পূর্ব বর্ধমান: বয়স শুধুমাত্র একটি সংখ্যা ! মনের জোর আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে সব বাধা পেরোনো সম্ভব তা আবারও একবার প্রমাণ করে দিলেন , পূর্ব বর্ধমানের ষাটোর্ধ্ব এই মহিলা। পূর্ব বর্ধমানের কালনা শহরের বাসিন্দা সন্ধ্যা পাখিরা।
তিনি কালনার পাটুলির শ্রীরামপুর ভারতী ভবনের শারীর শিক্ষার শিক্ষিকা ছিলেন। তবে বেশ কয়েক বছর আগেই ২০১৮ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের ময়দান ছাড়লেও তিনি খেলার ময়দান ছাড়েননি। রীতিমত প্রায় ৬৬ বছর বয়সেও তিনি এখনও খেলাধুলা চালিয়ে যান। দৈনিক তিনি খেলাধুলার অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে নিজেকে পরিচালনা করেন। ৬০ পেরোনোর আগেই বেশিরভাগ মানুষের শরীর বিভিন্ন রোগে ভরে যায়৷ কিন্তু সন্ধ্যা দেবী ৬৬ বছর বয়সেও যেন একদম ফিট।
খেলাধুলা তাঁর বর্তমান সঙ্গী। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তিনটি মেডেলও জয় করে এনেছেন তিনি। এই বিষয়ে সন্ধ্যা দেবী জানিয়েছেন, “আমি ছোট থেকেই খেলাধুলা করি। অবসর নেওয়ার পর থেকে আবার নতুন করে খেলাধুলা শুরু করেছি। মাঠে নামলে তখন বয়সটা শুধুমাত্র সংখ্যা মনে হয় আমার। সুন্দর মাঠ দেখে আমিও সুন্দর পারফরম্যান্স দেখানোর চেষ্টা করি। ক্লাস ফাইভ থেকেই আমি খেলাধুলা করি, রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে প্রচুর খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করেছি অবসরের পর আবার খেলাধুলা করে চলেছি। আমি দু বার বাংলাদেশ গেলাম এবং ২০২৩ এ শ্রীলঙ্কা গিয়েছিলাম।”
এক কন্যা সন্তানের মা এই শিক্ষিকার বছর ছয়েক আগে শিক্ষকতা জীবন থেমে গেলেও, এখনও তার খেলাধুলার জীবন সচল। গত জুন মাসের ২৭ থেকে ২৯জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের ঢাকা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতার আসর বসে। ৩৫ বছরের পর থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত বয়সি প্রতিযোগীরা এতে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, মালদ্বীপ প্রভৃতি দেশের প্রায় ৫১০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন উক্ত প্রতিযোগিতায়। এই প্রতিযোগিতায় সন্ধ্যা পাখিরা অংশগ্রহণ করে জ্যাভলিনে প্রথম, ডিসকাস ও শটপাটে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। উল্লেখ্য ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতাতেও অংশগ্রহণ করে তিনি মেডেল পেয়েছিলেন। তার আগে উত্তরপ্রদেশের বেনারস, কেরালা, ছত্রিশগড়ে জাতীয় স্তরে অংশগ্রহণ করে সাফল্য পেয়েছেন।
বেনারসে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্তরের অনুষ্ঠানে একবার গুজরাট থেকে একজন মহিলা খেলোয়াড়এসেছিলেন অংশগ্রহণ করতে। তার বয়স ছিল ১০৪ বছর ! এই অ্যাথালিটকে দেখেই নাকি সন্ধ্যা দেবী আরওঅনুপ্রাণিত হয়েছেন। সন্ধ্যা দেবী কালনা শহরের কলেজ হোস্টেল মাঠে প্রতিদিন সকালে তিন ঘন্টা ধরে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। আগামী দিনে তিনি আরও খেলার প্রতিযোগিতায় যোগ দেবেন বলেও জানিয়েছেন।
Banowarilal Chowdhary