হাওড়া: আমরা সাধারণত জানি কচি লাউয়ের চাহিদা বেশি। বাজারে গিয়ে লাউয়ের পিছনের দিকে নখ বসিয়ে সেটা কচি কিনা তা যাচাই করার এক বহুল প্রচলিত পদ্ধতি চালু আছে। কিন্তু হাওড়ার এই এলাকায় লাউ পাকলে তবেই বিক্রি হয় অনেক বেশি! দামও পাওয়া যায় অনেক। ফলে এখানকার কৃষকরা সবজি বাজারে বিক্রির জন্য কাঁচা অবস্থায় লাউ তোলেন না, বরং তাকে সময় নিয়ে ভাল করে পাকানো হয়।
হাওড়ার উদয়নারায়নপুর থেকে মিনিট পাঁচেকের দূরত্বে পোষপুর গ্রাম। এই গ্রামের বেশ কিছু পরিবার বংশ-পরম্পরায় বড় আকৃতির লাউয়ের চাষ করে আসছে। এখান থেকে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকি ভিন রাজ্যের নানান শহরে পৌঁছে যায় এখানের লাউ। আসলে এই লাউ থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় বাদ্যযন্ত্র। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে এই বাদ্যযন্ত্র ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে।
আরও পড়ুন: ৭০ প্রজাতির লেবু গাছ! এই বাড়ির বাগানে এলে চমকে উঠবেন
উদয়নারায়নপুরের এই এলাকার কৃষকরা জমিতে বীজ বুনে লাউ ফলান। কয়েক মাস পর সেই লাউ পেকে সঠিকভাবে উপযুক্ত হয়ে উঠলে শুরু হয় আসল কাজ। প্রথমে লাউয়ের ভিতর থেকে শাঁস, দানা বের করে নেওয়া হয়। তারপর খোলা শুকিয়ে জলে পচিয়ে তার উপর কাটিং করে বাজারে বিক্রি করা হয়। হাওড়া ও হুগলি এই দুই জেলার বেশ কিছু মানুষ এই লাউয়ের সঙ্গে কাঠ যুক্ত করে বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেন।
কৃষকরা প্রথমে আশ্বিন মাসে জমিতে বীজ ছড়ায়। তারপর তা থেকে গাছ হয়। আর সেই গাছেই ফলে এই বড়ো সাইজের লাউ। লাউ পেকে ওঠা থেকে তার খোলাকে শুকনো করে বাদ্যযন্ত্রের উপযোগী করে তোলা, এই গোটা প্রক্রিয়া শেষ হতে প্রায় ৬-৭ মাস সময় লাগে। লাউয়ের এই খোলা দিয়ে তৈরি হয় তানপুরা। এইভাবে তৈরি তানপুরার বডি বিক্রি হয় ২৫০০-৩০০০ টাকায়। একটি পাকা লাউয়ের দাম হয় ৩০-৩০০ টাকা পর্যন্ত। পিস ধরে যেমন বিক্রি হয় তেমনই বিক্রি হয় পাইকারিতেও। পোষপুর গ্রামের প্রায় ৫০ টি পরিবার এই লাউ চাষের সঙ্গে যুক্ত।
রাকেশ মাইতি