ব্যায়ামবিদ শ্যামসুন্দর গোস্বামী

Yoga Guru: বিশ্বের দরবারে ভারতীয় যোগ চর্চা তুলেছিলেন শান্তিপুরের এই ‌যোগাচার্য, চেনেন এঁকে

শান্তিপুর: জানেন কি ভারতীয় হিসেবে নদিয়ার শান্তিপুরের শ্যামসুন্দর গোস্বামী আমেরিকা গিয়েছিলেন বিশ্বের দরবারে ভারতীয় যোগ চর্চা তুলে ধরতে। শান্তিপুরের ব্যায়ামবিদ যোগাচার্য্য শ্যামসুন্দর গোস্বামী স্বামী বিবেকানন্দের পরবর্তী  দ্বিতীয় ভারতীয়, যিনি বিশ্বের দরবারে ভারত সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছিলেন।

১৮৯১ খ্রীষ্টাব্দের ১১ অক্টোবর শ্যামসুন্দর গোস্বামী শান্তিপুরে জন্মগ্রহণ করেন। শান্তিপুরেই তিনি পড়াশোনা করেন।ছোটবেলায় তিনি রোগা ও দূর্বল ছিলেন। এজন্য তিনি যোগব্যায়াম চর্চা শুরু করেন মনোযোগ দিয়ে। এ ব্যাপারে যোগবিশারদ বালক ভারতী তাঁকে খুবই সাহায্য করেন। ক্রমেই শ্যামসুন্দর যোগব্যায়ামে পারদর্শী হয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে যোগব্যায়াম প্রদর্শন করতে থাকেন ও যোগবিষয়ে বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণ পেতে থাকেন। বহু প্রখ্যাত ও বিশিষ্ট ব্যাক্তি তাঁর কাছ থেকে যোগবিদ্যা শিখতে থাকেন। প্রায় সমস্ত ভারত পরিভ্রমন করে তিনি নেপাল যান।

নেপালের রাজা শ্যামসুন্দরের যোগব্যায়ামে মুগ্ধ হয়ে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। এটাই বিদেশের মাটিতে শ্যামসুন্দরের প্রথম ভারতীয় যোগব্যায়ামের প্রসার। এরপর ১৯৩৯ খ্রীস্টাব্দে আমেরিকায় পিটসবার্গ শহরে আন্তর্জাতিক যোগসন্মেলনে আমন্ত্রন পান। এখানে তাঁর বক্তব্য খ্যাতিলাভ করে।এখান থেকে তিনি নিউইয়র্কে বিশ্বযোগমেলায় যোগপ্রদর্শন করেন। এখান থেকে তিনি জাপানের সম্রাটের আমন্ত্রন পেয়ে জাপান যান। তারপর তুরস্কের রাজার আমন্ত্রণ পেয়ে তুরস্কে ভারতীয় যোগব্যয়ামের শিক্ষা দিতে থাকেন। এই সময়ে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে ১৯৪৮ সালে তিনি গঠন করেন ভারতীয় শারীর শিক্ষা কংগ্রেস।

আরও পড়ুন – SA in T20 WC Final: আফগানিস্তানের স্বপ্নভঙ্গ, ইতিহাস দক্ষিণ আফ্রিকার, ফাইনালে প্রোটিয়া বাহিনী, কে হবে প্রতিপক্ষ, অপেক্ষা

১৯৪৯ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে পৃথিবীর বৃহত্তম শারীর শিক্ষা মেলা লিংগিয়াডে শ্যামসুন্দর গোস্বামী তাঁর প্রিয় শিয্য শান্তিপুরেরই দীনবন্ধু প্রামানিক নিয়ে অংশগ্রহন করেন।এখানে অন্যদেশের প্রতিনিধিদের তুলনায় শ্যামসুন্দরকে অল্পসময় বক্তৃতা দিতে দেওয়া হয়। তিনি অল্প সময়ই বক্তৃতা দেন। কিন্তু শ্রোতারা শ্যামসুন্দরের বক্তব্য আরও বেশী সময় শোনার জন্য দাবী করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ শ্যামসুন্দরের জন্য বেশী সময় ধরে বক্তৃতা দেওয়ার দিন ধার্য্য করতে বাধ্য হন।সেই দিনের বক্তব্যে মোহিত হয়ে সন্মেলন কর্তৃপক্ষ শ্যামসুন্দর ও দীনবন্ধুকে ভূয়সী প্রশংসা করে চিঠি দিয়ে ধন্যবাদ জানান। এই ঘটনার সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের সিকাগো বক্তৃতার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। শ্যামসুন্দর গোস্বামী ভারতীয় যোগব্যায়ামকে দেশে ও বিদেশে যে ভাবে তুলে ধরেছিলেন তা আজও দেশের লোক সে ভাবে জানে না আজকের প্রচার সর্বস্ব যোগগুরুরা খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করছেন। মাত্র দু চারটি বই শ্যামসুন্দরকে নিয়ে লেখা হয়েছে মাত্র। তবে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলি এখনও কয়েকটি চলমান। তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্টকহোমের বিদ্যালয়েই তিনি স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে থাকেন। ঐখানেই ১৯৭৮ এর ১৪ অক্টোবর শ্যামসুন্দর গোস্বামীর জীবনাবসান হয়।

শান্তিপুর কলেজ বাসস্টপেজে শ্যামসুন্দরের দেহ সৌষ্ঠব প্রদর্শনের একটি ছবি দেখা যায়। অতি সম্প্রতি শান্তিপুর পাবলিক লাইব্রেরির সীমানা প্রাচীরে ‘শান্তিপুর দর্পন\” এ শ্যামসুন্দর গোস্বামীর ছবি আঁকা হয়েছে।শান্তিপুর মতিগঞ্জ মোড় থেকে রামনগর মাঠ যেতে বাঁ দিকে শ্যামসুন্দর গোস্বামীর বাড়ী আছে। তাঁর বংশধরেরাও শরীর চর্চা করেন। শ্যামসুন্দর গোস্বামীর বর্তমান প্রজন্ম অরবিন্দ সুন্দর গোস্বামী একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শারীর শিক্ষার শিক্ষক। সংঘের ছবি দুটি তাঁরই অনুৃমতি সাপেক্ষে তোলা। এবারে ও সে সময়কার বিভিন্ন ছবির সঙ্গে তার শরীরচর্চার বিভিন্ন আকারের সুবিশাল পাথর, পাঠাতন এবং তার লেখা ইংরেজি ও বাংলায় বই দেশে-বিদেশের নানা ছবি আজও বর্তমান। তিনি ছিলেন অবিবাহিত তাই তার কোন বংশ ধর না থাকলেও শ্যামসুন্দর গোস্বামীর অন্য দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাইয়ের পপৌত্র অরবিন্দ সুন্দর গোস্বামী শোনালেন এইরকমই নানান কাহিনী দেখালেন সে সময়ের নানান ছবি তার লেখা বিভিন্ন বই পত্র এবং তার ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসপত্র।

Mainak Debnath