Tag Archives: traditional durga puja 2024


Durga Puja 2024: ৫৭০ বছরের বনেদি পুজোতেও আরজি করের প্রতিবাদ! চলছে প্রস্তুতি, দেখুন

হুগলি: জেলার অন্যতম প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে একটি হল হুগলির কোন্নগরের ঘোষাল বাড়ির দুর্গাপুজো। বনেদিয়ানার সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ৫৭০ বছরে পদার্পণ করেছে এই পুজো। ইংরেজ আমলে ব্রিটিশ সরকার দ্বারা স্বীকৃতি পেয়েছিল ঘোষাল বাড়ির দুর্গোৎসব।

তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশ সরকারের থেকে বিশেষ অনুদানও আসত এই পুজো করার জন্য। বনেদিবাড়ির পুজো হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে আরজি করের ঘটনার প্রভাব পড়েছে তাদের পুজোয়। তবে পুজো বন্ধ নয়, বরং বাড়ির মহিলা ও পুরুষরা মিলে একটি নাটক মঞ্চস্থ করেছেন আরজি কর ঘটনার প্রতিবাদ স্বরূপ যার নাম দিয়েছেন ‘অপরাজিতা’।

আরও পড়ুন: রোদের আড়ালেই কি কালো মেঘের সঞ্চার? ফের বৃষ্টি হবে? আবহাওয়ার বড় খবর

হুগলির কোন্নগরের জমিদার হিসাবে সূচনা হয় ঘোষাল পরিবারের। ১৪৫৪ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় তাঁদের জমিদারি। সেই থেকেই বাড়ির ঠাকুর দালানে আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গার আরাধনার সূত্রপাত। এখনও এই পুজোয় আসে ইংল্যান্ড থেকে অনুদান। ঘোষাল বাড়ির ৫৭০ বছরের দূর্গাপুজো বরাবরই শিল্পের পৃষ্ঠপোষক।

পুজোর দিনে ঠাকুর দালানে বসে নাটক,  যাত্রাপালার আসর। আগে একটা সময় দুর্গাপুজোয় এখানে এসে গান গেয়ে গিয়েছিলেন ওস্তাদ বুরদুল খান, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো দিগ্বজ সঙ্গীতশিল্পীরা। এই বছর আরজি কর ঘটনার প্রতিবাদে বাড়ির মহিলা ও পুরুষরা মিলে নাট মন্দিরেই মঞ্চস্থ করবেন এক বিশেষ নাটক ‘অপরাজিতা’। যার প্রস্তুতিও চলছে একেবারে জোরকদমে।

আরও পড়ুন: রোজ খাবারের পাতে শসা খান? শরীরে কী হচ্ছে এর ফলে জানেন? চিকিৎসকের অবাক করা দাবি

পরিবারের বর্তমান বংশধর প্রবীর ঘোষাল জানান, তাঁদের বাড়ির দুর্গাপুজোকে ঘিরে উৎসবে মেতে ওঠেন পরিবারের ৮ থেকে ৮০ সকলে। ইংরেজদের শাসনকালে তাঁদের পুজোর জন্য বিলেত থেকে অনুদান আসত তৎকালীন সময়ে ৭৫০ টাকা। সেই সময় এই টাকার অংক এতটাই বিপুল ছিল যে, পুরো পুজো হয়ে যাবার পরও টাকা শেষ করা যেত না। তাই ঘোড়ার গাড়ি চেপে শ্রীরামপুরের খাজাঞ্চি খানায় আবারও টাকা ফেরত পাঠাতেন বাড়ির লোকজন। সেই প্রথা এখনো চলে আসছে।

তিনি আরও বলেন, অনেক ভাল কিছুর সঙ্গে কিছু ভয়ানক পরিস্থিতির সাক্ষী রয়েছে তাদের দুর্গাপুজো। আগে দশমীতে নৌকায় করে মাঝগঙ্গায় নিয়ে গিয়ে নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে প্রতিমা বিসর্জন করা হত। তবে একবছর সেই ঠাকুর বিসর্জন করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণের শিকার হন পরিবারের এক সদস্য। সেই থেকে দশমীর ভাসান তাঁদের বাড়িতে সকাল বেলাতেই হয়ে যায়।

পুজোর বিশেষত্বগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হল, এই পুজোয় বাইরের দোকানের কোনও মিষ্টি ব্যবহার করা হয় না। বাড়ির মহিলারা নিজেরাই নাড়ু তৈরি করেন। সেই নাড়ু দিয়েই হয় ঠাকুর প্রসাদ। অষ্টমীর দিনে সন্ধ্যা প্রদীপ জালেন বাড়ির পুরুষরা। দশমীর দিন বাড়ির এও স্ত্রীরা ঠাকুরকে ইলিশ মাছ দিয়ে ভোগ দেন। কনকাঞ্জলি দিয়ে বরণ করে সিঁদুরখেলায় মেতে ওঠেন বাড়ির মহিলারা।

রাহী হালদার

Durga Puja 2024: ইটাহারের এই দুর্গাপুজোয় ভোগ রান্না হয় বিনা তেল, নুন আর হলুদে

উত্তর দিনাজপুর: আগের মতো আর জমিদারি প্রথা নেই, কিন্তু এখনও পুরনো প্রথায় ইটাহার চূড়ামন রাজবাড়িতে আরাধনা হয় দেবী দুর্গার। জমিদার মোহিনীমোহন রায়চৌধুরীর বংশধরেরা আজও পুজোর চারটি দিন নিয়ম-নিষ্ঠা মেনে  পুজো করে থাকেন।

মহানন্দার গ্রাসে জমিদার বাড়ির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে সেই একই জায়গায় নতুন করে বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করেন জমিদারের বংশধরেরা । জানা যায়, এই জমিদার বাড়িতে ষষ্ঠী থেকে মাকে আহ্বান করা হয়, গ্রামের মহিলারা মাকে বরণ করে নেন । আগে যদিও জোড়া মোষ ও পাঁঠা বলির মাধ্যমে দেবীর বোধন হত মহালয়াতে । পরবর্তীতে এই রীতি বন্ধ হয়ে যায়। তবে এখনও প্রাচীন কিছু রীতি মেনে পুজো হয়। এর মধ্যে একটি হল, এখানে মায়ের পুজোর সমস্ত ভোগ বিনা তেল, নুন ও হলুদে তৈরি করা হয়। তেলের পরিবর্তে ভোগ রান্না হয় গাওয়া ঘি ও সন্দক নুন দিয়ে।

এই জমিদার বাড়িতে মাকে অন্ন ভোগ দেওয়া হয় না। পুজোর চার দিনই মাকে লুচি, বিভিন্ন ধরনের সবজি, শাক ভাজা, পাপড় ও বাড়িতে তৈরি নারকেলের নাড়ু ভোগে দেওয়া হয়। দশমীর দিন ভোগ দেওয়া হয় নাড়ু, ক্ষীর, দই।

পিয়া গুপ্তা

Durga Puja 2024: কনকাঞ্জলিও দেন পুরুষরা! এই বনেদি বাড়িতে ৪০০ বছরের দুর্গাপুজো হয় পটচিত্রে

রাহী হালদার, হুগলি: চুঁচুড়ার পালবাড়ির দুর্গাপুজো পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম বনেদি বাড়ির পুুজোগুলির মধ্যে অন্যতম। হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত এই ঐতিহ্যবাহী বাড়ির দুর্গাপূজার বয়স প্রায় ৪০০ বছরের কাছাকাছি। তবে অন্যান্য বনেদি বাড়ির মতো এখানে মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে মায়ের পুজো করা হয় না। বরং, পালবাড়ির এই পুজোতে পটচিত্রের মাধ্যমে মা দুর্গার আরাধনা করা হয়, যা বাংলার সংস্কৃতির এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে এখনও পালিত হয়ে আসছে।

পালবাড়ির কুলদেবতা হলেন রাধামাধব গোপাল জীউ। এই দেবতা এবং দেবমূর্তি পালবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন বংশের পূর্বপুরুষ সেবক রামপালের সময়ে। কিংবদন্তি অনুযায়ী, কোনও এক সাধু সেবক রামপালকে কুলদেবতা হিসেবে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি উপহার দেন। তবে সেবক রামপালের তৎকালীন আর্থিক সংকটের কারণে তিনি এই দেবমূর্তিগুলি ঘরে বন্দি করে রাখেন। পরে একদিন স্বপ্নাদেশে তাকে কুলদেবতার পুজো করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর থেকেই রাধাকৃষ্ণের পুজো শুরু হয় এবং সেবক রামপাল ধীরে ধীরে বিপুল ধন-সম্পদের অধিকারী হন। সেই সময় থেকেই পালবাড়িতে দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু অন্যান্য বনেদি বাড়ির পূজার মতো এখানে কখনোই মূর্তি আনা হয় না। মায়ের পূজা হয় পটচিত্রের মাধ্যমে, যা পাল পরিবারের ঐতিহ্যবাহী আচার।

আরও পড়ুন : ২ বছর বয়সেই মুখস্থ কবিতা থেকে শুরু করে ফুল-ফল-পশুপাখির নাম! তাক লাগাচ্ছে খুদে

পালবাড়ির দুর্গাপুজোর কিছু বিশেষ নিয়মাবলি রয়েছে, যা অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে আজও মেনে চলা হয়। পুজোর দিনগুলোতে পাল পরিবারের সকলে, যেখানেই থাকুন না কেন, একত্রিত হয়ে মায়ের পুজোয় অংশ নেন। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন বাড়ির সমস্ত সদস্য একত্রে খাওয়া-দাওয়া এবং উৎসবে মেতে ওঠেন। এই পুজোর আচার-অনুষ্ঠান বিশেষভাবে পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত হয়। মাকে নৈবেদ্য সাজানো থেকে শুরু করে কনকাঞ্জলি দেওয়া এবং পুজোর শেষ আচার-বিসর্জন পর্যন্ত সবকিছুই পাল পরিবারের পুরুষরা করেন। তবে এই বিসর্জন অনন্য, কারণ এখানে মূর্তি নেই, যা বিসর্জন দেওয়া হবে। পুজো শেষে কুলদেবতা রাধামাধব তাঁদের মন্দিরে ফিরে যান এবং পটচিত্রটি পুজোর সমাপ্তির পরে যথাযথভাবে সংরক্ষিত হয়। আজকের দিনে, পালবাড়ির এই পটচিত্রের মাধ্যমে মা দুর্গার পূজা শুধু একটি পুজো নয়, এটি বাংলার প্রাচীন বনেদি পরিবারের সংস্কৃতি, আচার এবং ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন।

Birbhum News: ডাকের সাজে দেবী,নাড়ুর হরিলুঠ…আভিজাত্যে মোড়া প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন সুরুলের পুজো

বীরভূম: সুরুলের জমিদারবাড়িতে নিরিবিলি পরিবেশে সাবেক রীতি মেনে আজও চলে উমার আরাধনা। শামিল হন বহু মানুষ। বর্তমানে ঝাঁ চকচকে পুজোর মাঝে এই পুজো যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। পাঁচ খিলানের ঠাকুরদালান, সামনে থামযুক্ত নাটমন্দির, নানারঙের কাঁচের ফানুস আর বেলজিয়াম কাঁচের ঝাড়বাতি মনে করিয়ে দেয় সাবেকি ঐতিহ্য আর রাজকীয় জৌলুসের কথা।

সময়ের সঙ্গেসঙ্গে গ্রাম বাংলার বহু পুজোকে আধুনিকতা গ্রাস করলেও বীরভূম সুরুলের সরকার বাড়ির পুজোর পরিবর্তন হয়নি। দীর্ঘ ২৮৮ বছর ধরে একইভাবে পূজিত হচ্ছেন উমা। আজও পুজোয় মিশে মাটির গন্ধ, শিকড়ের টান আর আভিজাত্য। এখনও ডাকের সাজে সাজানো হয় সাবেকি প্রতিমা।পরানো হয় সোনা ও রূপোর গয়না। প্রতিমার রং তপ্তকাঞ্চন। চালচিত্রে আঁকা থাকে শিব ও দুর্গার বিয়ের দৃশ্য। প্রতিমার সাবেকি রূপ আজও অপরিবর্তিত রয়েছে।

অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বর্ধমানের নীলপুরের ঘোষবাড়ির ছেলে ভরতচন্দ্র সস্ত্রীক চলে আসেন সুরুলে। তাঁর গুরু বাসুদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে। সুরুল ছিল বৈষ্ণব ধর্মগুরুর শ্রীপাট।ভরতচন্দ্র গুরুদেবের শ্রীপাট ছেড়ে আর ফিরে যাননি বর্ধমানে। তাঁর পুত্র কৃষ্ণহরি ও তাঁর ছেলেরা সেই সময় ফরাসি ও ইংরেজ কুঠিয়ালদের সঙ্গে ব্যবসা করে পরিবারের শ্রীবৃদ্ধি করেন। সুরুল রাজবাড়ির সঙ্গে ঠাকুর বাড়ির সম্পর্ক ছিল বেশ নিবিড়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই সরকার বাড়ি গিয়ে বেশ কিছুদিন সময় কাটিয়েছেন। এছাড়াও মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে বেশ কিছু জমি রাজপরিবার তরফ থেকে প্রদান করা হয়।

বহু জমিদারবাড়ির পুজোর ঠাঁটবাট আজ ফিঁকে! ব্যতিক্রম সুরুল সরকার বাড়ি। অর্থ বা পারিবারিক সমস্যা কোনও দিন পুজোয় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি।এখনও সপ্তমীর সকালে পালকি, নহবত আর জমিদারী মাধুর্য্যে ঘট ভরতে যায় সুরুলের দুই তরফের পুজো উদ্যোক্তারা। ফিরে এসে নাড়ুর হরিলুঠ হয়, আনন্দে মেতে ওঠেন সকলে।

সৌভিক রায়

Traditional Durga Puja: সন্ধিক্ষণের মহাপুজোয় শূন্যে চালানো হয় গুলি, ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা আজও বহমান বুদবুদের বিশ্বাসবাড়িতে

বুদবুদ, পশ্চিম বর্ধমান : সেই প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে এখনও দেবীর পুজো হয় এখানে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে একইভাবে রূপদান হয় মৃন্ময়ী মূর্তির। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এই পুজো ৩০০ বছরের বেশি পুরানো। এখনও পর্যন্ত বহু পুরানো সেই ঠাকুরদালানে দেবীর আগমন হয়। বিশাল ঠাকুর দালানটি আলোয় ঝলমল করে ওঠে।

বর্তমানে এই পুজোর অন্যতম হোতা এবং পরিবারের নবম প্রজন্ম অরুন কুমার বিশ্বাস বলছেন, তাঁদের পূর্বপুরুষ রামমোহন বিশ্বাসের হাত ধরে এই দুর্গাপুজো শুরু হয়। তাঁদের আগের পদবী ছিল গঙ্গোপাধ্যায়, তাঁরা বিশ্বাস উপাধি পেয়েছিলেন। তাঁদের পূর্বপুরুষ ছিলেন মুর্শিদাবাদের নবাব আলিবর্দি খানের খাজাঞ্চি। মুর্শিদাবাদ থেকে চলে আসার পর তিনি এই জায়গায় পুজো শুরু করেন তাঁর গুরুদেবের নির্দেশে।

চারদিন ধরে দুর্গাপুজো উপলক্ষে এখানে বিশাল আয়োজন করা হয়। পরিবারের সদস্যরা অনেকেই এখন বাইরে থাকেন। কিন্তু পুজোর সময় সকলেই ফিরে আসেন। মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষণে এখানে কামান দাগার নিয়ম ছিল। যদিও বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরে কামান দুর্ঘটনার পর থেকে সেই নিয়মে বদল এসেছে। পরিবর্তে সন্ধিক্ষণের মহাপুজোয় শূন্যে গুলি চালানো হয়। জ্বালানো হয় মশাল।

পুজোর ঐতিহ্যের পাশাপাশি বিশ্বাস পরিবারের সদস্যরা এখনও প্রাচীন ঠাকুর দালানটিকে ধরে রেখেছেন আগের মত করে। নিয়মিত সাফ-সাফাই করা হয়। মেরামত করা হয়। পুজোর আগে নতুন রঙে সাজিয়ে তোলা হয় বহু প্রাচীন এই ঠাকুরদালানটি। পুজোর ঐতিহ্যের সঙ্গে পুরনো এই ঠাকুর দালানটিকে টিকিয়ে রাখা পরিবারের সদস্যদের কাছে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ। যদিও সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা তাঁরা সাফল্যের সঙ্গেই করছেন।

নয়ন ঘোষ

Durga Puja 2024: নহবতের সুর ভাসে গ্রামান্তরে, জমিদারবাড়ির পুজো আজ গ্রামবাসীদের স্পর্শে মিলনোৎসব

রঞ্জন চন্দ, পশ্চিম মেদিনীপুর: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। যার মধ্যে অন্যতম দুর্গাপুজো। শুধু ভারত নয়, ভারতের পাশাপাশি প্রবাসেও দেবী দুর্গার আরাধনায় মাতেন সকলে। সেই ছবি ধরা পড়ে বাংলা ওড়িশা সীমান্ত এলাকার ওড়িশার লক্ষ্মণনাথের জমিদারবাড়ির দুর্গাপুজোতেও। পাঁচ দিনে লক্ষাধিক মানুষের ভিড় জমে। দুই রাজ্য শুধু নয়, পাশাপাশি ভিন রাজ্য থেকেও বহু মানুষ আসেন এখানে। বাংলা সীমান্ত থেকে একেবারে কাছেই এই জমিদারবাড়ি। পুজোর পাঁচটি দিন নিষ্ঠা ভরে পুজো হয় এখানে। মেতে ওঠেন লাখো লাখো মানুষ।

বাংলা সীমান্ত পেরিয়ে ওড়িশায় প্রবেশ করেছে সুবর্ণরেখা নদী। নদীর পূর্ব পাড়েই এই জমিদারবাড়ি। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, বেশ পুরনো এই দুর্গাপুজো। তৎকালীন সময়ে বাংলা ও ওড়িশা একসঙ্গে থাকায়  রাজবাড়ির দুর্গাপুজোতে মেতে উঠতেন বাংলা ও ওড়িশার মানুষজন। তবে পরবর্তীতে বাংলা এবং ওড়িশা ভাগ হয়ে যাওয়ার পরেও ভাটা পড়েনি এই আনন্দ উৎসবে। প্রায় দু’মাসের সময় ধরে তৈরি হয় দেবী দুর্গার মৃন্ময়ী প্রতিমা।

বাংলার কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়, খড়গপুর, এমনকি কলকাতা থেকেও বহু মানুষ লক্ষ্মণনাথের পুজো ও মেলা দেখতে ভিড় জমান। এখানকার পুজোয় জড়িয়ে আছে নানা কাহিনি আর কিংবদন্তি। ইতিহাসটা বেশ দীর্ঘ। জানা যাচ্ছে, লক্ষ্মীনারায়ণ রায় বাড়ি তৈরি করেন। গড়ে তোলা হয় ‘অষ্টাদশ শম্ভুর’ মন্দির। আছে অন্নপূর্ণা ও জগন্নাথ দেবের মন্দির। জমিদারবাড়ির কুলদেবী ছিলেন শ্যামাসুন্দরী। এখনও দুবেলা পুজো হয়। প্রজারঞ্জনের জন্য শুরু হয় দেবী দুর্গার পুজো।

আরও পড়ুন :  ৪০০ টি স্লেটের উপর শিল্পীর হাতের তক্ষণে বিকশিত শত দুর্গা

এখনও সুদৃশ্য জমিদার বাড়ি, মণ্ডপ, নহবতখানা সবই আছে। জমিদারবাড়ির একছত্র পুজো আজ গ্রামবাসীদের বেশিরভাগ সহযোগিতায় সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। এই পুজো উৎকল-বঙ্গের মৈত্রী উৎসবে পরিণত হয়। পুজোর দিনগুলিতে বসে বিরাট মেলা। বাজে নহবত। প্রতিমা হয় উনিশ ফুটের। জানা যায়, নবমীতে বিশেষ উপাচার সাজানো হয়। দুই ক্যুইন্টাল নৈবেদ্য তথা আতপ চাল-সহ বিভিন্ন ফল প্রসাদ হিসেবে দেবীকে দেওয়া হয়। দশমীতে দেবীর বিসর্জনের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য তলোয়ার। তিনশো বছরেরও বেশি পুরানো এই পুজো।

Durga Puja 2024: রুপোর পাখায় বাতাস, রুপোর সম্মার্জনীতে ধুলো পরিষ্কার, ৩০০ বছরের সাবেক পুজোয় আজও উড়ে যায় নীলকণ্ঠ

সুমন সাহা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: রুপোর পাখায় বাতাস, রুপোর ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা সাফ, তাছাড়াও দশমীতে উড়ে যায় নীলকণ্ঠ পাখি বারুইপুর জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোতে। জমিদারি না থাকলেও, কোনও অংশে বনেদিয়ানাতে খামতি নেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজোয় ।জেলার অন্যতম পুরনো পুজো এটি। বয়স ৩০০ বছরের বেশি। ব্রিটিশ শাসক লর্ড কর্নওয়ালিশের আমলে জমিদারির পত্তন হয় রায়চৌধুরীদের। সেই থেকেই শুরু হওয়া দুর্গাপুজো নিজস্ব জৌলুস নিয়ে আজও অমলিন।

সরকারিভাবে নীলকণ্ঠ পাখি ধরা ও বিজয়া দশমীতে তা ওড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, আজও এটাই প্রধান বিশেষত্ব এই বনেদি বাড়ির পুজোর। প্রতি বছর দশমীতেই প্রতিমা বিসর্জন হয়। রায়চৌধুরী বাড়ির প্রতিমা বিসর্জন হওয়ার পর এলাকার বাকি প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।

আরও পড়ুন : বিজয়া দশমীতে চকোলেট বিতরণ! জেনে নিন কোন ঠাকুরদালানে অপেক্ষা করে থাকে এই চমক

রুপোর পাখা দিয়ে দেবীকে হাওয়া দিতে-দিতে এবং রুপোর ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিস্কার করতে-করতে প্রতিমাকে বিসর্জন করতে নিয়ে যাওয়া হয়।দশমীতে  নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ালে, সে গিয়ে কৈলাসে শিবকে খবর দেবে দেবী দুর্গা মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসের দিকে রওনা দিয়েছেন। এই বিশ্বাস থেকে আজও বিসর্জনের পর বারুইপুরের আদি গঙ্গার সদাব্রত ঘাট থেকে নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে আসছে রায়চৌধুরীরা।

তার রীতি ঐতিহ্য কোনওদিন নষ্ট হয়নি। এ বিষয়ে রায়চৌধুরী পরিবারের অমিয় রায়চৌধুরী বলেন এই রীতিনীতি তিনশো বছরের বেশি পদার্পণ করেছে। এ বারও দেবীর আগমনে একটুও খামতি থাকবে না।

Durga Puja 2024: জড়িয়ে আছে ১০০০ বছরের ইতিহাস, বীরভূমে মল্লরাজাদের দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য এর প্রাচীনত্বে

বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজ পরিবারের ১০২৭ বছরের কূলদেবী মৃন্ময়ী
বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজ পরিবারের ১০২৭ বছরের কূলদেবী মৃন্ময়ী
গোটা পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম দুর্গাপুজো গুলোর মধ্যে অন্যতম, বিরাট ইতিহাস।
গোটা পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম দুর্গাপুজো র মধ্যে অন্যতম, বিরাট ইতিহাস
৯৯৭ খ্রীষ্টাব্দের আগে ছোট এলাকায় বিস্তৃত ছিল মল্ল রাজত্ব। রাজধানী ছিল জয়পুরের প্রদ্যুম্নপুর এলাকায়।
৯৯৭ খ্রীষ্টাব্দের আগে ছোট এলাকায় বিস্তৃত ছিল মল্ল রাজত্ব। রাজধানী ছিল জয়পুরের প্রদ্যুম্নপুর এলাকায়।
বিষ্ণুপুরের রাজপরিবারের মৃন্ময়ীয় পুজো হয় একটি প্রাচীন বিশেষ পুঁথি অনুসারে। বলিনারায়নি নামের সেই পুঁথির নিয়ম নীতি মেনে
বিষ্ণুপুরের রাজপরিবারের মৃন্ময়ীয় পুজো হয় একটি প্রাচীন বিশেষ পুঁথি অনুসারে। বলিনারায়নি নামের সেই পুঁথির নিয়ম নীতি মেনে
সময়ের সাথে সাথে মল্ল রাজারা রাজ্যপাট হারিয়েছে। ধুলোয় মিশে গেছে বিশাল রাজপ্রাসাদ।
সময়ের  সঙ্গে মল্ল রাজারা রাজ্যপাট হারিয়েছে। ধুলোয় মিশে গেছে বিশাল রাজপ্রাসাদ।
পুজোর বোধনের ১৫ দিন আগে থেকেই উদযাপনে মেতে ওঠেন প্রাচীন মল্লভূমের আপামর মানুষ।
পুজোর বোধনের ১৫ দিন আগে থেকেই উদযাপনে মেতে ওঠেন প্রাচীন মল্লভূমের আপামর মানুষ।

Durga Puja 2024: কোচবিহারে শক্তিদণ্ডের আরাধনায় শুরু ৫০০ বছরের প্রাচীন দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি

রাজ ঐতিহ্য কোচবিহারের মহারাজার স্বপ্নাদেশে পাওয়া প্রায় ৫০০ বছরের বেশি পুরনো বড় দেবীর পুজো। আর এই পুজোর শক্তিদন্ড হিসেবে ব্যবহার হওয়া ময়না কাঠ পৌঁছালো দেবী বাড়িতে।
রাজ ঐতিহ্য কোচবিহারের মহারাজার স্বপ্নাদেশে পাওয়া প্রায় ৫০০ বছরের বেশি পুরনো বড় দেবীর পুজো। আর এই পুজোর শক্তিদন্ড হিসেবে ব্যবহার হওয়া ময়না কাঠ পৌঁছালো দেবী বাড়িতে।
কোচবিহার মহারাজা, স্বপ্নাদেশে ময়না কাঠের মাধ্যমে শক্তি দণ্ড নির্মাণের নির্দেশ পান। তারপর থেকেই প্রতিবছর ময়না কাঠকে শক্তি দন্ড হিসেবে পুজো করে মূর্তি নির্মাণ শুরু হয় বড় দেবীর মন্দিরের মধ্যে।
কোচবিহার মহারাজা, স্বপ্নাদেশে ময়না কাঠের মাধ্যমে শক্তি দণ্ড নির্মাণের নির্দেশ পান। তারপর থেকেই প্রতিবছর ময়না কাঠকে শক্তি দন্ড হিসেবে পুজো করে মূর্তি নির্মাণ শুরু হয় বড় দেবীর মন্দিরের মধ্যে।
একমাস আগে এই ময়না কাঠের প্রথম পুজো হয়েছিল ডাঙর আই মন্দিরে। পুজোর পর সেখান থেকে ময়না কাঠ চলে যায় মদনমোহন বাড়িতে। এদিন মদনমোহন বাড়ি থেকে সেই কাঠ দেবী বাড়ির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা হয়।
একমাস আগে এই ময়না কাঠের প্রথম পুজো হয়েছিল ডাঙর আই মন্দিরে। পুজোর পর সেখান থেকে ময়না কাঠ চলে যায় মদনমোহন বাড়িতে। এদিন মদনমোহন বাড়ি থেকে সেই কাঠ দেবী বাড়ির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা হয়।
এদিন এক বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল বড় দেবীর মন্দিরে। রাজ পুরোহিত দিনেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এই পুজোর দায়িত্ব পালন করেন। তারপর ময়না কাঠ স্নান করিয়ে তা প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
এদিন এক বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল বড় দেবীর মন্দিরে। রাজ পুরোহিত দিনেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এই পুজোর দায়িত্ব পালন করেন। তারপর ময়না কাঠ স্নান করিয়ে তা প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
এই পুজোর পর তিনদিন শক্তিদন্ড সেখানে হাওয়া খাবে। এরপর চিত্রকর শুরু করবে প্রতিমা নির্মাণের কাজ। প্রতিদিন হবে নিত্যপুজো। এদিনের পুজোর বিশেষ আচার অনুষ্ঠান হিসেবে ছিল বলি ও পরমান্য ভোগ।
এই পুজোর পর তিনদিন শক্তিদন্ড সেখানে হাওয়া খাবে। এরপর চিত্রকর শুরু করবে প্রতিমা নির্মাণের কাজ। প্রতিদিন হবে নিত্যপুজো।

Durga Puja 2024: গ্রামে ঢোকার মুখে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা, বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির ঠাকুরদালানে তুঙ্গে সাবেকি পুজোর প্রস্তুতি

নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঁকুড়া: আড়াইশো বছরের প্রাচীন বনেদি পুজো। ভক্তি ভরে রীতিনীতি মেনে গোটা গ্রাম এবং অঞ্চলকে এক জোট করেই দুর্গাপুজো হয়ে আসছে প্রায় আড়াইশো বছর ধরে। বাঁকুড়া শহরের খুব কাছে। বাঁকুড়া শহরের সানবাঁধা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ভূতশহর গ্রাম। রানী অহল্যাবাই রোডের পাশেই অবস্থিত এই গ্রামটি।

এই গ্রামে বহু বছর ধরে হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী মা সংকট তারিণীর মেলা এবং বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজো। গ্রামে প্রবেশ করার আগেই কাশফুল জানান দিচ্ছে দুর্গা পুজো এসে গেছে। গ্রামে ঢুকেই চোখে পড়বে দুর্গামেলা হঠাৎ দুর্গামন্দির, বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গামন্দির। এই অঞ্চলের অন্যতম জনপ্রিয় বনেদি পুজো গুলোর মধ্যে একটি।বন্দ্যোপাধ্যায়দের জমিদারি ছিল বাঁকুড়া জেলার প্রাগৈতিহাসিক ভূখণ্ড শুশুনিয়া পাহাড় সংলগ্ন শুশুনিয়ার হেল্লায়।

আড়াইশো বছর আগে দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় চলে আসেন বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন ভূত শহর গ্রামে। কথিত আছে শুশুনিয়াতে ঘণ্টা বাজার পর পুজো শুরু হত ভূতশহরে। তখন থেকেই পূজিত হয়ে আসছেন মা দুর্গা। এই পুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের উৎসাহ থাকে চোখে পড়ার মতো এবং পুজোর চারটি দিন কেটে যায় হইহই করতে করতে। একদম নিয়ম মেনে পূজিত হন মা দুর্গা। ষষ্ঠীর দিন নদী থেকে কলাবউ নিয়ে এসে বিল্ববরণ করা হয়। তারপর মন্দিরে প্রবেশ করেন মা। অষ্টমীতে পুষ্পাঞ্জলি, মহানবমী এবং দশমীর দিন বিসর্জন।

আরও পড়ুন : বিজয়া দশমীতে চকোলেট বিতরণ! জেনে নিন কোন ঠাকুরদালানে অপেক্ষা করে থাকে এই চমক

দুর্গাপুজো উপলক্ষ করে একত্রিত হয় গোটা গ্রাম এবং সকল পরিবার। প্রত্যেকেই ফিরে আসেন মাটির টানে এবং মায়ের ডাকে। তাই পুজোর সময় অহল্যাবাই রোড ধরে যদি কোথাও যান তাহলে একবার ঢুঁ মেরে দেখতেই পারেন বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজো।