শীতলকুচি: কোচবিহার জেলার মাথাভাঙা মহকুমার সীমান্ত লাগোয়া এলাকা শীতলকুচি। সীমান্ত শহরে সাধারণ মানুষের মধ্যে দারিদ্র্যের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। এই এলাকার এক যুবকের নাম আকাশ আলম। তাঁর বাবা পেশাগত ভাবে একজন পরিযায়ী শ্রমিক। এবং মা গৃহবধূ। এক বোন রযেছে যার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁদের পারিবারিক আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল না।
২০২২ সালে কোচবিহার এবিএন শীল কলেজ থেকে গণিতে বিএসসি পাশ করেন আকাশ। তারপর সংসারের খরচ সামলাতে পড়াশোনার পাশাপাশি মুড়ির দোকান শুরু করেন তিনি। গত ২২ মার্চ আইআইটি জ্যাম সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হয়। সেখানে তিনি ১১৭ র্যাঙ্ক অধিগ্রহণ করে দেশের মধ্যে।
আকাশ আলম জানান, রাস্তার ওপর অস্থায়ী দোকান করে মুড়ি বিক্রি করেন তিনি। তবে যখন ক্রেতাদের ভিড় থাকে না। তখন বই খুলে চোখ বুলিয়ে নিতেন। এছাড়া সকাল ১১ টায় দোকান শুরু হয় তাঁর। সেই সময়ের আগে পর্যন্ত তিনি পড়াশোনায় মগ্ন থাকেন। ফিরে এসেও আবার পড়তে বসতেন। মূলত ইচ্ছেশক্তির জোরে প্রতিকূল পরিস্থিতিকে সঙ্গী করে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেজন্যই ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনলজি জয়েন্ট এডমিশন টেস্ট ফর মাস্টার্সে এই নজরকাড়া ফল হয়েছে তাঁর।
২২ মার্চ সর্বভারতীয় স্তরের এই পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হয়। সেখানে সারাদেশে তাঁর র্যাংক হয় ১১৭। ১১ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত হয়েছিল এই পরীক্ষা। মোট ১৪১৪৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিল এই পরীক্ষায়। বর্তমানে তাঁর ইচ্ছে, মুম্বইয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনলজিতে পড়াশোনা করা।
আকাশের মা রোশনারা বিব জানান যে আকাশের ছাত্রজীবন শুরু বিদ্যাসাগর শিশুনিকেতন থেকে। এরপর বড় মরিচা দেলোয়ার হোসেন উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করে সে। তারপর উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে এবিএন শীল কলেজ থেকে ৮৯.৬৭ শতাংশ নম্বর নিয়ে বিএসসি পাশ করে সে। তাঁর এই সাফল্যে খুশি গোটা পরিবার। তবে পারিবারিক আর্থিক পরিস্থিতি বারংবার ভাবিয়ে তুলছে সকলকে। বর্তমানে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে আর্থিক সহযোগিতা পেলে অনেকটাই উপকার হবে তাঁদের। দীর্ঘ সময় ধরে নিজের পড়াশোনা চালানোর খরচ নিজেকে জোগাড় করতে হচ্ছে তাঁকে। এখন বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে তাঁকে। তবে স্থানীয় মানুষেরা, তাঁর শিক্ষক এবং আত্মীয় পরিজনেরা তার এই সাফল্যের দারুন খুশি।
Sarthak Pandit