হদল নারায়ণপুর 

Durga Puja 2024: পুজো আসছে, জলদস্যুদের সঙ্গে লড়াই করে তৈরি জমিদারবাড়ির দরদালানে ধুলো ঝেড়ে টাঙানো হয় বেলজিয়াম গ্লাসের ঝাড়বাতি

নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঁকুড়া : সাড়ে ৩০০ বছরের প্রাচীন জমিদার বাড়ি, মুচিরাম ঘোষ থেকে মণ্ডল জমিদার হওয়ার ইতিহাস, রয়েছে দামু-কামুর জলদস্যুদের সঙ্গে যুদ্ধের কাহিনি, সবকিছুই জড়িয়ে রয়েছে নারায়ণপুরে জমিদার বাড়ির ৩০০ বছরের ইতিহাসের সঙ্গে। আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে বর্ধমানের নীলপুর (তৎকালীন গ্রাম) থেকে ভাগ্যের খোঁজে বেরিয়ে ছিলেন মুচিরাম ঘোষ। ঘুরতে ঘুরতে বাঁকুড়া জেলা পাত্রসায়ের থানার নারায়ণপুর বোদাই নদীর তীরে এসে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেখানেই শুরু করেন বসতি। সাক্ষাৎ হয় সেখানকার বিশিষ্ট গণিত আচার্য শুভঙ্কর রায়ের সঙ্গে। তখন মল্ল রাজাদের রাজত্বকাল মল্ল রাজা ছিল গোপাল সিংহ। একদিন মুচিরাম ঘোষ শুভঙ্কর রায়ের সঙ্গে গিয়ে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের সান্নিধ্য লাভ করেন।

মুচিরাম ঘোষের ব্যবহারে এবং তার কার্যকলাপে খুশি হন মল্ল রাজা গোপাল সিংহ । মল্ল রাজাদের দাক্ষিণ্যেই দামোদরের উপনদী বোদাই এর তীরে বিশাল এলাকার জমিদারি লাভ করেন তিনি। বাঁকুড়ার হদল ও নারায়াণপুর গ্রামের মাঝে বিশাল জমিদারবাড়ির প্রাসাদ তৈরি হয়। আরও পরে ব্রিটিশদের কাছ থেকে ওই এলাকার মোট ৭ টি নীলকুঠী ইজারা নিয়ে নেন মণ্ডলরা। কথিত, সে সময় বোদাই নদীতে নীল বোঝাই করা বজরা ভাসিয়ে দূর দুরান্তে তা রফতানি করতেন মণ্ডলরা। সে সময় নীল বিক্রি করে প্রচুর ধন সম্পদ নিয়ে বজরায় করে গ্রামে ফেরার সময় কোনও এক জায়গায় জলদস্যুদের কবলে পড়েছিলেন মণ্ডল বাড়ির কোনও এক পূর্বপুরুষ।

সেই সময় ওই জমিদারের সঙ্গে ছিলেন দুই লাঠিয়াল দামু ও কামু। হঠাৎ করেই জমিদারের বজরায় হানা দেয় জলদস্যুরা। সব কিছু লুঠহয়ে যাওয়ার ভয়ে অসহায় হয়ে পড়েছিলেন জমিদার। তখন জলদস্যুদের সঙ্গে নিজেদের জীবন বাজিয়ে রেখে লড়াই করেছিলেন দামু ও কামু। জমিদার ফিরে পেয়েছিলেন তাঁর সমস্ত হৃত সম্পত্তি, ফিরে পেয়েছিলেন প্রাণ। জলদস্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরলে বজরায় থাকা যাবতীয় সম্পত্তি দেবী দুর্গার নামে দেবত্র করে দেওয়ার মানত করেন তিনি। পরে তিনি সুস্থ ভাবে ফিরে এলে ওই বজরায় থাকা সমস্ত ধনসম্পদ দিয়ে বিশাল দুর্গাদালান, রাসমঞ্চ, রথমন্দির, নাটমন্দির, নহবতখানা তৈরি করেন।

আরও পড়ুন : আজ মহালয়ায় অমাবস্যা তিথি কত ক্ষণ আছে? সূর্যগ্রহণ কখন? গ্রহণ চলবে ক’টা পর্যন্ত? জানুন

এক দিকে নীলকুঠির বিপুল আয়, অন্যদিকে বিশাল জমিদারির খাজনায় ফুলে ফেঁপে ওঠে রাজকোষ। তৎকালীন দুর্গামন্দির-সহ সমস্ত মন্দির সাজানো হত বেলজিয়াম গ্লাসের বিশাল বিশাল সেজের ঝাড়বাতিতে। বসত পুতুল নাচের আসর, হত যাত্রাপালা। নির্ঘণ্ট ঘোষিত হত তোপধ্বনির দ্বারা। দূর দূরান্তের মানুষ ও প্রজারা হাজির হতেন জমিদারবাড়িতে। আজ আর সেই নীল কুঠিও নেই, নেই জমিদারিও। তবুও রয়েছে বিশাল দেবত্র এস্টেট। তাঁদের ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজোয় আয়োজনের ত্রুটি রাখেন না মণ্ডল বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম। ভাঁড়ার থেকে পুরানো দিনের সেই ঝাড়বাতি বার করে তার ধুলো ঝেড়ে টাঙানো হয় দরদালানের বিভিন্ন প্রান্তে। দেশ বিদেশে ছড়িয়ে থাকা পরিবারের সদস্যরা আজও ছুটে আসেন শুধু ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখার লোভে।

দুর্গা পুজো ২০২৪, ফিচার , পুজো 360, পুজো ইন্টিরিয়র, পুজোর রেসিপি, দুর্গা পুজোর ভ্রমণ, বনেদি বাড়ির পুজো, জেলার পুজো, অন্য পুজো