Tag Archives: ratha yatra

পুরীর রথযাত্রা

শ্রীক্ষেত্র বলে পরিচিত ওড়িশার পুরীতে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। ব্রহ্ম পুরাণ, স্কন্দ পুরাণ, পদ্ম পুরাণ এবং কপিল সংহিতায় এই রথযাত্রার উল্লেখ আছে। আষাঢ় মাসে শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়াতে এই রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বলা হয় যে এই সময় জগ্ননাথদেব তাঁর মাসির বাড়ি যান। তাঁর বিশাল রথ মাসিমা মন্দির হয়ে গুণ্ডিচা মন্দির পৌঁছয়।

বর্ণনা

ওড়িশার পুরী শহরের বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দির থেকে বছরে একবার তাঁদের নিজ নিজ রথে চড়ে বেরোন জগন্নাথ দেব, বলভদ্র বা বলরাম এবং তাঁদের বোন সুভদ্রা দেবী। ওড়িশি ক্যালেন্ডার মেনে আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়াতে এই রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। তিন দেবতার সুসজ্জিত বিশাল রথের রশি টানতে কোটি কোটি ভক্তের সমাগম হয় পুরীতে। পুরীর মন্দির থেকে দুই মাইল উত্তরে গুণ্ডিচা মন্দিরের দিকে যাত্রা করে রথ। গুণ্ডিচা ছিলেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের রানী। জগন্নাথ দেবের রথের নাম হল নন্দীঘোষ। পথে জগন্নাথ দেবের রথ একবার দাঁড়ায় তাঁর মুসলমান ভক্ত সালাবেগার সমাধিস্থানে।

এর পর তিন ভাই বোনের রথ দাঁড়ায় মাসিমা মন্দিরে। সেখানে তাঁদের খেতে দেওয়া হয় পোড়া পিঠে। এটি আসলে এক ধরনের প্যানকেক। বলা হয় জগন্নাথ দেব এই পিঠে খেতে খুব ভালোবাসেন। সাত দিন এখানে থাকার পর রথ আবার মন্দিরে ফিরে আসে।

রথের বিবরণ

একটি বিশেষ গাছের কাঠ দিয়ে প্রতি বছর নতুন করে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার রথ তৈরি হয়। এই রথ বংশ পরম্পরায় যে ছুতাররা বানিয়ে আসছেন তাঁরাই এই গাছ নিয়ে আসেন। গাছের গুঁড়ি নিয়ম মেনে মহানদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় যা পুরীর কাছে সংগ্রহ করে তারপর নিয়ে আসা হয়। রথ তৈরির পর তা সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে মন্দিরের পূর্ব দ্বার বা সিংহদ্বারের কাছে। প্রত্যেক রথে থাকেন নয় জন করে পার্শ্ব দেবতা , একজন করে সারথি এবং চারটে করে ঘোড়া। জগন্নাথ দেবের রথের নাম নন্দীঘোষ, বলভদ্রের রথের নাম তালধ্বজ ও সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন।

চন্দন যাত্রা

বৈশাখ মাসের তৃতীয় দিনে অর্থাৎ অক্ষয় তৃতীয়াতে রথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পুরীর রাজার প্রাসাদের সামনে এবং পুরী মন্দিরের মূল অফিসের বিপরীতে এই কাজ চলে। বলা হয় এই সময় দেবতাদের গ্রীষ্মকালীন উৎসবও শুরু হয়, তাই একে চন্দন যাত্রাও বলা হয়। চন্দন যাত্রা তিন সপ্তাহ ধরে চলে। জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্নান যাত্রার মাধ্যমে শেষ হয় চন্দন যাত্রা।

সুনা বেশ

গুন্ডিচা মন্দির থেকে দেবতাদের রথগুলি মূল মন্দিরে ফিরে আসার পর, দেবতাদের সোনার অলঙ্কারে সজ্জিত করা হয় এবং রথে পূজা করা হয়। এই উদযাপন সুনা বেশা নামে পরিচিত। পুরীর প্রথম রাজা কপিলেন্দ্র দেব ১৪৬০ সালে যুদ্ধ থেকে বিজয়ী হয়ে ফিরে এসে তিনি জগন্নাথকে সোনা দান করেছিলেন। প্রায় ২০৮ কেজি ওজনের সোনার গয়না দিয়ে দেবতারা সজ্জিত হন।

আন্তর্জাতিক রথযাত্রা

শুধু পুরী নয়, ইস্কনের হরে কৃষ্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে ১৯৬৮ সাল থেকে ভারতের বাইরে ১০৮টিরও বেশি শহরে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

Ratha Yatra 2024: মাহেশের রথযাত্রা এখনও অনেক দেরি, অক্ষয় তৃতীয়াতে হয়ে গেল চন্দন যাত্রা, কী সেই সনাতন রীতি

হুগলি:  হুগলির মাহেশর জগন্নাথ মন্দিরে রথ যাত্রার শুভ আরম্ভ হয় অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে চন্দন যাত্রার মাধ্যমে। কথিত আছে এই দিনেই নাকি জগন্নাথ দেব রাজা ইন্দ্রদ্যুম্মকে স্বপ্ন দিয়েছিলেন তার সারা গায়ে চন্দনের প্রলেপ দেওয়ার জন্য। সেই থেকেই প্রতি বছর এই দিনে পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির এর মতন হুগলির মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরের জগন্নাথ বলরাম এবং সুভদ্রাকে কপালে চন্দনের পট্টি পড়ানো হয়।

কথিত ইতিহাস অনুযায়ী, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্মকে জগন্নাথ দেব স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন গরম থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তাকে চন্দন প্রলেপ দিতে বলা হয়। এর ঠিক ৪২ দিন বাদে রাজার কাছে আবার স্বপ্ন আসে যেখানে ঠাকুর বলেন চন্দনের জন্য তার মাথা ধরে গেছে তাই তাকে স্নান করাতে হবে।

আরও পড়ুন – Tarapith Mandir: তারাপীঠে তারা মা-র মন্দিরে বড়সড় রদবদল, একাধিক মন্দির এখন নতুন জায়গায়, ভক্তরা আকূল

ঠাকুরের আদেশ অনুযায়ী রাজা ১০৮ টি কলসির জল দিয়ে জগন্নাথ দেবকে স্নান করান। সেই থেকেই চন্দন যাত্রার ৪৫ দিন বাদে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা উৎসব পালন হয়। এই স্নান এর পরে ঠাকুরের নাকি খুব জ্বর আসে। তাই জন্য স্নান যাত্রার পরে ১২ দিনের জন্য ঠাকুরকে গর্ভগৃহে নিভৃত বাসে রাখা হয়। ১২ দিনের মধ্যে জগন্নাথ দেব সুস্থ হয়ে ওঠেন তারপর তাকে নিয়ে রথযাত্রা শুরু হয়।

মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন সকাল থেকেই মানুষজন ভিড় করেছিলেন চন্দন উৎসব দেখার জন্য কপালে চন্দনের প্রলেপ পড়ানোর জন্য এলাকার স্থানীয় মহিলারা আগের দিন রাত থেকেই চন্দন বাটতে শুরু করে দেয়। চন্দন বাটা হয়ে গেলে সেই চন্দনকে একটি বিশেষ কাপড়ের চুবিয়ে রাখা হয়। ও সেই কাপড়ের পট্টিটি চন্দন যাত্রা দিন জগন্নাথ দেবের কপালে লাগিয়ে দেওয়া হয়।

চন্দন যাত্রা অনুষ্ঠান শেষে মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরের সেবাইত পিয়াল অধিকারী বলেন, উৎসব আজ থেকে শুরু হল চন্দন যাত্রা উৎসব। আজকের পর থেকে টানা ৪২ দিন ধরে চলবে চন্দনযাত্রা উৎসব। বলা হয় এই দিন থেকেই রথযাত্রা আরম্ভ হয়। তিনি আরওবলেন অবশেষে চন্দন যাত্রার মধ্যে হয় মাহেশের রথের শুভ আরম্ভ হল। আজ থেকে ঠিক ৪৭ দিন বাদে মহেশের রথের চাকা গড়াবে।

আবার ভক্তবৃন্দদের ঢল নামবে মহাপ্রভু জগন্নাথ এর রথের টান দেওয়ার জন্য। আজ থেকে শুরু হয় পুরীতে জগন্নাথ দেবের রথ তৈরির কাজ,আর মাহেশে সূচনা হয় চন্দন যাত্রা উৎসবের। আজ থেকে আগামী ৪২ দিন ধরে চলবে জগন্নাথ দেবের মাথায় চন্দন লেপন। তারপর হবে স্নান যাত্রা উৎসব। বলা যায় চন্দন যাত্রা দিয়ে আজ থেকে মাহেশে রথযাত্রারও সূচনা হয়ে গেল।চন্দন যাত্রায় মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরে সকাল থেকে ভক্তদের ভীর।মন্দিরের গর্ভগৃহের দ্বার খোলার পর শুরু হয় চন্দন যাত্রা উৎসব।

মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরের সেবাইত জগন্নাথ মন্দির সেবা ট্রাস্টের সম্পাদক পিয়াল অধিকারী জানান,অক্ষয় তৃতীয় হল একটি অত্যন্ত শুভ দিন।বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের আবির্ভাব দিবস।অক্ষয় তৃতীয়াতেই জগন্নাথের চন্দন যাত্রা উৎসব হয়। ৬২৮ বছর ধরে দারু কাঠের জগন্নাথ মূর্তি একই রকম রয়েছে।কোনো ক্ষয় নেই।এটাই মাহেশ জগন্নাথের মাহাত্ম্য।

Rahi Halder