সোমা নায়েক

West Medinipur News: চরম দারিদ্রতাকে হার মানিয়ে উচ্চমাধ্যমিক ছাত্রীর সাফল্যের কাহিনী চোখে জল আনবে

পশ্চিম মেদিনীপুর : ছোট থেকেই সে জানে না বাবার পরিচয়। মামা বাড়িতে থেকেই মানুষ। কখনও কীর্তন, আবার কখনও অন্যান্য কাজ করে মেয়েকে মানুষ করে তুলেছে তার মা। তবে সম্পূর্ণ নিজের জেদে ও পরিশ্রমে উচ্চমাধ্যমিকে তার ফল চমকে দিয়েছে সকলকে। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার সামান্য দিন না দিন খাওয়া পরিবারে খুশির মেজাজ। মেয়েকে আরও এগিয়ে দিতে চায় তার মা ও মামা বাড়ি পরিবারের সকলে। আগামীতে আইন নিয়ে পড়তে চায় সে কিংবা ডব্লিউবিসিএস অফিসার হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখে এই কৃতি ছাত্রী। জন্মের পর থেকে বাবাকে দেখেনি। মায়ের সঙ্গে মামার বাড়িতে থাকে মেয়ে। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা।

সামান্য একচালা ছিটেবেড়া বাড়িতে থাকে। মামা-মামীদের আদর যত্ন, দাদু দিদিমা স্নেহ পেয়ে ১৭ টা বছর কাটিয়েছে। তবে তার লক্ষ্য বড় হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের পাকুড়সেনী পঞ্চায়েতের কুরুমপুর এলাকার সোমা নায়েক। এবারে উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছে ৪৭২ নম্বর। নারায়ণগড় হৃষিকেশ লাহা উচ্চ শিক্ষা নিকেতনের ছাত্রী। অভাবকে জয় করে তার এই সাফল্যে খুশি সকলে। প্রতিদিন পড়াশোনার জন্য তার লড়াই চোখে জল আনবে। বাড়ি থেকে নারায়ণগড় বাজার এর দূরত্ব প্রায় পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার। প্রতিদিন সাইকেল নিয়ে টিউশন পড়তে যাওয়া এমনকি স্কুল যাতায়াত করত সে।

আরও পড়ুন : শহরের কাঁড়িকাঁড়ি সুবিধা পেয়েও কিছু হচ্ছে না? প্রত্যন্ত গ্রামে অভাবী এই মেয়েকে দেখুন, উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্টে চমকে দিল

অভাবের সংসারে কষ্টকে মুখ বুজে সহ্য করে পড়াশোনা চালিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করে চমকে দিয়েছে সকলকে। তবে তার এই সাফল্যে খুশি হলেও ততটা আনন্দ পাচ্ছে না পরিবার। মেয়ের ইচ্ছে আইন নিয়ে পড়ার। বাধ সাধছে দারিদ্র। সোমার মা সংসার চালাতে কঠিন পরিশ্রম করেন। মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন। কখনও অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ, কখনও এলাকার কীর্তন দলে যোগ দিয়ে যতটুকু উপার্জন হয় তা দিয়েই মা ও মেয়ের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেখানে কীভাবে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন তা নিয়ে কার্যত এখন দিশাহারা তিনি।

আরও পড়ুন : শরীরের নমনীয়তায় যোগাভ্যাসে বাজিমাত! প্রত্যন্ত গ্রামের বালিকার গলায় স্বর্ণপদক

অভাবকে জয় করার অদম্য ইচ্ছা সোমার। সে প্রতিদিন প্রায় সাত কিলোমিটার উজিয়ে বিদ্যালয়ে ও টিউশনে আসত। নারায়ণগড়ের চাতুরিভাড়া এলাকাতে একটি কোচিং সেন্টারে পড়ত সোমা। প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে আসা-যাওয়া করত। সোমা ও তার পরিবার জানাচ্ছে, শিক্ষকেরা অনেকটাই সহযোগিতা করেছেন। নইলে পড়াশোনা করতে পারত না সে। প্রায় পঁচানব্বই শতাংশ নম্বর পেয়েছে। বাংলা ও ভূগোলে ৯৪, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৯৮, পুষ্টিবিজ্ঞানে ৯৫ ও ইতিহাসে ৯১ পেয়েছে। সোমার জানাচ্ছে, ইংরেজিতে তার নম্বর কমেছে। সে পেয়েছে ৮০।

আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F

তবে আগামীতে সোমার স্বপ্ন কি সফল হবে, নাকি দারিদ্র্যের ভিড়ে অচিরে হারিয়ে যাবে মেধা, সেই প্রশ্ন এখন সকলের মধ্যে।

রঞ্জন চন্দ