হাঁটছেন যুবক

Around the World in 12 years on Foot: পিঠে ব্যাগ, হাতে লাঠি, পায়ে সাধারণ চটি…১২ বছরে বিশ্বভ্রমণের লক্ষ্যে তীব্র গরমেও অবিচল বাংলাদেশি যুবক

রুদ্রনারায়ণ রায়, উত্তর ২৪ পরগনা: গরমে তাপমাত্রা যখন ৪০ ছুঁইছুঁই, সেই সময় পায়ে হেঁটে গোটা বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়েছেন ২৮ বছর বয়সি বাংলাদেশি যুবক সইফুল ইসলাম শান্ত। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ হয়ে ভারতে এসেছেন তিনি। দুপুর রোদে যশোর রোড ধরে হাঁটছেন তিনি। অবাক লাগলেও, নিজের লক্ষ্যে অবিচল এই তরুণ। গোটা দেশ ভ্রমণে তাঁর আনুমানিক সময় লাগবে প্রায় ১২ বছরেরও অধিক। এই দীর্ঘ সময় নিজের পায়ে হেঁটেই গোটা বিশ্ব ভ্রমণের পাশাপাশি বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাতে ও পরিবেশ রক্ষার বার্তা ছড়িয়ে দিতেই এই অভিনব সিদ্ধান্ত তাঁর।

২২ শে মার্চ বাংলাদেশের ঢাকার সংসদ ভবন থেকে যাত্রা শুরু করেছেন সইফুল। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বর্তমানে ভারত অতিক্রম করছেন তিনি। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল এই পায়ে হেঁটে বিশ্ব ভ্রমণ করা যুবকের কথা। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলা সদরের বাসিন্দা সইফুল ইসলাম শান্ত। আগ্রহের জন্যই ঢাকার কলেজ থেকে ভূগোল ও পরিবেশ নিয়ে পড়াশোনা তাঁর। শান্ত এর আগে ২০২২ সালে ৭৫ দিনে হেঁটে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেন। এছাড়াও ৬৪ দিনে ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার হেঁটে বাংলাদেশ থেকে ভারত (ঢাকা, সান্দাকফু, দার্জিলিং) ভ্রমণ করেন। বর্তমানে ১৯৩ টি দেশ ভ্রমণ করার উদ্দেশ্যে হাঁটছেন বাংলাদেশি এই তরুণ।

পিঠে ব্যাগ হাতে লাঠি গরম থেকে বাঁচতে মাথায় টুপি, আর পায়ে নিতান্তই সাধারণ চপ্পল পরে হাজার হাজার মাইল পথ হাঁটার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন বছর ২৮ -এর এই যুবক। প্রখর গরমে যশোর রোড ধরে চলার পথে বহু মানুষ তাঁকে দেখে এগিয়ে আসছেন। তাঁর এই পায়ে হেঁটে বিশ্ব ভ্রমণের কথা শুনে রীতিমতো অবাক হয়ে যাচ্ছেন অনেকে, তার সঙ্গে তুলছেন সেলফিও।

আরও পড়ুন : পাতে রাখুন এই লিকলিকে সবুজ সবজি, একইসঙ্গে কমবে কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার! মেদ ভ্যানিশ হয়ে ঝরবে ওজন, থাকবেন সুস্থ ও সুন্দর

পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে দেখা হলেই সাইফুল ইসলাম শান্ত পরিবেশ সচেতনতার বার্তাও তুলে ধরছেন তাঁদের কাছে। ক্রমশ বেড়ে চলা পৃথিবীর তাপমাত্রা হ্রাস করতে, পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজন রয়েছে এই বার্তা বিশ্বের বুকে ছড়িয়ে দিতেই যুবকের এই কঠিন সিদ্ধান্তকে রীতিমতো কুর্নিশ করছেন পথচলতি মানুষজনও।

দিনে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার করে হাঁটার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তাঁর। রাত্রে পথেই নিচ্ছেন বিশ্রাম। চলার পথে ফল ও ডাবের জল আর সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে জল খেয়েই বেশির ভাগ সময় থাকছেন তিনি। চেনা পরিচিতদের পাশাপাশি পথ চলতি মানুষজনও ভালবেসে অনেক সময় আশ্রয় দিচ্ছেন বলেও জানান শান্ত।

ভারতে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে পায়ে হেঁটেই ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তর প্রদেশ দিয়ে দিল্লিতে পৌঁছানোর ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। তারপর, সিদ্ধান্ত নেবেন নেপাল নাকি উজবেকিস্তান কোন দিক দিয়ে পরবর্তী যাত্রা করবেন। এরপর, রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া-সহ এশিয়ার ও তারপর আফ্রিকা, ইউরোপ ঘুরে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ ভ্রমণের পর অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে গিয়ে এই বিশ্বভ্রমণ শেষ হবে বলেও জানান তিনি।

এই দীর্ঘ লম্বা সময়ের যাত্রাপথে প্রখর তাপপ্রবাহ, বৃষ্টি, শীত উপেক্ষা করে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে চলতে হবে তাকে। তাই তাঁর মানসিক শক্তিকেও রীতিমতো কুর্নিশ জানাতে হয়। পরিবেশ রক্ষায় বিশ্বের কিছু মানুষকেও সচেতন করতে পারলেই যেন তাঁর এই কষ্টের সার্থকতা।