টিকিয়াপাড়া: বর্ষাকালে অফিসে আসার সময় আপনার কি নিয়মিত দেরি হয়? দেরির কারণ লাইনে জল জমা৷ কিন্তু এই জলাবদ্ধতার কারণে ভারতীয় রেলের উপর ক্ষোভও তৈরি হচ্ছে৷ কিন্তু বাস্তবে চিত্রটি অন্যরকম। অন্তত তেমনই দাবি রেল কতৃপক্ষের৷
রেলের কথা অনুযায়ী, হাওড়ার রেলপথগুলি এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের আগে নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু ঐ এলাকার অধিবাসীরা অনেক পরে বসতি গড়েছেন। বর্তমানে অতি এলাকাটা অত্যন্ত ঘিঞ্জি হয়ে যাওয়ায়, শহরের জল ঢুকে পড়েছে রেললাইন ও সংলগ্ন এলাকায়। রেলওয়ে জমে থাকা জল পাম্প করে বের করার ব্যবস্থা করেছে৷ কিন্তু সংলগ্ন বসতি অঞ্চলে নিকাশী সমস্যার কারণে এই প্রচেষ্টা সাফল হচ্ছে না ।
বর্তমানে কারশেড এলাকায় মোট ১৯ টি ট্র্যাক রয়েছে৷ যার মধ্যে ৮টি লাইন খোলা অবস্থায় এবং ১১টি লাইন শেডের নীচে রয়েছে৷ টিকিয়াপাড়া কোচিং কমপ্লেক্স এবং এর যাবতীয় প্রশাসনিক ও রক্ষণাবেক্ষণ ভবনসহ প্রায় ২৪৯ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে কারশেডটি। একইভাবে ঝিল সাইডিংয়ে ১৯ টি ট্র্যাক রয়েছে৷
কারশেড ও ঝিল সাইডিংয়ে বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থা
টিকিয়াপাড়া কোচিং কমপ্লেক্সের ড্রেনগুলো একদিকে দশরথ ঘোষ লেনের পৌরসভার ড্রেনের সঙ্গে এবং অপর পাশে বাইপাস রোড ড্রেনের সঙ্গে ২ নং রেলসেতু দিয়ে সংযুক্ত৷ কারশেডে বিদ্যমান ২ টি কূপ থেকে নিকাশি জল সংগ্রহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল৷ এর জন্য প্রতি ঘন্টায় ১৬৩ ঘনমিটার পাম্পিং ক্ষমতাসম্পন্ন ২টো কম ক্ষমতার পাম্প বসানো হয়েছিল৷ এর দ্বারাই জল বাইরে পাম্প করা হয়। সমস্যা হল সেই জল হাওড়া প্রান্তে জমা হওয়ার পর, সেই জলের বড় পরিমাণ আবার কূপেই ফিরে আসে এর ফলেই তেমন ভাল ফল পাওয়া যায় না। বর্তমানে কূপগুলি পলিমুক্ত করে প্রতি ঘন্টায় ৯০৩ ঘনমিটার পাম্পিং ক্ষমতার উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প বসানো হয়েছে৷ এগুলোর মাধ্যমে এখন ঝিল সাইডিংয়ে অবস্থিত নবনির্মিত ০৩ নং কূপে জল পাম্প করা হচ্ছে । এই কূপের জল এরপরে নবনির্মিত ০৪ নং কূপ এবং তারপরে ০৫ নং কূপ হয়ে শেষ পর্যন্ত গঙ্গা নদীতে গিয়ে পরে । উল্লেখ্য, বৃষ্টির জল বের করার জন্য জন্য সম্প্রতি প্রতিটি কূপে ঘন্টায় ৯০৩ ঘনমিটার ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প বসানো হয়েছে।
একইভাবে ঝিল সাইডিংয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থাও খানিক এমনই৷ পাম্পের মাধ্যমে বৃষ্টির জল চাঁদমারি ব্রিজের দিকে নিষ্কাশন করা হয় এবং ডাবসন রোড দিয়ে এই জল গঙ্গায় প্রবাহিত হয়।
সংলগ্ন বসতি এলাকা প্লাবিত হওয়ায় জলাবদ্ধতার সমস্যা দেখা দিয়েছে:
সমস্যা হল, বৃষ্টির সময় রেললাইনের উভয় পাশের ড্রেন ডুবে যায় এবং জল বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়ে টিকিয়াপাড়া কোচিং কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে।
এছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের কারশেড এলাকার জল পাম্পের মাধ্যমে এই ড্রেনে প্রবাহিত করা হয় কিন্তু বাইরের ড্রেন প্লাবিত হওয়ার কারণে এই জল আবার টিকিয়াপাড়া কোচিং কমপ্লেক্সেও প্রবেশ করে।
অবিরাম বৃষ্টির সময় হাওড়া প্রান্ত থেকে টিকিয়াপাড়ার পিট-১ এ ট্র্যাক দিয়ে ভারীমাত্রায় জল ভিতরের দিকে প্রবাহিত হয়।
কারশেড এলাকায় দেখা গিয়েছে যে, নিকটবর্তী ফকিরবাগান এলাকা, নন্দীবাগান এলাকা এবং কাপুর গলি এলাকা থেকে বৃষ্টির জল হাওড়া প্রান্ত দিয়ে ঢুকে কারশেডের প্রান্ত দিয়ে ঢুকে কারশেডকে প্লাবিত করে দেয়।
ঝিল সাইডিং এলাকার ড্রেনটি গুলমোহর এলাকার ড্রেনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকলেও গুলমোহরে জলাবদ্ধতার কারণে ঝিল সাইডিংয়ের নিকাশি জলও উপচে পড়ছে।
নবনির্মিত ড্রেনেজ ওয়াটার সিস্টেম চালু থাকলেও ভারী বর্ষণ ও পৌরসভার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়ে৷ এর ফলে আমাদের কারশেড ও ঝিল সাইডিং অঞ্চলও জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
তবে বর্তমানে পরিস্থিতি খানিক উন্নতি হয়েছে৷ এই জায়গাগুলো জল জমলেও তা বেশিক্ষণ থাকছে না৷ তবে সমস্যা সম্পূর্ণ মেটেনি৷ আরও কিছু কাজ করা দরকার৷ পৌরসভার নিকাশী ব্যবস্থার খুব একটা ভাল না থাকার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা অনুসন্ধান করা খুব জরুরি।
ঝিল সাইডিং, হাওড়া কারশেড ও টিকিয়াপাড়া কোচিং কমপ্লেক্সের জল জমে থাকার এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে শহরের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহয়োগিতাও প্রয়োজন৷ তাঁরা সংলগ্ন এলাকায় সুপরিকল্পিত ও কার্যকর নিকাশি ব্যবস্থা বজায় রেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে বলে আশা করছে রেল কতৃপক্ষ।