কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ি 

Bengal Rajbari Tourism: রাজবাড়ির আপনিই রাজা! ইতিহাস ছুঁয়ে থাকা রাজকীয় কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ি ঘুরে আসুন, রইল রুট ম্যাপ

মুর্শিদাবাদ: মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম রাজবাড়ির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ি। একদিন এলেই কাটিয়ে যেতে পারেন এই রাজবাড়িতে। ঘুরে দেখতে পাবেন ইতিহাসের ছোঁয়া।

ইতিহাসের শহর মুর্শিদাবাদ। একসময় সমস্ত বাংলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল মুর্শিদাবাদের নবাবি মসনদ থেকে। শুধু মাত্র নবাবরাই নন, বর্ধিষ্ণু এই অঞ্চলে ছিল বহু জমিদার বংশের প্রভাব ও প্রতিপত্তি। অনতিদূরের কাশিমবাজার রাজবাড়ি সেই ইতিহাসেরই মূর্ত প্রতীক। ইতিহাসের ঘাত প্রতিঘাতে একসময় এই রাজবাড়ি পরিত্যক্ত হয়ে উঠলেও, বিগত কয়েক বছরে নতুন রঙে সেজে উঠে বর্তমানে তা হয়ে উঠেছে হেরিটেজ গেস্ট হাউস।

একদা দেশী এবং বিদেশি বণিকদের ব্যবসার কেন্দ্রস্থল ছিল মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার। আনুমানিক ১৭০০ সালে বাংলাদেশের ফিরোজপূর গ্রাম থেকে রেশম ব্যবসার উদ্দেশ্যে মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজারে এসে বসতি স্থাপন করেন আদি রাজা অযোধ্যা রাম রায়। তবে ১৭০৪ সালে কাশিমবাজার রাজবাড়ি স্থাপন করেছিলেন তাঁর পুত্র দীনবন্ধু রায়। অযোধ্যা রাম রায় ও তাঁর পুত্র দীনবন্ধু রায়ের সময় কালে এই বংশের তেমন খ্যাতি ছিল না। পরবর্তীকালে দীনবন্ধু রায়ের দুই পুত্র জগবন্ধু রায় ও ব্রজমোহন রায়ের সময়ে এই বংশের খ্যাতি ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেয়েছিল।

ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানির মেদিনীপুরে কালেক্টর পদে চাকরি করতেন জগবন্ধু রায় এবং সেই সূত্র ধরেই তিনি নিলামে তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের রংপুর ও রসাইল পরগণার জমিদারি ক্রয় করেন। সেই সময় থেকেই শুরু হয়েছিল এই বংশের জমিদারি প্রথা। বর্তমানে জমিদারি প্রথা না থাকলেও রয়েছে কাশিমবাজার রাজবাড়ি যা এখন কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ি নামে পরিচিত এবং এই রাজবাড়ির দরজা এখন জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ি ভ্রমণ করতে ও রাজকীয় আতিথেয়তা উপভোগ করতে দেশ বিদেশের বহু পর্যটক উদগ্রীব হয়ে থাকেন। কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির অন্দরের কিছু অংশ এখন মিউজিয়ামে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে প্রাচীন শিল্পকলার নিদর্শন সহ তৎকালীন রাজা রানীদের ব্যবহৃত সামগ্রী, বন্দুক, ঝাড়বাতি, পালকী ও আসবাবপত্র।

রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্মরা কলকাতায় বসবাস করেন, তবে দুর্গাপুজোর সময় বছরে একবার তারা কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়িতে আসেন।বর্তমান রাজা প্রশান্ত রায় ও রানিমা সুপ্রিয়া রায়ের যৌথ প্রচেষ্টায় আজও অক্ষুন্ন রয়েছে রাজবাড়ির ঐতিহ্য। আছে বেশ কিছু মন্দির। দৈনিক চলে নিত্য সেবা। পর্যটকরা এলে তাদের জন্য থাকে খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা অনলাইনের মাধ্যমে বুকিং করেই। এমনকি কেও দর্শন করতে চাইলেও স্বল্প মূল্যের টিকিট কেটে ঘুরে দেখতে পারেন মিউজিয়াম।

কীভাবে যাবেন এই রাজবাড়িতে। কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ি যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে লালগোলা গামী ট্রেনে করে কাশিমবাজার স্টেশনে নেমে রাজবাড়ি পর্যন্ত টোটো বা রিক্সোয় করে যেতে হবে। এছাড়াও সড়কপথে এলে বহরমপুরে এসে কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ি পৌঁছে যাওয়া যাবে অনায়াসেই।

কৌশিক অধিকারী