চিত্রা ঢাকি 

Durga Puja 2024: মহিলা ঢাকির দল! নাম ডাক ভিন রাজ্যেও কম নয়, দেখুন

পূর্ব বর্ধমান: সুদপুর গ্রামের মেয়ে চিত্রা দাসের উদ্যোগেই, গ্রামেরই বেশ কিছু মহিলা ঢাক বাজানো শুরু করেন। সুদপুরের চিত্রা দাস আজ সকলের কাছে চিত্রা ঢাকি নামেই পরিচিত। রাজ্য ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যেও তাঁর শুনাম রয়েছে। তবে শুরুটা হয়েছিল অন্যরকম ভাবে। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় চিত্রা দেবীর। পরবর্তীতে স্বামী গত হয়ে যাওয়ার পর, ছেলেকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরে আসেন বাপের বাড়ি সুদপূর গ্রামে। ফিরে আসার পর প্রথম দিকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে থাকেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে ধীরে ধীরে বড় করে তোলেন নিজের ছেলেকে। অনেক সময় তাঁকে মাঠেও কাজ করতে হয়েছিল। পরবর্তীতে চিত্রা দেবী একদিন তাঁর ছেলের বুদ্ধিতে এই ঢাক বাজানোর সিদ্ধান্ত নেন।

আরও পড়ুন: নাক দিয়েই তোলেন গিটারের সুর! শিল্পীর অবাক প্রতিভা, নেট দুনিয়ায় ভাইরাল

চিত্রা দেবী জানিয়েছেন, “তাঁকে প্রথম থেকেই অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি আরও বলেন, কষ্টের কারণে আজ তিনি এই জায়গায়। নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি আরও দশ জন মহিলাকে উপার্জনের রাস্তা দেখিয়েছেন।”চিত্রা দেবী বাড়ি বাড়ি ঘুরে গ্রামের প্রায় দশ জন মহিলাকে ঢাক বাজানোর জন্য জড়ো করেন। কিন্তু মহিলারা জড়ো হলেও ঢাক কেনার জন্য ছিলনা টাকা। তখন ওই মহিলারাই টাকা ধার করে চিত্রা দেবীর হাতে তুলে দেন। এবং সেই ধার করা টাকা দিয়ে কেনা হয় ঢাক। সুদপূর গ্রামেরই ঢাকের মাস্টার নাদু দাসের কাছে যান চিত্রা দেবী । তারপর নাদু দাসের কাছেই শুরু করেন ঢাক বাজানোর প্রশিক্ষণ নেওয়া।

যেহুতু চিত্রা দেবী এবং তাঁর সঙ্গীরা মহিলা, তাই শুরুর প্রথম দিকে তাঁদের অনেক কটুক্তি শুনতে হয়েছিল । তবে আজ চিত্রা দেবী সহ অন্যান্য মহিলাদের একটা আলাদা নিজস্ব পরিচিতি রয়েছে । বহু বাধা বিপত্তি পার করে আজ তাঁরা উপার্জন করতে শিখেছেন । গ্রাম ছাড়িয়ে তাঁরা এখন পৌঁছে যান ভিন রাজ্যেও। পুজোতে সবাই যখন পরিবার নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন। ঠিক সেই সময় অন্যদের আনন্দ দিতে ব্যস্ত থাকেন এই সুদপুর গ্রামের মহিলা ঢাকিরা। এই প্রসঙ্গে শান্তনা দাস বলেন, “পুজোর সময় পরিবার ছেড়ে যেতে আমাদেরও ভালো লাগেনা। কিন্তু তাও আমাদের যেতে হয়। আমরাও সেই সকল জায়গায় আনন্দের সঙ্গেই থাকি। কষ্ট হলেও আমাদের কিছুই করার থাকেনা।

আজও চিত্রা দেবী তাঁর ঢাকের তালে নাচিয়ে তোলেন বহু মানুষকে । ঢাক নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন আসাম, উড়িষ্যা, ভুবনেশ্বর, ত্রিপুরা, কলকাতা , গুয়াহাটি, পুরুলিয়ার মত আরও বহু জায়গায়। কঠোর পরিশ্রম আর জেদের কারণে আজ চিত্রা দেবী আরও ২০ জন মহিলাকে একটা উপার্জনের পথ দেখিয়েছেন। বর্তমানে লোকের বাড়িতে কাজ করা চিত্রা আজ সকলের কাছে চিত্রা ঢাকি নামেই পরিচিত। এবারও দুর্গা পুজোয় ঢাক নিয়ে পাড়ি দেবেন আসাম এবং কলকাতা।

বনোয়ারীলাল চৌধুরী