বারাণসীতে গঙ্গার এ কী হাল…!

ভাঙল বহু বছরের রেকর্ড; বারাণসীতে গঙ্গার এ কী হাল…! প্রমাদ গুনছেন বিজ্ঞানীরা

Reporter: Ravi Pandey

বারাণসী: চলতি বছর গরমের দাপট তীব্র আকার ধারণ করেছে। যার জেরে বারাণসীতে গঙ্গার হাল খুবই শোচনীয়। গত বছর জুনের তুলনায় চলতি বছর জুনে গঙ্গা আরও এক ধাপ অর্থাৎ প্রায় ১৫ ফুট নীচে নেমে গিয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, মাঝ গঙ্গার পাশাপাশি গঙ্গার ধারগুলিও যেন বালুকাময় হয়ে উঠছে। এমনকী, গঙ্গার বাঁধানো ঘাটগুলিতেও তৈরি হয়েছে বালিয়াড়ি। এখানেই শেষ নয়, গঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে আবার একসঙ্গে জমছে বালি এবং পলি। যে দৃশ্য প্রথম বারের জন্য দেখা যাচ্ছে। আর এহেন পরিস্থিতি দেখে প্রমাদ গুনছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, পরিস্থিতি খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এটা বিশ্বাস করতেও অসুবিধা হচ্ছে। তবে এটা অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন, নাহলে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন– বিশ্বের সেরা কুড়ির তালিকায় উড়ান ভিস্তারার, পিছিয়ে নেই এয়ার ইন্ডিয়াও; দেখে নিন বিশ্বের সেরা এয়ারলাইন্সের তালিকা

বারাণসীতে গঙ্গার প্রায় চল্লিশটিরও বেশি ঘাটে এহেন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। সিন্ধিয়া ঘাট, সক্কা ঘাট, ললিতা ঘাট থেকে শুরু করে দশাশ্বমেধ ঘাট এবং পাণ্ডেয় ঘাট থেকে শিবালা ঘাট পর্যন্ত বালি এবং পলি জমে গিয়েছে। অস্সি ঘাট তো ইতিমধ্যেই প্রায় ঢেকে গিয়েছে বালি এবং কাদায়। তবে সর্বাধিক বালি এবং কাদা জমেছে দশাশ্বমেধ ঘাটে। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, এখানে আসা পর্যটক এবং ভক্তদের ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে বালি এবং কাদার মধ্যে দাঁড়িয়েই ছবি তুলতে হচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়, পর্যটক এবং ভক্তরা বালি ডিঙিয়েই নৌকায় উঠছেন। দশাশ্বমেধ ঘাটের সামনে সবুজ গাছপালার কারণে প্রায় দেড় কিলোমিটার বিস্তৃত বালিয়াড়ি তৈরি হয়েছে। আবার গাই ঘাট এবং রাজঘাটের মধ্যবর্তী স্থানে ২ কিলোমিটার প্রশস্ত বালির জমেছে। ঘাটের ঠিক সামনে গঙ্গার একেবারে মাঝ বরাবর দীর্ঘ বালিয়াড়িও তৈরি হয়েছে। আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে জলও। এই দৃশ্য রীতিমতো ভয় ধরাচ্ছে সকলের মনে। আসলে পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, সেটা খুব একটা যে ভাল নয়, তা আলাদা করে বলে দিতে হবে না।

আরও পড়ুন– বিমানবন্দর তৈরির প্রস্তুতি ছিল তুঙ্গে; মাটি খুঁড়তেই যা বেরিয়ে এল…! দেখে চমকে গিয়েছেন খননকারীরা

গঙ্গা বিজ্ঞানীদের মতে, গঙ্গার নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ বন্ধ হওয়ার সবথেকে বড় কারণ হল বাঁধগুলির জন্য গঙ্গার জল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আসলে গঙ্গা পরিশোধনের জন্য সরকারের সমস্ত প্রয়াস ব্যর্থ হচ্ছে। বিএইচইউ-এর গঙ্গা রিসার্চ সেন্টারের অধ্যাপক ড. বি ডি ত্রিপাঠী বলেন যে, এসটিপি প্ল্যান্ট তৈরি করা হয়েছে। নিকাশি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও তৈরি হয়েছে। সব কিছুতে কাজও হচ্ছে। কিন্তু গঙ্গার জলস্তর নেমে যাওয়ার কারণে দূষণও বেড়েই চলেছে। গঙ্গায় জলের অভাবে নালার নিকাশ যা গঙ্গায় গিয়ে মেশে, তা দূষণ বাড়াচ্ছে।

বিগত ১০ বছরে গঙ্গা পরিশোধনের একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। কিন্তু এই সমস্ত প্রয়াসে জল ঢেলে দিচ্ছে গঙ্গার রেকর্ড জলের ঘাটতি। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গার নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহের উপর নজর না দেওয়া হয়, তাহলে সমস্ত পরিকল্পনাই ব্যর্থ হবে। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গা পরিশোধনের পাশাপাশি গঙ্গার নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহের উপরেও নজর দেওয়া আবশ্যক।