বীরভূম: ঘরের ‘লক্ষ্মী’ সকালবেলাতেই ঘুম থেকে উঠে তাঁর শেষ সম্বল দোকানে এসে বসেছেন। মনের মধ্যে একরাশ চিন্তা। চোখের কোণে ভোর থেকেই চিক চিক করছে জল। আর তার নেপথ্যে কারণ একটাই। মঙ্গলবার বিকেলে রেল পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জানানো হয়েছে রেলের জায়গার উপর অবৈধ নির্মাণ দোকান উচ্ছেদ করতে হবে।সূর্যের আলো ফুটতেই গৃহবধূ লক্ষ্মী শর্মা দোকানে এসে ভাবছেন এই বুঝি তার দোকানের উপর চলবে বুলডোজার! রেলের নির্দেশ মতো রেল কর্তৃপক্ষ আরপিএফকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার সকাল থেকেই অবৈধ নির্মাণ উচ্ছেদের কাজে বেরিয়ে পড়ে।
সকালে বুলডোজার এসে পৌঁছতেই কার্যত বাকবিতণ্ডা শুরু হয় ফুটপাত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রেলের আরপিএফ কর্মীদের। তবে সব কিছুর পরেও একে একে সমস্ত অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে ভাঙতে এগিয়ে চলে বুলডোজার। ফুটপাত ব্যবসায়ীরা তাদের নির্মাণ ভাঙতে দেবেন না বলে দীর্ঘক্ষণ রাস্তার উপর বসেই অবরোধ চালাতে থাকেন। তবে সব কিছুর পরেও রেল কর্তৃপক্ষ তাদের কাজে অনড় থাকে।
আর এরপরে বুলডোজার এসে পৌঁছয় রামপুরহাট শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা লক্ষ্মী শর্মার দোকানের কাছে। প্রসঙ্গত বছর পাঁচ আগে লক্ষ্মীর স্বামী রবীন্দ্রনাথ শর্মা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হন। গোটা শরীর কার্যত অচল হয়ে পড়ে তাঁর। মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়ে গৃহবধুর।একদিকে সংসারের খরচ,অন্য দিকে স্বামীর চিকিৎসার খরচ। আবার তার পাশাপাশি একমাত্র মেয়ের পড়াশোনার খরচ। কীভাবে সবকিছু চালাবেন ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না। আর এরপরেই ফুটপাতের উপর স্বামীর ছোট্ট দোকানে সেলাইয়ের কাজ এবং পুজোর বেশ কিছু সরঞ্জাম বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছিলেন গৃহবধূ।
আরও পড়ুন: বড় বদল বাজারদরে! আলু, পেঁয়াজ, শাকসব্জির মূল্যবৃদ্ধিতে হাহাকার, তার মাঝেই বিরাট খবর
আরও পড়ুন: স্কুলে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ! রান্নার সময়ে মারাত্মক ঘটনা, শিক্ষিকা-পড়ুয়াদের কাতর আর্তনাদ
তবে রেল কর্তৃপক্ষের এই উচ্ছেদের ফলে কার্যত কীভাবে সংসার চালাবেন সেই ভেবে চোখের কোণ থেকে ঝরে পড়ছিল জল। আর এরই মাঝে হঠাৎ বুলডোজার এসে দাঁড়ায় লক্ষ্মীর দোকানের পাশে। চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন লক্ষ্মী আর হুইল চেয়ারে বসে অসহায় প্যারালাইসিস স্বামী। হঠাৎ ওপার থেকে খবর এল স্বামীর প্যারালাইসিস হওয়ার কারণে তাঁর দোকান ভাঙ্গা হবেনা। এই খবর শুনেই মুখে এক রাশ হাসি ফুটে ওঠে লক্ষ্মীর।তবে নিমিষের মধ্যে আবার ঘটল যেন ছন্দপতন।রেল পুলিশ এসে খবর দেন আপাতত মানবিকতার খাতিরে তার দোকান ভাঙা হল না। তবে আগামী চার দিনের মধ্যে তার দোকান তুলে ফেলতে হবে।
আর এই খবর পেয়ে কার্যত দিশাহারা হয়ে পড়েন লক্ষ্মী। তিনি জানান শেষ সম্বল বলতে শুধুমাত্র দোকানটাই ছিল যদি সেটাও তুলে ফেলতে হয় তাহলে সংসার চালানোর জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
সৌভিক রায়