Tag Archives: PANCHETGARH HERITAGE RAJ BARI

Weekend Tour Destination: ঝিমঝিম বৃষ্টিভেজা রাতে মৃদু আলোয় মনের মানুষের পাশে, ছোট্ট বিরতিতে বেড়াতে আসুন ঘরের কাছে এই রাজবাড়িতে

সৈকত শী, পটাশপুর: ক্যালেন্ডারের পাতায় শ্রাবণ মাস মানে বর্ষাকাল। বর্ষাকাল মানে একঘেয়েমি। একঘেয়েমি জীবন থেকে মুক্তি পেতে বেড়াতে মন চায়। কিন্তু হাতের কাছে বর্ষায় ঘোরার মত জায়গা খুব কম। যদিও বা আছে তাও বেশ কয়েকবার ঘোরা হয়ে গিয়েছে। ফলে কোথায় যাবেন তা ভেবে খুঁজে পাচ্ছেন না। বর্ষার রাতে ঝিমঝিম বৃষ্টি আর পুরনো রাজবাড়ির মৃদু আলো। কল্পনা করে দেখুন কত রোমাঞ্চকর বিষয়। বছরের অন্যান্য সময় থেকে বর্ষাকালে রাজবাড়িগুলির পরিবেশ তার ঐতিহ্যের জানান দেয়। রাজবাড়ির দালানে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপ হাতে বর্ষা দেখার মজা আলাদাই। চুটিয়ে বর্ষার মজা উপভোগ করতে এই বর্ষায় মনের মানুষের সঙ্গে গন্তব্য হোক পুরানো রাজবাড়ি।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরে অবস্থিত পঁচেটগড় রাজবাড়ি। দাস মহাপাত্র পরিবারের এই রাজবাড়ি গড়ে ওঠার পিছনে আছে চমকপ্রদ ইতিহাস। এই রাজবাড়ির পূর্বপুরুষ কালা মুরারিমোহন দাসমহাপাত্র ছিলেন বিখ্যাত সেতারবাদক। তাঁর সেতার বাজানোর খ্যাতি পৌঁছে যায় দিল্লির মুঘল দরবারে। মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব তাম্রলিপ্ত বন্দরের প্রশাসকের কাজ দেন। তাঁর কাজে খুশি হয়ে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব পটাশপুর পরগনার জায়গির দান করেন। শিবের উপাসক এই দাস মহাপাত্র বংশের পূর্বপুরুষরা। স্থাপন করে পঞ্চ শিবের মন্দির। পঞ্চ শিবমন্দির লোকমুখে পরিবর্তিত হতে হতে আজকে এই পঁচেট গড়। পরে এই রাজপরিবার বৈষ্ণব ধর্মের অনুরাগী হয়। স্থাপিত হয় বর্তমান কুলদেবতা কিশোররাই জিউ-র মন্দির।

স্থাপত্য শিল্পকলার দিক থেকে বিভিন্ন মন্দির ও বিভিন্ন স্থাপত্য বিভিন্ন স্থাপত্য ঘরানার নিদর্শন পাওয়া যায় পঁচেটগড়ে। বাংলার পঞ্চরত্ন স্থাপত্যকলা থেকে ওড়িশার রথ দেউল স্থাপত্য কলা এবং দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যকলার নিদর্শন পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন স্থাপত্য পাশ্চাত্য রীতির নিদর্শন পাওয়া যায়। পঁচেটগড়ের জমিদাররা ছিলেন সঙ্গীত, শিল্প ও ধর্মের সত্যিকারের সহযোগী। রাজবাড়ির সেন্ট্রাল হলকে “দ্য জলসাঘর”  বলা হয়। এখানে এক সময় ভারত বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন।

আরও পড়ুন : সুগার কমিয়ে বয়স হাঁটবে উল্টো দিকে! কোষ্ঠকাঠিন্য সাফ! ভাতের পাতে রাখুন ডিম্বাকৃতি বর্ষার এই সবুজ সবজি

বর্তমানে হেরিটেজ তকমা পাওয়া রাজবাড়ি ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। কলকাতা থেকে মাত্র ১৯০ কিলোমিটার দূরে। সহজেই সড়কপথে পৌঁছানো যায় পঁচেটগড় রাজবাড়িতে। পঁচেটগড়ে অবস্থিত অনেক মন্দিরের পাশাপাশি রয়েছে এগরার হাটখোলা মন্দির। দিঘা থেকে পঁচেটগড়ের দূরত্ব মাত্র ৪৭ কিলোমিটার। প্রাচীন জনপদের ইতিহাসের হাতছানি আপনাকে নিয়ে যাবে প্রায় ৫০০ বছর পিছনে।

বর্তমানে রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হোম স্টে। কড়িবড়গার ছাদে প্রাচীন রাজবাড়ির অন্দরে রাত্রি কাটানোর রয়েছে সুবন্দোবস্ত। মাথাপিছু খরচ দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা। এই রাজবাড়ির সদস্য ফাল্গুনী নন্দন দাসমহাপাত্র এই হোমস্টে-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। ফোনে অগ্রিম বুকিং করে ঘুরে আসুন প্রাচীন জনপদ এই পঁচেট গড়ে।