মন্দির 

Purba Bardhaman News: ২৫০ বছরেরও বেশি পুরনো মন্দির রয়েছে এই গ্রামে, ইতিহাস জানলে চমকে যাবেন

পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কিছু অনন্য টেরাকোটা শিল্পের নিদর্শন। এই সকল টেরাকোটা মন্দিরগুলির গা জুড়ে চোখে পড়ে পোড়ামাটির ওপর সূক্ষ, নিদারুণ শিল্পের ছোঁয়া। তেমনই এক টেরাকোটা মন্দির রয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার শ্রীবাটি গ্রামে। তবে একটি নয়, একটি চত্বরের মধ্যেই রয়েছে তিনটি অষ্টকোনাকৃতি মন্দির। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই গ্রামের তৎকালীন বর্ধিষ্ণু চন্দ্র পরিবার। গুজরাত থেকে আসা এই পরিবারের আদি ব্যাবসা ছিল নুনের। সুদূর গুজরাত থেকে এসে শান্ত নিরিবিলি এই গ্রামকে বসবাসের উপযোগী হিসেবে বেছে নিয়েছিল এই সম্ভ্রান্ত ধনী ব্যবসায়ী পরিবারটি। তাদের প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরে পূজিত হন তিন মহাদেব।

প্রাচীন এই মন্দিরের ইতিহাস প্রসঙ্গে চন্দ্র পরিবারের সদস্য অরূপ চন্দ্রর কাছে জানা গিয়েছে, এই মন্দির আনুমানিক ২৫০ বছরেরও বেশি পুরনো মন্দির । মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বর্গীয় রামকানাই চন্দ্র। তিনি তাঁর স্ত্রীর উদ্দেশ্যে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাদের আদি বাসস্থান ছিল গুজরাটে। ব্যবসা সূত্রে এই গ্রামে এসে শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ দেখে এখানেই বসবাস শুরু করেন ।শ্রীবাটি গ্রামের এই মন্দির অনন্য এক শৈল্পিক নিদর্শন। এই মন্দিরের দেওয়াল জুড়ে রয়েছে তৎকালীন সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ। বিভিন্ন দেবদেবীর পাশাপাশি টেরাকোটা শিল্পের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তৎকালীন ইংরেজ শাসক ও সমাজ ব্যাবস্থার নানান চিত্রকে।

আরও পড়ুন-   বলুন তো, পৃথিবীর কোন দেশে Jeans পরা নিষেধ? ৯০% মানুষই জানেন না সঠিক উত্তর, নাম শুনলে চমকে যাবেন গ্যারান্টি!

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে এই মন্দির সরকার অধিগ্রহণ করেছে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। তবে চন্দ্র পরিবারের দাবি , অধিগ্রহণ করলেও কাজের কাজ সেরকম কিছুই হয়না। এই প্রসঙ্গে চন্দ্র পরিবারের সদস্য অরূপ চন্দ্র বলেন, বর্তমানে এই মন্দির সরকার অধিগ্রহণ করেছে। তবে আমরা একাধিকবার মন্দির সংস্কারের জন্য প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু একাধিকবার প্রশাসনকে জানিয়ে কোনও কাজ হয়নি। এই জায়গায় প্রশাসনিক আধিকারিকেরাও পরিদর্শনে এসেছিলেন কিন্তু আশ্বাস মিললেও, এখনও কাজ হয়নি। আমরা চাইছি অতি সত্বর এই মন্দিরটিকে সংস্কার করা হোক।

আরও পড়ুন-   গরমে গোলাপ গাছ শুকিয়ে কাঠ হচ্ছে? এই ৬ জিনিস ‘ধন্বন্তরি’! গোড়ায় দিলেই থোকা থোকা ফুলে ভরবে গাছ, গ্যারান্টি!

বর্তমানে মন্দিরের গা জুড়ে জমে থাকা শ্যাওলা আর গাছের শিকড় প্রমাণ দেয় অযত্নের। পরিবারের সদস্যের দাবি অতিদ্রুত রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের কাজ শুরু হোক। না হলে ক্রমে কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে প্রাচীন এই মন্দিরটি। তাঁদের কথায়, দক্ষ কারিগর ও আধুনিক পদ্ধতি ব্যাবহার করে সংস্কার করা হোক মন্দিরগুলির। কালের নিয়মে বর্তমানে ক্ষয়ে গেছে কিছু জায়গার সূক্ষ টেরাকোটার কাজ, ইটের ফাঁকে বেড়ে উঠছে গাছের শিকড়, জমেছে শ্যাওলাও। তবে দেওয়াল জুড়ে অতীতের সমসাময়িক নানান ঘটনাকে সাক্ষী করে আজও দাড়িয়ে রয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার গ্রাম বাংলার এই তিন মন্দির। আপনারা চাইলে এই জায়গায় ঘুরেও আসতে পারেন। এই জায়গায় আসতে গেলে সর্বপ্রথম পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া – মালডাঙ্গা রোডের কুরচি মোড়ে আসতে হবে। কুরচি মোড় থেকে স্বল্প দুরত্বেই রয়েছে শ্রীবাটি গ্রাম। গ্রামে প্রবেশ করার পর তিন মন্দির বললে মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দেবে যে কেউ। তবে এখানে থাকা খাওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। চাইলে কাছেই কাটোয়া শহরের মধ্যে কোনও হোটেলে রাত্রি যাপন করা যেতে পারে।

বনোয়ারীলাল চৌধুরী