হুগলি: দুর্গাপুজোর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে যে বাদ্যযন্ত্র তার নাম ঢাক। ঢাকে কাঠি পড়লেই মন শারদীয়ার আনন্দে কেমন যেন মেতে ওঠে। পুজোয় ঢাকের আওয়াজ শুনে ঘুম ভাঙ্গা থেকে একসঙ্গে ঢাকের তালে ধুনুচি নাচ সব জায়গাতেই ঢাকের বোল যেন মনে ভালো করে দেয়। দুর্গা পুজো উপলক্ষে কোন্নগরে আয়োজিত হয়েছিল ঢাকের কম্পিটিশন। বিভিন্ন জায়গা থেকে বাধ্যকররা। এখানেই দেখা মিলেছিল এমন একজনের যার ঢাক বাজানো দেখলে বিখ্যাত শিবমনির কথা মনে পড়ে যায়।
আরও পড়ুন- সবুজ এই শাক ‘পাওয়ার হাউজ’! খেলেই কমে মানসিক চাপ, হৃদরোগ, সুগার নেমে যাবে নিমেষে!
একেবারে ঢাকের তালকে তিনি ভেঙে বাজাচ্ছেন নিজের মতন করে যা শুনে হাততালি ও প্রশংসার ফোয়ারা ছোটাচ্ছিলেন দর্শকরা। ঠিক যেমন বিখ্যাত সঙ্গীতকার হরিহরণের ড্রামস বাদ্যকর শিবমনি। তবে আরও বেশি আশ্চর্যের বিষয় এত অভূতপূর্ব জিনিস ঢাক বাজাচ্ছেন তিনি নাকি ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী! বছর একাত্তরের জগন্নাথ ঘোষ। তাঁর ঢাকের তালে কোমর দোলাচ্ছে কোন্নগরের মানুষরা। শুধু কোমর দোলানো নয় তাঁর ঢাক বাজানোর প্রতিভা সবার থেকে আলাদা।
ছোট বয়স থেকেই ঢাক বাজানো শুরু তাঁর। ছোটোবেলায় হিন্দমোটরের একটি শনি কালী মন্দিরে প্রতিদিন ঢাক বাজাতেন, মন্দির কর্তৃপক্ষ তার ঢাক বাজানোর প্রতিভা দেখে তাকে একটি ঢাক কিনে দেন। বয়স ছিল তখন তার মাত্র ১৫ বছর। জন্মগত কিন্তু আবার ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী ছিলেন না জগন্নাথ। বয়স যখন তার ৩৩ বছর সেই সময় ট্রেন এক্সিডেন্টে বাদ পড়ে তার দুই পা। তারপর থেকে তার অবলম্বন হুইলচেয়ার। তবে প্রতিবন্ধকতাও আটকে রাখতে পারিনি জগন্নাথ কে। ঢাক বাজানোর প্রতি ভালোবাসা তিনি আবারওফিরে চান ঢাক বাজাতে।
বর্তমানে একটি প্রতিবন্ধী গাড়িতে ছোটদের স্কুলের সামনে বাদাম, হজমি, ডালমুড এইসব বিক্রি করেন। আর পুজোর দিনের ঢাক বাজান। তার ঢাক বাজানোর জন্য ডাকও আসে বহু দূর দূরান্ত থেকে। একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন জগন্নাথ ঘোষ ঢাক বাজিয়ে। বছর একাত্তরের ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী লোকটার হাতে যখন ঢাকের কাঠি এসে পড়ে তখন তার ঢাকের তালে কোমর দোলায় সামনে দাঁড়ানো সমস্ত মানুষ। নিজে একা নড়াচড়া না করতে পারলেও তা ঢাকের তালে নাচতে থাকেন সকল মানুষ। প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে আবারো কিভাবে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে যায় তার উদাহরণ তৈরি করেছেন ঢাক বদ্যকর জগন্নাথ ঘোষ।
রাহী হালদার