হাসপাতালে শান্তিবুড়ি

South 24 Parganas News:  বাড়ির লোক খোঁজ নেয় না, ৫ বছর ধরে হাসপাতালই ঠিকানা বারুইপুরের ‘শান্তিবুড়ি’র!

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ২০১৯ সালের মার্চ মাসে অসুস্থতার কারণে ৭৮ বছরের শান্তিদেবীকে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন পরিবারের লোকজন। তার পর কেটে গিয়েছে কয়েক বছর। এখন এই হাসপাতালই হয়ে উঠেছে আশ্রয় তাঁর আশ্রয়স্থল।

নার্স, চিকিৎসকদের সেবায় দিব্যি সুস্থ তিনি। সবাই তাঁকে চেনেন ‘শান্তিবুড়ি’ নামে। সুস্থ হলেও ভাল নেই এই শান্তিবুড়ি। মন জুড়ে তাঁর রাগ। বিড়বিড় করে বলছিলেন, “আমার জায়গা-জমি সব লিখে নিয়েছে পরিবারের লোকজন। তাঁরা কেউই আমার খোঁজ নেয় না।”

আরও পড়ুন- বাংলাদেশের নিম্নচাপ আরও শক্তিশালী! রাত থেকেই প্রবল বৃষ্টি রাজ্যে, জেনে নিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস!

হাসপাতালের ফ্যাকাল্টি ম্যানেজার শ্যামল চক্রবর্তী জানালেন, পাঁচ বছর হয়ে গেল, তিনি এই হাসপাতালেই আছেন। ২০২৩ সালে শান্তিদেবীকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি আবার চলে আসেন এখানে। বলেন, “বাড়ির লোকজন তাড়িয়ে দিয়েছে। যাব কোথায়? তার পর থেকে এই হাসপাতালই হয়ে উঠেছে তাঁর বাড়ি-ঘর।”

হাসপাতাল সূত্রে খবর, বারুইপুরের শাসন রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি শান্তিদেবীর। তাঁর পরিবারে ছেলে বউমা সবাই আছেন। মাঝে মধ্যেই তাঁদের কথা বলেন শান্তিবুড়ি। হাসপাতালের ফিমেল ওয়ার্ডের বারান্দায় তাঁর জন্য একটি বেড বরাদ্দ করা হয়েছে। অন্যান্য রোগী থেকে শুরু করে তাঁদের পরিবারের লোকজন সবাই ভালোবাসেন এই বৃদ্ধাকে। আয়াদের কাছে নানা আবদারও করেন তিনি। কখনও দোকান থেকে বিস্কুট এনে দিতে বলেন, কখনও গরম দুধ চান।

আরও পড়ুন- পুল কার থেকে নেমেই বমি! স্কুলে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে NRS-এর দোরগোড়ায় মৃত্যু ছাত্রের

হাসপাতালের ভিতর অপরিষ্কার দেখলেই হল, বকুনি দেন আয়াদের। এক নার্স জানালেন, উনি পুরোপুরি সুস্থ। প্রতিদিনই ডাক্তার রাউন্ড দিতে এলে তাঁকে একবার দেখে যান। শরীর খারাপ লাগলে নিজেই ওষুধ চেয়ে নেন আমাদের কাছ থেকে। তবে এ ভাবে কয়েক বছর ধরে একটি বেড শান্তিদেবীর জন্য আটকে থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অস্বস্তিতে। শান্তিবুড়ি যে হাসপাতাল ছেড়ে বৃদ্ধাশ্রমেও যেতে চান না। তিনি বলেন, “হাসপাতালই আমার ঘর। রোগীদের পরিবারের লোকজন কেউ না কেউ আমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেন। তা দিয়ে আমার দিব্যি চলে যায়। বাড়িতে গেলে যদি আবার তাড়িয়ে দেয় ওরা!”

সুমন সাহা