প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে মেয়েদের ভলি খেলার

Local Sports: রেলের চাকরি পেয়েও করতে পারেননি এই প্রাক্তন মহিলা ভলিবলার! জানুন তাঁর কাহিনী

নদিয়া: বাংলায় মহিলা ভলিবলের জন্মভিটে বলা যেতে পারে শান্তিপুরকে। যদিও নিজের ঘরেতেই সম্মান অধারা। ফলে বহু প্রতিভা উঠে এসেও আজ সংসারের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছেন। যারা একসময় মাঠে দাপিয়ে ভলিবল খেলেছেন সেই মেয়েদের অনেকে আজ আর মাঠমুখো হতে পারেন না।

আজ থেকে প্রায় ৪৮ বছর আগে যে সময় সমাজে নারীরা ঘোমটার আড়ালে থাকতেন, তখন পরপর দুটি ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম স্থান অধিকার করেন শান্তিপুরের রিতা বসু। তিনি পড়তেন শরৎকুমারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাজ্যের হয়ে একবার খেলেছিলেন‌। দ্বিতীয়বার তাঁর বসবাসের এলাকা বড় গোস্বামী পাড়ার ভলি চর্চার অন্যতম সুপরিচিত নাম সরল স্মৃতি সংঘের হয়ে ময়দানে নামেন। হিমাচলপ্রদেশে অনুষ্ঠিত ২২ তম ন্যাশনাল স্কুল গেমসে অংশগ্রহণ করে সেখানে প্রথম স্থান অধিকার করেন। সেই বছরই অনুষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল ভলিবল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার তৃতীয় মিনি ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপ। খেলাটি হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার ভদ্রেশ্বরে। সেখানেও তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং তার পাশাপাশি প্রথম স্থান অধিকার করেন।

আর‌ও পড়ুন: বাংলাদেশের অশান্তির প্রভাব এপারেও, ব্যাপক ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা

পরপর দুটি ভিন্ন জায়গায় ভলিবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করা সেই সময় গ্রাম বাংলার একজন মহিলার পক্ষে দুঃস্বপ্নের মত ছিল! এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে লড়ে গিয়ে ভলিবলকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যান আরও। আর সেই কারণেই তাঁকে শরৎকুমারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এবং ক্লাবের পক্ষ থেকেও বেশ কয়েকবার সংবর্ধনা জানানো হয়।

নদিয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা রিতা নন্দী বর্তমানে বৈবাহিক সূত্রে হয়েছেন রিতা বসু। তবে সেই সময় খেলার সুবাদে বাইরে থাকা কিংবা রাত বিরেতে বাড়ি ফেরা, এমনকি হাফপ্যান্ট পরে খেলা নিয়ে নানান কটুক্তি শুনতে হয়েছিল। তবে রিতাদেবীর পরিবার তাঁর পাশে ছিল। তবে বিবাহের পর ধীরে ধীরে খেলা থেকে দূরে সরে যান। পরবর্তীতে কোচ হিসেবে কিছুদিন অল্প বয়সীদের গড়ে তোলার কাজ করেছেন। তবে এক সময় কিছুটা অভিমানেই পুরোপুরি ভলিবল থেকে দূরে চলে যান রিতা বসু।

ভলিবল খেলার সুবাদেই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের। স্বনামধন্য সাঁতারু বুলা চৌধুরী সহ রিতাদেবীরা ১৪ জন মহিলা বিভিন্ন বিভাগে খেলাধুলোর জন্য সেই সময় রেলের চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু সামাজিক এবং পারিবারিক কারণে তিনি সেই চাকরি করতে পারেননি। তা থেকেই যেন জন্ম নেয় অনেকটা অভিমান।

আজ রিতা বসু বৃদ্ধা হয়েছেন। সেদিনের অভিমান গলে জল হয়ে গিয়েছে। বরং বললেন, মা-বাবা সকলেই যদি নিজেদের নিয়ে ভাবে তাহলে সন্তানদের মানুষ করবে কে!

মৈনাক দেবনাথ