নয়াদিল্লি: টাটা পরিবারের সদস্যদের সবাই চেনে, জামশেদজি টাটা, জেআরডি টাটা এবং রতন টাটার কথা প্রায়ই আলোচনা হয়। কিন্তু টাটা পরিবারের একজন সদস্যের কথা খুব কমই জানা যায়। তিনিই টাটা পরিবারের একমাত্র সদস্য যিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন। সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন শাপূরজি সাকলতওয়ালা।
কিন্তু কে ছিলেন শাপূরজি সাকলতওয়ালা? – ১৮৭৪ সালের ২৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন শাপূরজি সাকলতওয়ালা। তার বাবার নাম ছিল দোরাবজি এবং মায়ের নাম মেহজেরবাই। মেহজেরবাই ছিলেন টাটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জামশেদজি নুসরওয়াঞ্জি টাটার ছোট মেয়ে। বিবিসির এক প্রতিবেদনের মতে, শাপূরজি যখন ছোট ছিলেন, তখন তার মা-বাবার বিচ্ছেদ ঘটে। এর পর ১৪ বছর বয়সে তিনি মায়ের সঙ্গে মুম্বইয়ের এক্সপ্লেনেড হাউসে (টাটা পরিবারের বাড়ি) চলে আসেন। সেখানে তার মামা এবং অন্যান্য আত্মীয়রা থাকতেন। শাপূরজি সাকলতওয়ালাকে মামাই বড় করেছিলেন। তিনি জামশেদজি নামে পরিচিত ছিলেন।
আরও পড়ুন : হরিণের নাভি থেকেই তৈরি হয় মহামূল্যবান পারফিউম ! প্রতি গ্রামের দাম শুনলে চমকে উঠবেন
শাপূরজি সাকলতওয়ালার প্রাথমিক শিক্ষা মুম্বাইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্সে হয়। ১৮৯০-এর দশকে যখন মুম্বইয়ে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে, তখন সাকলতওয়ালা এই পরিস্থিতিকে কাছ থেকে দেখেছিলেন। তিনি দরিদ্র এবং শ্রমিকদের মরতে দেখে দুঃখ পেয়েছিলেন। সেই সময় তিনি কলেজের ছাত্র ছিলেন। তিনি দরিদ্রদের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন এবং রুশ বিজ্ঞানী ভ্যালদেমার হাফকিনের সঙ্গে মিলে প্লেগের ভ্যাকসিন তৈরি করেন। পরে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওই ভ্যাকসিন বিতরণ করতে থাকেন।
ম্যালেরিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে – ১৯০৫ সালে শাপূরজি সাকলতওয়ালার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং তিনি ম্যালেরিয়ার শিকার হন। পরিবারের কথায় তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। সেখানেই ১৯০৭ সালে তিনি স্যালি মার্শের সঙ্গে বিয়ে করেন। মার্শ ছিলেন একজন ওয়েট্রেস এবং সাধারণ পরিবারের মানুষ। তাদের বিয়ের পর, শাপূরজি ব্রিটেনের শ্রমজীবী মানুষের জীবন সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে পারেন এবং সেখানে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
আরও পড়ুন : বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর নারীদের বাস এই দেশে? বলুন তো কোন দেশ? নাম শুনলে অবাক হবেন আপনি
রাজনীতিতে প্রবেশ – শাপূরজি সাকলতওয়ালা ১৯০৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে লেবার পার্টিতে যোগ দেন। তবে এখানে তার খুব ভালো লাগছিল না। প্রায় ১২ বছর পর, তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯২০ সালে শাপূরজি সাকলতওয়ালা ব্রিটেনের আলোচিত নেতাদের মধ্যে এক জন হয়ে ওঠেন। ১৯২২ সালে তাঁকে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত করা হয় এবং তিনি প্রায় ৭ বছর এই পদে ছিলেন।
গান্ধীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব – শাপূরজি সাকলতওয়ালা ব্রিটেনে থেকে ভারতীয় স্বাধীনতার পক্ষে আওয়াজ তুলতে থাকেন। সেই সময় স্বাধীনতা আন্দোলন শিখরে ছিল। তিনি সাংসদ হিসেবে নিয়মিত ভারত আসতেন এবং এখানে শ্রমজীবী মানুষদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করতেন। এই সময় তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিকে একত্রিত করার জন্য প্রচার চালাতেন। শাপূরজি সাকলতওয়ালার মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সম্পর্ক খুব ভাল ছিল না। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিরোধ ছিল। যেমন, সাকলতওয়ালা পছন্দ করতেন না যে গান্ধী নিজেকে “মহাত্মা” বলার অনুমতি কীভাবে নিতে পারেন। এছাড়াও, গান্ধীর অহিংসার নীতির ওপর তার ভিন্নমত ছিল।
লন্ডনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ – ১৯২৭ সালের মধ্যে ব্রিটিশ সরকার শাপূরজি সাকলতওয়ালার প্রতি বিরক্ত হয়ে ওঠে। এরপর তাঁর ভারত আসা এবং এখানকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সাকলতওয়ালা ১৯২৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন, কিন্তু হার মানতে হয়। তার সাংসদ পদও চলে যায়। তবে তিনি ভারতীয় স্বাধীনতার পক্ষে আওয়াজ তুলতে থাকেন। ১৬ জানুয়ারি ১৯৩৬ সালে সাকলতওয়ালার লন্ডনে মৃত্যু ঘটে, তার বয়স তখন মাত্র ৬১ বছর। মৃত্যুর পর তাকে লন্ডনেই কবর দেওয়া হয়৷