কী ঘটছে বাংলাদেশে?

Bangladesh: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদল, ইসলামিকদের জন্য কতটা সুবিধার হয়েছে?

                                                  অরুণ আনন্দ

ঢাকা: গত মাসে বাংলাদেশ জুড়ে ছাত্র বিক্ষোভ, আর তার ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনকালের পরিসমাপ্তি–বিশ্ব রাজনীতির কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। শেখ হাসিনার অপসারণ এবং অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর থেকেই সারা বাংলাদেশ জুড়ে ঘটে চলেছে একের পর এক চমকপদ সব কান্ড! মারদাঙ্গা তো লেগেই আছে, সাথে শুরু হয়েছে, সরকারি আধিকারিকদের বাড়িতে হামলা ও ঘেরাও। সম্প্রতি, বাংলাদেশ স্বাধীনতাযুদ্ধে ঘটে যাওয়া যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিচারসভার প্রাক্তন চিফ প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের বাড়িতে বেশ কিছু উঠতি বয়সের তরুণ হামলা চালায়। ছেলেগুলি তাঁর ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং আফরোজের সঙ্গে তর্ক শুরু করে কেন তিনি হিজাব পরেননি। ছেলেগুলি আফরোজের মাথার চুল কেটে দেওয়ার জন্যও উদ্যত হয়। কয়েকদিনের জন্য ওই তরুণেরা আফরোজ ও তাঁর মেয়েকে নিজেদের কব্জায় রাখে। ধারালো পেন্সিল দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ইসলামের বিষয়ে তাঁকে জ্ঞান দেয় তারা। তাঁর যুবতী মেয়ের শ্লীলতাহানি যাতে ছেলেগুলির হাতে না হয়ে যায় এই নিয়ে আফরোজ ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছিলেন। ঢাকার বাড়িতে বসে তিনি জানান-”ভেবেছিলাম আমায় ওরা প্রাণে মেরে দেবে, আমরা ভয়ে ভয়ে ছিলাম।”

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম প্রধান এই দেশ বর্তমানে এক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে। পশ্চিমের দেশগুলি এবং ভারতের বিদেশমন্ত্রকের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তিত। তাঁরা আশঙ্কা করছেন চরমপন্থী ইসলামিকদের নিয়ে যারা বিশ্বের অতি সংবেদনশীল অস্থির ভূখন্ডগুলিতে পা রাখার চেষ্টা করছে, যেখানে ইতিমধ্যেই ইসলামিক স্টেটের মতন উগ্রপন্থী সংগঠন নিজেদের জমি করে নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ক্রমাগত বেড়ে চলা, ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ এবং লেবানন আক্রমণের হুমকি, পরিস্থিতি এমন এক জায়গায় যেখানে চরমপন্থীদের বিরাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিরাট খবর! নাম বদলে যাচ্ছে শিয়ালদহ স্টেশনের? রেলমন্ত্রীর সামনেই দাবি তুললেন বিজেপি সাংসদ

১৫ বছরের অবিচ্ছিন্ন শাসন শেষে শেখ হাসিনার অপসারণের পর, মহাম্মদ ইউনূসের তত্বাবধানে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের আবির্ভাব, যা জাতিকে এক নতুন দিশা দেখাবে বলে আশা করেছিল সবাই। প্রসঙ্গত, হিলারি ক্লিনটনের ঘনিষ্ঠ নোবেল বিজয়ী ইউনূস দরিদ্র পরিবারের কথা মাথায় রেখে ক্ষুদ্র ঋণের প্ৰবৰ্তন করেন, যার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কারও পান।

তবে হাসিনা সরকার রাজত্বকালের পরিসমাপ্তি, অর্ধশতাব্দী আগে ঘটে যাওয়া বাংলাদেশের গণহত্যার স্মৃতি উস্কে দিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার এই নারকীয় ঘটনার দ্বারা অনেকাংশে প্রভাবিতও বটে। দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে শেখ হাসিনা বরাবর সমর্থন পেয়েছেন বাংলাদেশে চরমপন্থী ইসলামিদের কঠোর হাতে দমনের জন্য। পাকিস্তানে বরাবর বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী আশ্রয় পেয়ে এসেছে। সেই পাকিস্তানের সাথে হাসিনার দ্বিপাক্ষিক নীতিগুলির মধ্যে বেশ ঠান্ডা যুদ্ধ বজায় থাকত। যেখানে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে শেখ হাসিনা সরকারে আসীন থাকাকালীন ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রী বরাবর এক উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। ১০ লক্ষেরও বেশি হিন্দু সংখ্যালঘু মানুষ ভারতে পালিয়ে আসে। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ গণহত্যায় দায়ী সকল দোষীদের বিচার শুরু করেন। তাঁর পার্টি আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ জামাত-ই-ইসলামী দলেও গণহত্যার সঙ্গে বহু নেতা যুক্ত ছিলেন।

কয়েক সপ্তাহ ধরেই, আওয়ামী লীগের সমর্থক ও সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচারের পারদ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। অধিকাংশই প্রতিশোধ চরিতার্থ করার জন্য চলছে। দিনকে দিন ঢাকার আইনশৃঙ্খলাও ভেঙে পড়ছে। বিভিন্ন দূতাবাসগুলিতে স্বল্প সংখ্যক কর্মীর মাধ্যমে কাজ চলছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়ভার নিয়েছে কলেজের ছাত্র-যুবরা, থানাগুলিতেও পুলিশকর্মী সংখ্যা নগণ্য। বাংলাদেশের হাজার হাজার হিন্দু সীমান্ত পার করে ভারতে আসার চেষ্টা করেছে। সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী অধ্যুষিত তিব্বত ও মায়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চল পার করেও বাংলাদেশের অনেক নাগরিক এই দেশে ঢোকার পরিকল্পনা করে বলেও জানা গেছে।

সত্যি কথা বলতে, পরবর্তীতে কী ঘটতে চলেছে তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা আছে। বাংলাদেশ সেনা জানিয়েছে তারা দেড় বছরের মধ্যে গণতান্ত্রিক নির্বাচন চায়, যদিও পরবর্তী ভোট কবে চলেছে তা এখনও ঠিক হয়নি। বর্তমানে দেশ এক আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একসময় দেশের অর্থনীতি বস্ত্র শিল্পের উপর দাঁড়িয়ে ছিল যা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বলে পরিগণিত হত, তা আজ ধুঁকছে। বাংলাদেশের কাপড় শিল্পকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে গেলে বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার সাহায্য প্রয়োজন, নইলে এই শিল্পের ভবিষ্যত পরবর্তীতে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

চরম টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কয়েক মাস ধরে চলা কার্ফু এবং রক্তাক্ত প্রতিবাদ বাংলাদেশের বস্ত্র ব্যবসাকে পুরোপুরি অনটনের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। জারা, গ্যাপ এবং এইচ অ্যান্ড এম-এর মতন বহুল ব্যবহৃত ফ্যাশন ব্র্যান্ডও ক্ষতির মুখে। রফতানিকারীরা চলতি বছরে ২০%-এর মতন ব্যবসা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ব্র্যান্ড পরের বছর তাদের উৎপাদন অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও করে ফেলেছে।

সাম্প্রদায়িক সংঘাতও বাংলাদেশে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। দশ বছর আগেও, চরমপন্থী ইসলামীরা বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদের নৃশংস ভাবে হত্যা করতো। বেশ কয়েকজন ব্লগারের প্রাণ এই জামাতিদের হাতে যায়। ২০১৬ সালে হোলি আর্টিসান কান্ড মনে আছে সকলের। জঙ্গিরা ঢাকার এই পাঁচতারা হোটেলে অতর্কিতে হামলা চালায়। মূলত এই আক্রমণে অমুসলিমদের নিশানা করা হয়। এছাড়াও ১২ জনের মতন বিদেশীকে হত্যা এই জঙ্গিদের দ্বারা সংঘটিত হয়। এই ঘটনার জন্য জামাত-ই-ইসলামীকে দায়ী করা হয় এবং শেখ হাসিনা এই চরমপন্থী মুসলিম সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন। সাথে ব্লগার হত্যার নেপথ্যকারীদেরও হাসিনা সরকারের তরফে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

গত ৫ অগাস্ট হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসার পর, অজ্ঞাত পরিচয় কিছু ব্যক্তি হিন্দু মন্দিরগুলিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের বেশ কিছু মূর্তি ভেঙে দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, এক চিঠির বার্তা ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে অধ্যাপিকাদের ‘ঐতিহ্যবাহী পোশাক’ পরার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামাত-ই-ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর, বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি অরফে বিএনপি-র উত্থান ঘটে। হোলি আর্টিসান বেকারিতে হওয়া সন্ত্রাসী হামলা আটকানোরসময় যেইসব পুলিশ অফিসাররা নিহত হন, তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে বানানো সৌধও কয়েকদিন আগে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, আর তার জায়গা দখল করেছে মৌলবাদী গোষ্ঠীর পোস্টার।
ছাত্রদের লাগাতার প্রতিবাদে, হাসিনা সরকারের গদিচ্যুত হয় এবং তার জায়গায় আসীন হয় মহম্মদ ইউনূসের তত্বাবধানে অন্তর্বর্তী সরকার। কয়েক বছর ধরেই আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সারা বাংলাদেশ জুড়ে ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়েছিল। হাসিনা সরকারের শাসনকালে মহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ জমা হয়েছিল যার মধ্যে অর্থপাচার এবং দুর্নীতির অভিযোগ অন্যতম। ইউনূসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডেও সেইসময় দণ্ডিত করা হয়। সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর তাঁর উপর থেকে দণ্ডাদেশ উঠে যায়।

ইউনূস, বাংলাদেশ জুড়ে প্রতিবাদ চলাকালীন যে হিংসা ও রক্তপাত হয়েছে তা নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি আর কিছুদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার বিষয়ে আশাবাদী। বাংলাদেশের যে দোদুল্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দীর্ঘসময় ধরে চলে আসছে তা নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বলা চলে খুবই কম। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার পর বেশ কয়েকবার সামরিক অভুত্থানের সম্মুখীন হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মন্ডলীও নির্বাচিত ১৯জনের একটি দল। শিক্ষাবিদ থেকে আন্দোলনের নেতা এবং ছাত্ররা এই টিমের সদস্য। পুরোদস্তুর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এদের সকলেরই কম থাকায়, বাংলাদেশ কতটা ভাল ভাবে এই উপদেষ্টা মন্ডলীর মাধ্যমে পরিচালিত হবে তা এখন দেখার।
শেখ হাসিনার পুত্র সাজিদ ওয়াজেদ ইতিমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরোধিতায় সরব হয়ে উঠেছেন। তাঁর মতে, ”ইউনূসের হাতে আসলে কোনও ক্ষমতাই নেই। তিনি আরও বলেন, সরকার পতনের পর, ইসলামপন্থী দল ও অন্যান্য গোষ্ঠীগুলির প্রতিবাদ আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে মহম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় এসেছেন।

মিলিটারি রক্ষণাবেক্ষণে মহম্মদ ইউনূসকে বর্তমানে একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে হাসিনার জায়গা পাওয়ার পরেও ইউনূসকে অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য বরাদ্দ গেস্ট হাউজে থাকতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ইউনূস থাকতে পারছেন না কারণ তা প্রতিবাদীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ। পরিবার ও সহকর্মীদের থেকে বিচ্যুত মহম্মদ ইউনূস সেনাবাহিনীর ঘেরাটোপে বর্তমানে রয়েছেন।
মহাম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা পদে আসীন হওয়া ছাড়া তাঁর কাছে অন্য কোনও কিছু বিকল্প ছিল না। ছাত্রদের তরফ থেকে তাঁর কাছে যখন এই পদের জন্য প্রস্তাব আসে, ততদিনে অজস্র বিক্ষোভকারী পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে।ইউনূসের কাছে দাবিগুলি একের পর এক আসতে থাকায়, তিনি কিছুটা উত্যক্ত হয়ে ওঠেন। তিনি তাঁর এই পদের মূল্যায়ন ‘প্রত্যাশা ব্যবস্থাপনা’ শব্দের মধ্যে দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন।

এই সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের মানুষের ধৈর্য্য ধরে থাকাটাই কঠিন এক কাজ। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অন্যান্য সব দল জাতীয় নির্বাচন যত তাড়াতড়ি সম্ভব পরিচালনা করানোর জন্য আর্জি রেখেছে। কিন্তু প্রতিবাদী ছাত্রনেতারা নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন করা নিয়ে আগ্রহী নয়। ভোটের আগে মহম্মদ ইউনূস এবং তাঁর উপদেষ্টা পরিষদ যাতে নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ায় মনোনিবেশ করেন, তার দাবি করেছে তারা। এই অচলাবস্থা কতদিন আর চলবে, তা নিয়ে কেউই নিশ্চিত নয়। মহম্মদ ইউনূস নিজেকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় দেখতে সম্পূর্ণ নারাজ। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা থেকে বেরিয়ে পরিবর্তন আনতে কম করে একবছর সময় লাগতে পারে, বলে অভিমত ইউনূসের উপদেষ্টা মন্ডলীর।

বাংলাদেশ জুড়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মাসুল গুনতে হয়েছে দেশের জনগণকে। রাষ্ট্রের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং চাকরির অভাব সারা দেশ জুড়ে দেখা দিয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রগতি চরম জায়গায় নিয়ে গেছিলেন। দেশকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার জন্য ৪৭ বিলিয়ন ডলার বস্ত্র রফতানি শিল্প গড়ে তোলেন। যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে অনেক ভাল জায়গায় নিয়ে যায়. সারা বিশ্বের কাছেও হাসিনার এই উদ্যোগ প্রশংসা পায়।

হাসিনার সমর্থকদের কাছে এই বছর একদমই শুভ নয়। ১৯৭০ সালে হাসিনার পরিবারকেও সামরিক অভ্যুত্থানের সময় হত্যা করা হয়। সেইসময় হাসিনা বিদেশে থাকায় তাঁর প্রাণ বেঁচে যায়। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমানকে দায়ী করে এসেছেন। কিন্তু জিয়াউর এই দাবি সর্বসমক্ষে বরাবর নস্যাৎ করেছেন।

আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ বহু নেতা মন্ত্রী, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী এখন বিপদে। বাংলাদেশ বিক্ষোভে যেইসব গণহত্যা হয়েছে, সেগুলির জন্য দলের এইসব ঘনিষ্ঠ সমর্থকদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। হাসিনার দলের লোকেদের বক্তব্য, যেইসব ছাত্রনেতারা মানবতাদরদী ভূমিকা পালন করছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের নেতাদের বেলায় এত চুপ কেন!! কেনই বা তাদের উপর এখনও অত্যাচার চলছে?
হাসিনা বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। বাংলাদেশের হালহকিকত নিয়ে তিনি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। দেশ জুড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ, অগ্নিসংযোগ ও হিংসা নিয়ে তিনি ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন এবং তদন্তের জন্য দাবি জানিয়েছেন। হিংসার শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন যারা তাঁদের জন্যও সুরক্ষা ও সুবিচারের আশা করেছেন তিনি।

ঢাকার আয়েশা বেগমের পক্ষে যেমন কখনো ভোলা সম্ভব নয় তাঁর স্বামী ফারুক মোল্লার হত্যার দিনের কথা। সশস্ত্র দলবল তাদের বাড়িতে জোর করে অনুপ্রবেশ করে। নিজেদের বিএনপি সদস্য বলে পরিচয় দিয়েই, আয়েশাকে তাঁরা ছুরি সমেত আক্রমণ করে। তাঁর স্বামী ফারুক মোল্লাকে নৃশংস ভৱে হত্যা করে তারা। আয়েশা স্মৃতিচারণ করে বলেন, তাঁর ৭ বছরের ছেলেকেও হত্যা করবে বলে ঠিক করেছিল দুষ্কৃতীরা।
আওয়ামী লীগ ফারুক কখনোই প্রত্যক্ষভাবে করতেন না। তাঁর ভাই আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। পাঁচ ঘন্টা ধরে তান্ডব চালানোর পর সশস্ত্র বাহিনী বেরিয়ে আসে। যাওয়ার আগে বাড়িটিতে দুষ্কৃতীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। আয়েশা জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিনি এই হত্যার বিচার চান। সরকার পালাবদলের পর প্রতিশোধের পালা দীর্ঘায়িত হয়ে চলেছে। সহজে এই আগুন নিভবে বলে মনে হয় না।

অরুণ আনন্দ : বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট অরুণ আনন্দ, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। তার লেখা প্রবন্ধ ও বই পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। আপনি তাকে তার X (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল @ArunAnandLive -এ অনুসরণ করতে পারেন।