সংগ্রহশালা

Tribal Museum: কী নেই সংগ্রহশালায়! এলে আপনিই অবাক হবেন

বীরভূম: দিনটা ছিল ১৯৮০ সালের ৩০ জুন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু উদ্বোধন করেছিলেন সিধু-কানু উপজাতি সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের। মূলত বীরভূম জেলা তথ্য সংস্কৃতি দফতরের এটি একটি মিউজিয়াম বা সংগ্রহশালা। এখানে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক বিভিন্ন উপাদান ও হুল বিদ্রোহে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্রকে সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল এই সংগ্রহশালাটি। বীরভূম জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালে এটিকে পুনরায় সংস্কার করা হয় এবং দুই থেকে তিন দিন খোলা রাখা হয় জনসাধারণের জন্য।

তবে জনসাধারণের জন্য খোলা রাখা হলেও এই সংগ্রহশালা দেখতে সেই অর্থে কেউ আসেন না। দীর্ঘদিন ধরে প্রচারের আড়ালে থাকার কারণে এই মিউজিয়ামটি আজ‌ও অনেকের অজানা থেকে গিয়েছে। এখানে একটি গ্রন্থাগার আছে, যেখানে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি বই রয়েছে!

আর‌ও পড়ুন: ভয়ঙ্কর রাস্তা দিয়ে হাসপাতালে যেতে হয় প্রসূতিদের!

প্রসঙ্গত, ৩০ জুন ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সিধু এবং কানহু দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে দামিনী কোহির ভাকনা ডিহির মাঠে একত্রিত হয়েছিলেন প্রায় দশ হাজার সাঁওতাল। সেদিন দুই ভাই এই দশ হাজার সাঁওতালকে একত্রিত করে বক্তব্য রেখে হুল বা বিদ্রোহের ঘোষণা করেন। যা ইতিহাসের পাতায় স্থায়ী স্থান পেয়েছে।

মূলত ইংরেজ এবং জমিদারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দামিনী কোহি থেকে দিকুদের হটিয়ে সাঁওতাল রাজ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে দুই ভাই সিধু এবং কানহুর নেতৃত্বে এই বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল। এই বিদ্রোহের ফলে কার্যত উত্তাল হয়ে ওঠে পাঁকুড় থেকে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম থেকে মহেশপুর, সিংভূম থেকে মুঙ্গের সহ বহু জায়গ। ইংরেজ, জমিদার, নীলকরদের মতো অত্যাচারীদের হত্যা করার ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় থানা থেকে পোস্ট অফিস, উপরে নেওয়া হয় রেলের লাইন। আর এই বিদ্রোহের জেরেই কার্যত এই এলাকাগুলি পরিণত হয় সাঁওতাল মুক্তাঞ্চলে।

তখন ইংরেজরা মুর্শিদাবাদের নবাবের সাহায্য নিয়ে সাঁওতাল ও তাদের বিদ্রোহ দমন শুরু করেন । ইংরেজদের গুলিতে মৃত্যু হয় সিধুর, অন্যদিকে ফাঁসি দেওয়া হয় কানহুকে। এছাড়াও প্রায় ২৩,০০০ সাঁওতালকে নির্বিচারে মেরে ফেলা হয়। তবে এই বিদ্রোহের কারণগুলি বিচার বিবেচনা করে একটি সাঁওতাল পরগনা গঠন করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।এছাড়াও বন-জঙ্গল এবং ভূমির উপরে যে অধিকারের জন্য সাঁওতালরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন সেই অধিকার তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এই সাঁওতাল নেতা সিধু ও কানহুর স্মৃতির উদ্দেশ্যেই তথ্য ও সংস্কৃতির দফতরের ভেতরে থাকা এই মিউজিয়ামের নামকরণ করা হয় ‘সিধু কানু উপজাতি সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র’।

সৌভিক রায়