Weavers Crisis: রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী মাঠে দিনমজুরি করে সংসার চালাচ্ছেন!

পূর্ব বর্ধমান: নদীর ধারের গ্রাম তামাঘাটা। এখানকার গ্রামবাসীরা কয়েকবছর আগেও সুখে শান্তিতে বসবাস করতেন। কিন্তু লকডাউনের পর পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে তাঁদের জীবন। একটা সময় এই গ্রামের প্রায় প্রত্যেকেই তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রত্যেকটা বাড়িতে বাড়িতে ছিল তাঁতযন্ত্র। পরিবারের সকলে মিলে তাতে কাজ করে বেশ ভালভাবেই কাটাতেন জীবন। সেই সময় গ্রামে প্রবেশ করলেই শুধুই শোনা যেত তাঁত বোনার শব্দ। তবে বর্তমানে সেই সবকিছুই যেন স্মৃতির পাতায়। এখন আর এই গ্রামে শোনা যায় না সেই তাঁত বোনার শব্দ।

একসময় তামাঘাটার তাঁতের শাড়ি ব্র্যান্ড ছিল। কিন্তু করোনা পর্বের পর তাঁতের কাজ না থাকায় বাধ্য হয়ে পেশা বদলেছেন এই গ্রামের বহু বাসিন্দা। এই প্রসঙ্গে গ্রামের উত্তম পাল বলেন, গত ৪০ বছর ধরে তাঁতের কাজ হয়েছে। বর্তমানে তাঁত শিল্প কিছুই নেই, সব বেকার হয়ে গেছে। লকডাউনের পর থেকে শুরু হয়ে এখন আর তাঁতের কিছুই নেই। আগে গ্রামের প্রত্যেকটা বাড়িতে তাঁত ছিল। অনেকেই বেকার হয়ে বসে আছেন। তাঁত শিল্প আবার ফিরে এলে তবেই সমস্যার সমাধান হবে।

আর‌ও পড়ুন: রামনবমীর দিনই ভক্ত হনুমানকে স্মরণ, মঙ্গল কলস নিয়ে কয়েকশো মহিলার শোভাযাত্রা

একসময় এই তামাঘাটা গ্রামের তাঁতিদের জন্য তৈরি হয়েছিল সমবায় সমিতি, তৈরি হয়েছিল ক্লাস্টার প্রজেক্ট। সমবায় সমিতির সাহায্যে এক ছাদের নিচে বসে শাড়ি বুনতেন প্রায় কয়েকশো তাঁত শিল্পী। এখনও এই সমিতি গ্রামে আছে। কিন্তু বর্তমানে এই সমিতির অবস্থা দেখলে চমকে যাবেন। চিত্রটা আগের তুলনায় অনেকটা বদলে গিয়েছে। যে সমিতি একটা সময় তাঁতিদের ভিড়ে গম গম করত, সেখানে আজ বাসা বেঁধেছে পায়রার দল। মাকড়সার ঝুল এবং ধুলোতে ঢেকে গেছে তাঁত তৈরির যন্ত্রগুলো। এই প্রসঙ্গে সমিতির দায়িত্বে থাকা বাদল চন্দ্র কুন্ডু বলেন, আমাদের এই সমিতিতে আগে প্রত্যেক মাসে আড়াই থেকে তিন হাজার শাড়ির অর্ডার আসত। কিন্তু এখন আর কেউ শাড়ি নিচ্ছে না।

এমনিতেই ভাঙনের কারণে একাধিকবার বাসস্থান বদলাতে হয়েছে গ্রামবাসীদের। তবুও গ্রামবাসীরা থেমে থাকেননি। তাঁত শিল্পকে আঁকড়ে ধরে জীবনযাপন করছিলেন সকলেই। তবে এখন আর নেই সেই তাঁত শিল্প। তাঁত নেই, শিল্প নেই , কাজও নেই। তাই বাধ্য হয়ে সংসার চালানোর জন্য ভিন রাজ্যেও পাড়ি দিতে হয়েছে গ্রামের বহু বাসিন্দাকে। আর বাড়িতে বাড়িতে যে তাঁতযন্ত্র ছিল সেগুলোকে কেউ রেখে দিয়েছেন, আবার কেউ বিক্রি করে সেখান থেকে পাওয়া যত সামান্য অর্থ সংসারে খরচ করে ফেলেছেন। গ্রামের রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত তাঁতশিল্পীকেও এখন মাঠে কাজ করে সংসার চালাতে হয়!

বনোয়ারীলাল চৌধুরী