দক্ষিণ ২৪ পরগনা: দোলে হয়ত সকলেই রঙ খেলেছেন। কিন্তু আপনার চিরাচরিত রং খেলার দৃশ্যের বাইরে গিয়ে দেখুন এই ভিডিও। সুন্দরবনের আদিম জনজাতির মানুষ কেমন করে বসন্ত উৎসবে মাতলেন তা ধরা রইল।
আরও পড়ুন: শ্বশুরবাড়িতে রং খেলতে যাওয়াই কাল হল! বেঘোরে প্রাণ গেল নব দম্পতির
আদিবাসীদের মধ্যে কেউ বলেন ’বাহা’, আবার কেউ বলেন ‘সারহুল’ কেউ বা ‘ফাগুয়া’ কেউ বা ’খাদ্দি‘ আবার কেউ বা ‘শালুই পুজো‘। তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন আসলে তা বসন্ত উৎসব। তার বসন্ত উৎসব মানেই রঙের উদযাপন। তা শুধু রং খেলা দিয়ে নয়, মনে-পরিবেশে সর্বত্র রঙিন ছোঁয়া।
সাঁওতাল, ওরাঁও, মুন্ডা, কোল, কিষাণ, হো, বিরজিয়া, খেড়িয়া সহ প্রায় সমস্ত জনজাতির মানুষের কাছেই বাহা এক পবিত্র উৎসব। পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নুতনকে বরণ করাটাই প্রকৃতির নিয়ম। সেই অর্থে যখন মুকলিত বৃন্তের আগায় সহস্র শাখায় হেসে ওঠে, কুসুম সহ প্রায় সমস্ত গাছে কচিকচি লালপাতা, পলাশ, শিমুলের লালিমা, মহুয়া গাছে মহুয়ার ফুল আর আকাশে ফাগুন পূর্ণিমার চাঁদ এই মাহেন্দ্রযোগে অরণ্য দুলাল অদিবাসীরা মেতে ওঠেন এই বাহা উৎসবে।
আদিবাসীরা সাধারণত গ্রামে তিনদিন ধরে এই উৎসব পালন করেন। প্রথম দিনটিকে বলা হয় ‘উম‘। এই বিশেষ দিনে গ্রামের নায়েক বা পুজারি প্রকৃতির কোলে জাহের বা জাহিরা থানে এসে সেই জায়গাটিকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করেন। খড়ের ছাউনি দিয়ে তৈরি হয় ‘জাহের সাড়িম‘। সেদিন রাতে তাঁকে অতন্ত শুচি ও পবিত্র হয়ে থাকতে হয়। দ্বিতীয় দিনটি হল ‘সার্দি‘। এইদিন মারাংবুরু, জাহের আয়ো এবং মড়েকে তুরিইকোপ্রমুখের উদ্দেশ্যে পুজো নিবেদন করা হয়। পুজো শেষে কচি মুরগির বাচ্চার মাংস সহযোগে খিচুরি রান্না হয়। গ্রামের শিশু, বৃদ্ধ, মহিলা সকলেই সেদিন নতুন কাপড় পরে জাহরে এসে প্রথমে দেবস্থান এবং নায়েক বা পূজারিকে প্রণাম করেন।
আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F
নতুন কুলোতে পুজারির কাছে থাকে শাল ফুল। প্রতিজনকে তিনি এই নতুন ফুল উপহার দেন। মেয়েরা তা খোঁপায় গুঁজে নেয়। ছেলেরা গোঁজে কানে। এই বিশেষ দিন থেকে আদিবাসীরা বসন্তে নতুন গজিয়ে ওঠা পাতা ও ফুল আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার শুরু করেন। এর পর খিচুরি প্রসাদ গ্রহণের পর সারাদিন ও রাত ধরে চলে বাহা নৃত্য। তৃতীয় দিন হল ‘বাহা সেঁদরা‘। এইদিনে পলাশ ফুলের রঙে রাঙানো জল দিয়ে হোলি খেলেন সকলৈ।
সুমন সাহা