হুগলি: আরজি কর কান্ডে সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায় গ্রেফতার হওয়ার পর অনেক নেতিবাচক বিষয় উঠে এসেছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে। কিন্তু হুগলির এক সিভিক ভলেন্টিয়ার ইতিবাচক নজির তৈরি করেছেন তার কাজের মধ্যে দিয়ে। কারণ পেশায় তিনি সিভিক ভলেন্টিয়ার হলেও নেশায় তিনি একজন শিক্ষক। তাঁর নিজের হাতে তৈরি পাটকাঠির পাঠাশালায় খুদেরা শিখছে পড়াশোনা। যেই কাজে সিভিক ভলেন্টিয়ার হীরালাল সরকারের প্রশংসায় প্রশাসন।
আরও পড়ুন- মাকে ‘স্ত্রী’ করতে চেয়ে ৬০ বছরের বিধবাকে ধর্ষণ ছেলের! শাস্তি হল ‘দানব’-এর
হুগলির বলাগরের নাটাগরে এস টি কে কে রোডের উপর প্রতিদিন তাকে ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলাতে হয়। রোদ ,জল উপেক্ষা করে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যান নিয়ন্ত্রণ করেন, মানুষকে রাস্তা পারাপার করতে সাহায্য করেন। নাটাগড় এলাকাটি মূলত আদিবাসী মানুষের বাস। সন্তানদের জন্য গৃহশিক্ষক রাখার অনেকেরই সমর্থ্য নেই। সেই সমস্ত পড়ুয়াদের বিনামূল্যে পাঠ দেন সিভিক ভলেন্টিয়ার হীরা।
রাস্তার পাশেই পাটকাঠির বেড়া দিয়ে তৈরি করেছেন একটি চালা ঘর। সেখানেই প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন পড়ুয়া স্কুলে যাবার আগে তার কাছে পড়াশোনা শিখতে আসে। কিছুটা সময় লেখাপড়া করিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের হাত ধরে রাস্তা পার করে স্কুলে যেতে সাহায্য করেন হীরা। হীরার পাঠশালা নামে পরিচিত হয়েছে এই পাটকাঠির ঘর। স্কুলে মিড ডে মিল পায় পড়ুয়ারা। হীরার পাঠাশালায় পড়া শেষে পড়ুয়ারা পায় বিস্কুট আর লজেন্স। তাতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে খুদেরা।
আরও পড়ুন- নিম্নচাপ ফুঁসছে ঠিক ‘এইখানে’! উত্তর থেকে দক্ষিণ সারা সপ্তাহের আবহাওয়ার আপডেট দেখে নিন!
২০১০ সালে বলাগড় কলেজ থেকে বিএ পাস করেন হীরালাল সরকার। এরপর হুগলি গ্রামীণ পুলিশের বলাগড় থানার সিভিক ভলেন্টিয়ারের কাজ পান। সকালে ট্রফিকের দায়িত্ব সামলে বিকেলে বাবার সবজির ব্যবসায় হাত লাগান। তবে নিজের দায়িত্ব কর্তব্যে অবিচল থাকেন।
হীরালাল বলেন, “এই এলাকা সবটাই আদিবাসী অধ্যুষিত। অনেকেই মনে করেন এরা পিছিয়ে পড়া মানুষ। আমি যেহেতু এখানে ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলাচ্ছি তাই কাজের ফাঁকেই তাদের পড়াশোনাটা একটু দেখিয়ে দিই । তাতে তারা কিছুটা হলেও শিখতে পারে। যারা প্রাইভেট পড়তে দিতে পারেনা তাদের ছেলে মেয়েদের আমি শিখিয়ে দিই। মূলত তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতেই আমার এই উদ্যোগ। সমাজের পাশে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে ভাললাগে।”
হুগলি গ্রামীন পুলিশের ডিএসপি ক্রাইম অভিজিৎ সিনহা মহাপাত্র বলেন,”সবাই খারাপ হয় না সেটা হীরালকে দেখলেও বোঝা যায়।ও চেষ্টা করছে ছোটোদের শিক্ষিত করার। কিছু পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর এই চেষ্টাটাই তো মহৎ। ও গত ছয় মাস ধরে নিজের চেষ্টায় এই পাঠশালা গড়ে তুলেছে।উদ্দেশহল ছোটোদের শিক্ষিত করা।আমরা ওর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।হুগলি গ্রামীন পুলিশের সুপার কামনাশিস সেন নিজেও এই ধরনের কাজ পছন্দ করেন।তাই গ্রামীণ পুলিশের পক্ষ থেকে হীরালালকে শুভেচ্ছা জানাই।” ওসি বলাগড় রাজকিরণ মুখোপাধ্যায় ডিএসপি ক্রাইম হীরালালকে তার কাজের জন্য থানায় ডেকে সম্বর্ধনা দেন।
রাহী হালদার