বীরভূম: খুব একটি সহজ বাংলায় আদিবাসী শব্দের অর্থ ‘আদি বাসিন্দা’।এই ভারতীয় উপমহাদেশের আদিবাসীরাই হলেন এখানের আদিমতম বাসিন্দা বা সাঁওতাল। যাঁদের ধর্ম হল সারি বা সারনা ধর্ম। এই আদিবাসীদের জীবন-যাপনে ও সংস্কৃতির সঙ্গেবন-জঙ্গলের সম্পর্ক তাঁদের সৃষ্টির প্রথম থেকেই জড়িয়ে রয়েছে। একটু গভীরে দেখলে দেখতে পাওয়া যায় তাঁদের প্রত্যেক উৎসবের সঙ্গেরয়েছে প্রকৃতির এক নিবিড় সম্পর্ক।বাস্তবে তাঁরা জীবন নির্ধারণ করেন বনের উপর ভরসা করে।তাই তাঁদের কাছে বন ও বন সংক্রান্ত সকল বিষয়কে বাঁচিয়ে রাখাই প্রধান কর্তব্য।আর সেই কর্তব্য তাঁরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে এসেছে এক যুগ ধরে।তবে আপনার মন জানতে চাইতেই পারে ‘সেন্দ্রা’ পরব বা উৎসব আসলে কী!
সেন্দ্রা একটি সাঁওতালি শব্দ যার বাংলা অর্থ হল অনুসন্ধান বা খোঁজ। মানুষের আদিম প্রবৃত্তি হল জীবন-যাপনের স্বার্থে খোঁজ করে যাওয়া। এই খোঁজের মধ্যে দিয়েই বিকাশ ঘটেছে মানব সভ্যতার। এমনই প্রকৃতির উপর নির্ভর করে যাঁরা বেঁচে থাকেন তাঁদেরও খোঁজ চালিয়ে যেতে হয় প্রকৃতির কোথায় কি রয়েছে। প্রকৃতির মধ্যে কখন কোন বিষয়ের আগমন হয়ে আবার কোন সময় তার শেষ হয়। আদিবাসী জীবনের প্রত্যেকটি দ্রব্য আসতপ্রকৃতি থেকে। তাই বর্ষায় জঙ্গল ঘন হয়ে ওঠার আগেই তাঁদের জঙ্গলে গিয়ে খোঁজ করে আসতে হত কোথায় কি রয়েছে। কারণ বর্ষায় জঙ্গল ঘন হলে সেই খোঁজ করা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ত। তাই বর্ষার পূর্বেই তাঁরা জঙ্গলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসতকোথায় কোন গাছ-পালা-লতা-গুল্ম-পশু-পাখি রয়েছে।
আরও পড়ুন : ফেলে দেওয়া প্যারাসিটামল দিয়ে অবিশ্বাস্য কাজ করলেন বীরভূমের যুবক, আন্তর্জাতিক পুরস্কার এল ঝুলিতে
এবার বোলপুর শান্তিনিকেতন থেকে মাত্র কিছুদূর এর অবস্থিত সোনাঝুরির হাটে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা এবং ধর্মীয় আচার রীতি মেনে পালিত হলও সাঁওতাল জনজাতির ‘বঙ্গান মাহা ‘উৎসব। শুক্রবার সকাল থেকেই বোলপুর সোনাঝুরি হাটে এই উৎসব শুরু হয়। বিচিত্র প্রাণ প্রকৃতির মাঝেও সাঁওতাল জনগোষ্ঠী খুঁজে পায় তাদের ধর্মীয় ঐতিহ্য। নাচ-গান এবং বিভিন্ন ধর্মীয় আচার রীতি মেনে তাদের এই উৎসব পালন করা হয়। এরপর নিজেদের মধ্যে ফুল বিতরণ থেকে ঐতিহ্যবাহী বাহা নাচ এবং আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই অনুষ্ঠান।
আরও পড়ুন : শান্তিনিকেতন এলে, বেড়ানোর তালিকায় রাখুন এই জমিদার বাড়ি, সৌন্দর্য্যে ১ নম্বর!
সাঁওতালরা এদেশের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষের মতবসবাস করে। এক সময় তাদের সংস্কৃতি সেই অর্থে সমাজে জায়গা পায়নি, তবে এখন যথেষ্ট উৎসাহের সঙ্গে তাদের বিভিন্ন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F
সমাজের অন্যান্য ধর্ম বা সম্প্রদায়ের মানুষও উপভোগ করে থাকেন তাদের উৎসবকে।
সৌভিক রায়