অয়ন দেঘরিয়া 

USA Space Programme: আমেরিকায় মহাকাশ প্রোগ্রামে বাঁকুড়ার অয়ন! যাতায়াতের খরচ যোগাড় করতেই হিমশিম

নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঁকুড়া: বাঁকুড়ার দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র সুযোগ পেল ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এন্ড স্পেস প্রোগ্রাম ২০২৪-এ। এটা অনুষ্ঠিত হবে আমেরিকার আলাবামা ইউনিভার্সিটিতে, ইউনাইটেড স্পেস অ্যান্ড রকেট সেন্টারে। পাঁচদিনব্যাপী এই প্রোগ্রামে বাঁকুড়ার এমডিভি ডিএভি পাবলিক স্কুলের ছাত্র অয়ন দেঘরিয়া ভারতবর্ষ থেকে সুযোগ পেয়েছেন। অংশগ্রহণ করছেন অন্যান্য দেশের প্রতিযোগীরাও।

অনুষ্ঠানের শেষে পাঁচদিন পর যে প্রতিযোগী প্রজেক্ট সিলেক্ট হবে তার প্রজেক্ট পৃথিবী ছাড়িয়ে যাবে মহাকাশে, অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে। অর্থাৎ এবার মহাকাশে বাঁকুড়ার নাম পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের কমলপুরের ছেলে অয়ন। তবে দুর্দান্ত এই সুযোগ পাওয়ার পর সে কি আদৌ যেতে পারবে, তা-ই নিয়ে থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন! কারণ যাতায়াতের খরচ বহন করা সম্ভব নয়। অয়নের পরিবারের পক্ষে এছাড়াও রয়েছে আনুষঙ্গিক বহু খরচ। নিজের স্বপ্নের এত কাছে এসেও কি অধরা থেকে যাবে তার স্বপ্ন!

স্বপ্নের কাছে আসাটা এতটা সহজ ছিল না। অয়ন যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে তখন মারা যান বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস। তাঁর মারা যাওয়ার দুই তিন মাস আগেই অয়ন জানতে পারেন হকিংস এবং মহাকাশের বিশালতা নিয়ে তাঁর কাজ নিয়ে। ধীরে ধীরে ছোট্ট অয়ন খুঁজে পায় তার জীবনের লক্ষ্য। তখন থেকে শুরু মহাকাশ নিয়ে চিন্তাভাবনা।

এরপর ২০২২ সালে “স্পেস দেব্রি” অর্থাৎ মহাকাশে বিভিন্ন  ধ্বংসাবশেষ নিয়ে কাজ শুরু করে সে। তখন লক্ষ্য ছিল ২০২৩-এর আন্তর্জাতিক কনফারেন্স। তবে দুর্ভাগ্যবশত ফর্ম ফিলআপ করতে দেরি হওয়ায় সেই কনফারেন্স মিস হয়ে যায়। তবে ২০২৩ সালেই দেরাদুনে ইউনিভার্সিটি অফ পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এনার্জি স্টাডিস-এর জাতীয় স্পেস কনভেনশনে। যথারীতি প্রথম স্থান অধিকার করেন বাঁকুড়ার ভূমিপুত্র। এর পর অয়নের যাওয়ার সুযোগ হয় ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানের আখড়া ইসরোর বাই অ্যানুয়াল কনফারেন্স যেটা অনুষ্ঠিত হয় গোয়ায়, তার পর সেই একই প্রজেক্টের ” অ্যাডভান্সড ভার্সন” দেওয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস প্রোগ্রাম ২০২৪ এর বাছাই স্তরে। ভারত থেকে এই প্রোগ্রামে সুযোগ পেয়েছেন অয়ন দেঘরিয়া।

আরও পড়ুন : প্রিয়জনের অপেক্ষায়, ট্রেনের পথ চেয়ে সারি সারি উদ্বিগ্ন মুখের ভিড়ে বিপর্যস্ত নিউ জলপাইগুড়ি

প্রতিবছর পৃথিবী থেকে মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দেয় বহু রকেট এবং কৃত্রিম উপগ্রহ। এই যন্ত্রাংশগুলির অংশবিশেষ জমা হচ্ছে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে। পৃথিবীতে ঘিরে এই ধ্বংসাবশেষ গুলি তৈরি করছে একটি ধাতব জেইল। এই বলে কি বলে স্পেস দেব্রি বা মহাকাশের আবর্জনা। এর সাইজ ১ মিলিমিটার থেকে শুরু করে ২ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য গোটা পৃথিবী কাজ করছে। কাজ করছেন বাঁকুড়ার অয়নও।

ধ্বংস করে বা শক্তি প্রয়োগ করে নয়, “সাস্টেনেবল ভিউজেবল” টুকরোগুলিকে থ্রাস্টারের মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করিয়ে প্যারাসুটের মাধ্যমে সেগুলিকে নীচে নামিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এই মর্মেই কাজ করে চলেছেন দ্বাদশ শ্রেণীর অয়ন। যে কাজের স্বীকৃতি এসেছে ইসরো থেকে আমেরিকার অ্যালাবামা ইউনিভার্সিটি থেকে। তবে বাঁকুড়া থেকে কীভাবে আমেরিকায় যাবে এই ছেলে সেটা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে তার। তাহলে কি সামান্য কিছু অর্থের কারণে, অধরা থেকে যাবে অয়ন এবং বাঁকুড়ার মহাকাশ স্বপ্ন? অধরাে এই প্রশ্নের উত্তর।