হুগলি: শরীরে লাগানো রয়েছে নল ! ১৮ বছর আগে পথদুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন তিনি। বাঁচার জন্য শরীরে লাগান হয় ক্যাথিডার, তাই নিয়েই দীর্ঘ আঠারো বছর ধরে একের পর এক প্রতিমা গড়ে আসছেন চুঁচুড়া শামবাবু ঘাট সংলগ্ন এক প্রতিমা নির্মাতা লালটু পাল। তার জীবন সংগ্রামের কাহিনি কোন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের থেকে কম নয়।
সালটা ছিল ২০০৬ প্রতিমা গড়ার সরঞ্জাম কিনতে গিয়ে পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন লাল্টু। এক নম্বর বাস চলে যায় তার শরীরের উপর দিয়ে। পেটের উপর দিয়ে চাকা চলে যাওয়ার জন্য মল এবং মূত্রের দার পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসকদের মেডিক্যাল সাইন্স এর দৌলতে কোনক্রমে বাঁচে প্রাণ। তবে সেই থেকেই শরীরে লাগানো রয়েছে একটি নল। কাজ যুক্ত রয়েছে একটি বালতির সঙ্গে। মেডিক্যাল সাইন্স-এর ভাষায় যাকে বলে, ক্যাথিডার । সেই করেই দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে প্রতিমা গড়ে আসছেন চুঁচুড়ার প্রতিমা নির্মাতা লালটু পাল।
বাপ ঠাকুর দাদার আমলের তৈরি তাদের ঠাকুরের গলায় ছোট থেকেই প্রতিমা তৈরি করতেন লালটু ও তার ভাই। বাবা মারা গেছে অনেকদিন । সেই বাবার হাত ধরেই কাজ শেখার পর আজও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে প্রতিবছর আদ্যা শক্তি মহামায়ার রূপ দান করছেন এই শিল্পী। জীবনে প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তার কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কোনোভাবেই ধোপে টেকে না। হাতের নল ও বালতি নিয়েই খড় বাঁধা থেকে মাটি লাগানো এমনকি ঠাকুরের সাজ তৈরি করা সবই করছেন শিল্পী লাল্টু পাল।
এই বিষয়ে লাল্টু বলেন, বাবার কাছ থেকে যখন ১২ বছর বয়স তখনই ঠাকুর তৈরির কাজ শিখেছিলেন। বাবা মারা যাবার পর তারা দুই ভাই মিলে ঠাকুরের গোলা চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে ২০০৬ সালের অ্যাক্সিডেন্ট ঘুরিয়ে দিয়েছে তার জীবনের মোড়। স্বাভাবিক জীবনযাপন ছেড়ে কার্যত শরীরে পাইপ গুজেই থাকতে হচ্ছে তাকে। তবে তাতে আক্ষেপ থাকলেও ভেঙে পড়েন নি শিল্পী। বরং প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই আজও একের পর এক মৃন্ময়ী মায়ের চিন্ময়ী রূপদান করছেন মৃৎশিল্পী লালটু পাল।