বীরভূম: কলকাতার বাসিন্দাদের পাশাপাশি বিদেশের বাসিন্দাদের বোলপুর খুব কাছের একটি প্রিয় স্থান। বোলপুর শান্তিনিকেতন যায়নি এমন বাঙালি খুব কমই আছেন। সাধারণ পর্যটক বোলপুর যাই বারেবারে, কারণে অকারণে। গ্রীষ্মে কৃষ্ণচূড়া দেখতে, বর্ষায় সবুজ রঙে রাঙায়িত হতে, শরতে যাই কাশফুল ছুঁতে, হেমন্তে যাই ঝরা পাতার শব্ধ শুনতে, শীতে যাই শীতলতার স্পর্শ পেতে, বসন্তে যাই পলাশ, শিমুল আর অশোকের রূপে প্রমত্ত হতে। বোলপুরের মধ্যে অবস্থিত সোনাঝুরির হাট এক অন্যতম দেখার জায়গা।
তবে বোলপুর শান্তিনিকেতন তো অনেকবার গেছেন কোনদিন ঘুরে দেখেছেন ‘ঘণ্টাতলা’। এই ঘন্টাতলা বোলপুর শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী জায়গা গুলির মধ্যে অন্যতম একটি। বিশ্বভারতীর ঘণ্টাতলা ছাত্রছাত্রী মহলে খুবই জনপ্রিয়।বিশেষত পাঠভবনের পড়ুয়াদের কাছে। রবীন্দ্রনাথের বৌদ্ধ ধর্ম প্রীতির নিদর্শন হিসাবে পাঠভবনের কাছেই সারনাথের বৌদ্ধ স্থাপত্যের অনুকরণে ঐতিহ্যশালী ঘণ্টাতলা তৈরি হয়। স্থাপত্যটি তৈরির পরিকল্পনায় ছিলেন শিল্পী সুরেন কর। ১৯১৯সালে প্রীতিদেবীর (যিনি পরে লেডি রানু মুখোপাধ্যায় হিসেবে পরিচিত ছিলেন) ছাত্রীবৃত্তির ৩০টাকা এই স্থাপত্য তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল বলে জগদানন্দ রায় সম্পাদিত শান্তিনিকেতন পত্রিকার প্রথম বর্ষের প্রথম সংখ্যা থেকে জানা যায়।
সম্প্রতি, ইউনেস্কো বিশ্বভারতীকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে তালিকাভুক্ত করেছে। এই তালিকাভুক্ত হওয়ার পরেই নতুন রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে ঘণ্টাতলা। প্রসঙ্গত ২০২০ সালের অগাস্টে এক ভূকম্পে ঐতিহ্যবাহী ঘণ্টাতলার উপর একটি শতাব্দী প্রাচীন বটগাছ উপড়ে পড়ে। ফলে, স্থাপত্যটি গুড়িয়ে যায়। এরপর বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসের চারদিকে সীমানা পাঁচিল, ফটক তৈরি হলেও ভেঙে পড়া স্থাপত্যটি সংস্কার বা পুনর্নির্মাণে কর্তৃপক্ষ কোনও আগ্রহ দেখায়নি বলে অভিযোগ।
এইজন্য প্রবল সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় রবি ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীকে।অবশেষে প্রায় চোদ্দমাস পর ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের সহায়তায় পুরানো স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ঘণ্টাতলা পুনর্নির্মাণ করা হয়। শালবীথির মাঝামাঝি স্থানে গৌরপ্রাঙ্গণে বটগাছের নীচে ‘ঘন্টাতলা’।প্রাচীন বৌদ্ধস্তুপের বা সাঁচিস্তুপের আদলে এটি তৈরি। এই ঘন্টাধ্বনি অনুসারে ক্লাস হয়।তাই বোলপুর গেলে অবশ্যই ঘুরে আসুন এই জায়গা থেকে।
সৌভিক রায়