ! এমন প্রথা প্রচলিত এ দেশেরই এক রাজ্যে
পরিচালক বাপ্পা বলেন যে, “রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটকে মাস্টার্স করেছি। প্রায় ১০ বছর ধরে থিয়েটার করছি। সেখান থেকেই শিল্পী মনের বাস। প্রথম সিনেমা ‘শহরের উপকথা’-ও বাদল সরকারের নাটক নিয়েই। সিনেমা বানানোর ইচ্ছে হয় তখনই, যখন মনে এমন কোনও ভাবনার সঞ্চার হয় যে, এই কাজটা নিজের জন্য নয়, বরং সমাজের জন্যই করা উচিত। সেখান থেকেই এই ‘নেগেটিভ’ বানানোর সিদ্ধান্ত। আমরা সকলেই লড়াই করছি প্রতিনিয়ত, কেউ সম্মান, কেউ বা যথার্থ সাম্মানিকের জন্য। কিন্তু এই লড়াই থেমে থাকে না এই ছবির গল্পে। এক অন্য ভাবধারার জন্ম নেয় শান্তনু নাথের এই গল্পে। যা একজন শিল্পী হিসেবে আমাকে ভীষণ ভাবে ছুঁয়ে গিয়েছিল। রাহুলদা, দেবলীনাদি, শ্রীলেখাদির মতো ইন্ডাস্ট্রির প্রখ্যাত শিল্পীদের ও পুরনো বন্ধুদের পাশে পেয়ে আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ।”
অভিনেতা রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে, “নেগেটিভ ছবিটা করে আমার নিজের খুবই ভাল লেগেছে। তার একটা অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে, এর অনেকগুলি স্পেস রয়েছে। আর গল্পটা লিনিয়ার স্ট্রাক্চার অনুসরণ করলেও কখনও ননলিনিয়ার হয়ে উঠেছে। তো আবার কখনও থট স্পেসে চলে গিয়েছে। আর সেই স্পেসগুলোয় একজন অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ছিল।
আর সবথেকে বড় কথা হল, এই ছবিতে পিতা-পুত্র উভয়ের চরিত্রেই অভিনয় করেছি আমি। সেটা খুবই ভাল লেগেছে। আমার বিশ্বকর্মা চরিত্রটির মধ্যে অনেকগুলি স্তর রয়েছে। আর পুরো ছবি জুড়ে ফুটে উঠেছে বিচিত্র একটা সাইকোলজিক্যাল জার্নি। যেটা আমার দারুণ লেগেছে। বাপ্পার সঙ্গে এটা আমার দ্বিতীয় কাজ। যেটা সবথেকে ভাল লাগে, সেটা হল – তিনি নিজের টিম নিয়ে খুবই গর্বিত এবং সকলকেই খুব প্রাধান্য দেন l”
অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত বলেন, “নেগেটিভ ছবির স্ক্রিপ্ট আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। তাই যখন পরিচালক বাপ্পা গল্পটি শোনান, তখনই আমি কাজটা করতে রাজি হয়ে যাই। এর আগেও ‘ত্রিভুজ’ নামে একটি ছবি করেছি বাপ্পার সঙ্গে, সেখানেও চিত্রনাট্য খুবই ভাল ছিল। আর এই গল্পে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিশ্বকর্মার সঙ্গে মালা চরিত্রটির রসায়ন। এরপর শ্যুটিং ফ্লোরে খুবই ভাল পরিবেশ এবং সহ-অভিনেতা পেয়েছি। যাতে আমার কাজ করতে আরও সুবিধা হয়েছে। এরপরেও আরও একটা বিষয় বলার রয়েছে। পরিচালকের প্রোডাকশন ডিজাইন নিয়েও একটা স্পষ্ট চিন্তাভাবনা করার সুযোগ পেয়েছি; সেটা সেট, লোকেশন, পোশাক কিংবা রূপসজ্জা সব কিছুতেই। এই গল্প সত্যিই বিরল। তাই আশা করব যে, ছবিটি দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবে।”