সৌভিক রায়, বীরভূম: বঙ্গসংস্কৃতির অন্যতম এক ধরনের ঐতিহ্য পটচিত্র।বিশেষভাবে তৈরি কাপড় বা ক্যানভাসের উপর আঁকা হয় লোকচিত্র।প্রাচীন বাংলার অন্যতম এই চিত্রের মাধ্যমে নানা পৌরাণিক ও সামাজিক কাহিনী বা গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়।চিত্রকর অর্থাৎ যিনি শিল্পী, তিনি সেই গল্প বা কাহিনী গান ও চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন।প্রাচীনকালে যখন কোনও শিল্পকলার অস্তিত্ব ছিল না, তখন এই পটশিল্পই ছিল বাংলার শিল্পকলার ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।যাঁরা পটচিত্র অঙ্কন করেন তাঁদেরকে পটুয়া বলা হয়।রামায়ণ, মহাভারতের পাশাপাশি সমাজের নানা বিষয় নিয়ে পটচিত্র মানুষের জনপ্রিয় ছিল।
পটচিত্রর প্রকৃত অর্থ হলও কাপড়।পট চিত্র হলও পট বা বস্তের ওপর আঁকা এক ধরনের লোক চিত্র।এটি প্রাচীন বাংলার শিল্পকলার ঐতিহ্য এবং বাহক ছিল। মূলত বাংলা এবং ওড়িশার ঐতিহ্যবাহী শিল্প।এছাড়াও রাজস্থানের বেশ কিছু জায়গায় পট চিত্রর সন্ধান পাওয়া যায়। উনবিংশ শতকে বাংলায় প্রসিদ্ধ পেয়েছিল কালীঘাটের পট।রাজ্য এবং পাশ্চাত্য চিত্র মিশিয়ে এই পট তৈরি হয়।এক সময় গ্রামে গ্রামে ঘুরে পটচিত্র প্রদর্শন করত পটুয়ারা।পট বিছিয়ে গান শুনিয়ে মানুষের বিনোদন এবং নিজেদের সংসার চালাতেন পটুয়াশিল্পীরা।
আরও পড়ুন : ভরা বর্ষাতেও বাজারে কেন নেই সুস্বাদু ইলিশ? কারণ জানলে চমকে যাবেন ভোজনরসিকরা
তবে যুগ পাল্টেছে।আগের মতন পটুয়াদের আর দেখা যায় না।কিন্তু সেই রকম হারিয়ে যাওয়া বাপ ঠাকুরদার পট শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে হাল ধরেছেন পটুয়ারা।জানা যায় বীরভূমের সীমান্ত মুর্শিদাবাদ ঝিল্লি গ্রামের বাসিন্দা চাঁদ পটুয়ারা প্রায় ১৪ থেকে ১৫ বছর ধরে পট শিল্পের সাথে জড়িত।গ্রামে গ্রামে গিয়ে পটচিত্র দেখিয়ে মানুষের বিনোদন করে থাকেন আর যা দেখতে ভিড় জমান আট থেকে আশি সকলে।
পৌরাণিক গল্পকে অবলম্বন করে ছবির সঙ্গে মিল রেখে গান গেয়ে গ্রামেগঞ্জে ঘুরে পটচিত্র দেখান পটুয়ার।বেহুলা লখিন্দরের গল্প থেকে শুরু করে গরু ছাগল কীভাবে পালন করতে হয় বাচ্চাদের কীভাবে শিক্ষা দিতে হয় সবকিছুই চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন পটুয়া বাবুরা। আগের মত আর পট শিল্পের চলন নেই বলে জানান বাসিন্দারা।দীর্ঘদিন পর পটশিল্পকে দেখতে পেয়ে খুশি তো হচ্ছেন বাসিন্দারা।