রবিন ভোটার পরেশ চন্দ্র বেতাল

105 Years Old Voter: দেশের ১ম লোকসভা নির্বাচনের ভোটার! কিন্তু এবার ভোট দিতে চান না ১০৫ বছরের বৃদ্ধ, অভিমানের কারণ শুনে চোখে জল আসবে

হলদিয়া: যে কোনও নির্বাচনে নিয়ম করে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন তিনি। কিন্তু এবার লোকসভা ভোটের আগে অভিমান জেলার সবচেয়ে বয়স্ক ভোটারের। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দুটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ ২৫ মে। তমলুক লোকসভার অন্তর্গত সুতাহাটা ব্লকের পরেশ চন্দ্র বেতাল। বয়স ১০৫ বছর ছুঁই ছুঁই। প্রতিবার যে কোনও নির্বাচনে নিজের বুথ কেন্দ্রে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন। কিন্তু এবার ভোট দিতে উৎসাহিত নন তিনি। এবার লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে অভিমান করেছেন জেলার এই প্রবীণ ভোটার। আর এই অভিমানের কারণ শুনলে অবাক হবেন আপনিও!

স্বাধীনতার পর যতগুলি নির্বাচন হয়েছে, তাঁর অংশগ্রহণ নজির গড়েছে। এমন মানুষ নির্বাচন কমিশনের ভোটদান নিয়ে মডেল হতে পারেন। শতায়ু পরেশচন্দ্র বেতাল হেঁটেই যান ভোট কেন্দ্রে। গত বছর পঞ্চায়েত ভোট দিয়েছেন। ভোটকেন্দ্রে নিজেই লাঠি ঠুকে ঠুকে বুথ কেন্দ্রে পৌঁছে গিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে দিয়েছেন ভোট। কিন্তু তিনি এবার ভোট দেওয়ার বিষয়ে অভিমান করেছেন।

কোনওরকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার কারণে অভিমান হয়েছে তাঁর। পরেশ চন্দ্র বেতালের অভিযোগ, তিনি পান না বার্ধক্য ভাতা, এমনকি চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে তাঁর রেশন।

আরও পড়ুন: ‘হীরক রাজা’ হলেন রুদ্রনীল, আসল লক্ষ্য কিন্তু ‘হীরক রানি’! কে সে? তোলপাড় ফেলে দিলেন অভিনেতা

গরমের মধ্যেও বাড়ির বাইরে বসে শুকনো নারকেল পাতা ছাড়াচ্ছেন। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে জল। শরীর খুব ভাল নেই। কিন্ত বিশ্রাম নিতে চান না তিনি। বরং কাজের মধ্যেই আরাম পান ওই শতায়ু বৃদ্ধ। হলদিয়ার কিশমত শিবরামনগর গ্রামের বাসিন্দা ১০৫ বছরের পরেশচন্দ্র বেতাল। বৃদ্ধের দাবি, রেশন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, মৃত্যুকালে পৌঁছে গেলেও বার্ধক্য ভাতা পান না। তাই আর ভোট দেওয়ার ইচ্ছে নেই। এতদিন ভোট দিয়ে এসেছি অথচ সেভাবে সরকারি সুযোগ সুবিধা কিছুই পাননি। কাকে ভোট দেবেন তিনি খুঁজে পাচ্ছে না? কারণ কেউ তো আর তাঁর কথা রাখল না।

বৃদ্ধের স্মৃতিচারণে উঠে আসে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কথা। উঠে আসে দেশের প্রথম নির্বাচনের কথা। আদ্যোপান্ত কংগ্রেসি ভাবধারায় বিশ্বাসী পরেশ চন্দ্র ১৯৫২ সালের প্রথম নির্বাচনে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সতীশ চন্দ্র সামন্তকে ভোট দিয়েছিলেন বলে জানান।

জানা যায়, বৃদ্ধ রেশন পেতেন। কিন্ত বর্তমানে রেশনের দোকানে রেশন তুলতে হলে হাতের আঙুলের ছাপ চাই। বয়সের জন্য হাতের সব আঙুল বেঁকে গিয়েছে এবং হাতের রেখাও অস্পষ্ট। তাই হাতের ছাপ মেলে না বলেই রেশন চূড়ান্ত অনিশ্চয়তায়। একই কারণে ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নতুন করে না খুলতে পারায় বার্ধক্য ভাতাও মেলেনি। হলদিয়ার শতায়ু বৃদ্ধ ভোটার চাইছেন কখনও তাঁর কেন্দ্রের প্রার্থীদের সামনে পেলে জানাবেন তিনি কতদিন আর বাঁচবেন, অন্তত বার্ধক্য ভাতাটা তাঁকে যেন দেওয়া হয়। এ বিষয়ে হলদিয়া ব্লকের বিডিও জানান, ওই বৃদ্ধের রেশন ব্যবস্থা যাতে দ্রুতই চালু হয় সেই ব্যবস্থা তারা করছে। চলতি মে মাস থেকেই রেশন ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে। বৃদ্ধ পরেশ চন্দ্র বেতালের জন্য বার্ধক্য ভাতা চালু করতে ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলবেন।’

শতায়ু এই ভোটারের স্মৃতিতে উঠে আসে স্বাধীনতা সংগ্রামের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের নানা কাহিনি। উঠে আসে গান্ধিজির প্রসঙ্গ। স্মৃতিচারণে বৃদ্ধ জানার গান্ধিজি যখন মহিষাদলে এসেছিলেন, তাকে দেখতে তিনিও গিয়েছিলেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় সুতাহাটা থানা অভিযানে ও অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। দেশের প্রথম লোকসভা নির্বাচনের পর পর যত নির্বাচন হয়েছে তিনি কংগ্রেস ভাবধারায় বিশ্বাসী হয়ে ভোট দিয়ে এসেছেন। তবে এবার ভোট দিতে অভিমান করেছেন পরেশ চন্দ্র বেতাল।

সৈকত শী