জয়নগরের দত্ত বাড়ির প্রতিমা 

Durga puja 2024: ৩৪৯ বছরের প্রাচীন জয়নগরের দত্ত বাড়ির পুজো, এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে বঙ্কিমচন্দ্র, নেতাজির স্মৃতি

জয়নগর: আদি গঙ্গার প্রাচীন প্রবাহ পথে সুন্দরবনের অন্তগর্ত এই অঞ্চল গড়ে উঠেছে পাশাপাশি দুটি এলাকা জুড়ে। একটি হল জয়নগর, অন্যটি মজিলপুর। জয়নগরের কিছু ঐতিহাসিক বনেদি বাড়ি এখনও তাদের ইতিহাস আগলে ধরে বেঁচে রয়েছে।

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বেশ কয়েকটি প্রাচীন বনেদি বাড়ি দুর্গা পূজার মধ্যে অন্যতম হল জয়নগরের দত্ত বাড়ির দুর্গাপুজো। ১৬৭৫ সালে জমিদার রামচন্দ্র দত্ত কলকাতা থেকে সুন্দরবনে এসে নিজের জমিদারি আধিপত্য স্থাপন করেন। এরপর মা দুর্গার স্বপ্নাদেশে শুরু হয় দুর্গাপুজো।  ৯৪ টি মৌজা এবং ৬ টি থানার জুড়ে রামচন্দ্র দত্তের জমিদারি বিস্তৃত ছিল।  কালের নিয়মে জমিদারি প্রথা আর নেই। কিন্তু রয়ে গিয়েছে প্রাচীন রীতিনীতি। এখনও এই দত্ত বাড়িতে টানা ১০ দিন ধরে দেবীর আরাধনা করা হয়।

পরিবারের সদস্যরা কর্মসূত্রে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে থাকলেও পুজোর সময়  সবাই উপস্থিত হন দত্ত বাড়িতে। অতীতের সেই জৌলুসে কিছুটা ভাটা পড়লেও, এখনও প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই পুজো করেন বাড়ির সদস্যরা। এখনও প্রথা মেনেই রথযাত্রার দিন কাঠামো পূজা হয়। বংশ পরম্পরায় মৃৎশিল্পী, পুরোহিত ও বাদ্যকারেরা এই বাড়ির পুজোয় শামিল হন। পুজো শুরু হওয়ার আগে এখন আর বন্দুকের আওয়াজ হয় না,  আতশবাজি জ্বালিয়ে পুজো শুরু হয়।

একসময় এই দত্তবাড়িতে আসতেন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি দত্ত বাড়িতে প্রায় এসে ছুটি কাটাতেন এবং দত্ত বাড়ির দুর্গাপুজোয় শামিল হতেন। জয়নগরের এই দত্তবাড়িতে বসেই তিনি লিখেছিলেন বিষবৃক্ষ উপন্যাস। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বেশ কয়েকটি উপন্যাসে দত্ত বাড়ির উল্লেখ রয়েছে।

পরিবারের এক সদস্য শিবেন্দ্রনারায়ণ দত্ত বলেন, ” কর্মসূত্রে কলকাতা -সহ বিভিন্ন জায়গায় পরিবারের সদস্যরা ছড়িয়েছিটিয়ে থাকলেও পুজোর সময় সবাই দত্ত বাড়িতে চলে আসেন।  প্রাচীন  প্রথা মেনেই এখনও পুজো হয়। পুজো হয় ১০ দিন ধরে। এই পুজোর সঙ্গে বহু ইতিহাস জড়িয়ে।  তৎকালীন বারুইপুরের ম্যাজিস্ট্রেট তথা সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দত্ত বাড়ির ছেলে যোগেন্দ্র নারায়ণ দত্তের বাল্যবন্ধু ছিলেন। সেই সুবাদে এই বাড়িতে তার নিত্য যাতায়াত ছিল। দুর্গা পুজোতেও দত্ত বাড়িতে আসতেন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ”

শিবেন্দ্রনারায়ণ দত্ত আরও জানান, ”এই দত্ত বাড়ির সঙ্গে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নিবিড় টান রয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের বেশ কয়েকটি সভা এই দত্ত বাড়ির সামনের মাঠে হয়েছে। এখনও পর্যন্ত নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের বাড়িতে দত্ত বাড়ির দুর্গাপুজোর প্রসাদ পাঠানো হয়।”

সুমন সাহা