বারাসাত লোকসভা কেন্দ্র

Lok Sabha Elections 2024: ইতিহাসে ঠাসা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট! রাত পোহালেই বারাসতে ভোটযুদ্ধ! এক নজরে নির্বাচনের খুঁটিনাটি

বারাসত: বারাসত জেলার সদর শহর। তবে এই শহরের ইতিহাস যেমন বেশ পুরনো, তেমনই এই লোকসভা কেন্দ্রে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঘাঁটি থাকায়, নানা রাজনৈতিক বৈচিত্র্যেরও সাক্ষী থেকেছে। যদিও অতীতে এই লোকসভা কেন্দ্রের বিস্তৃতি ছিল সুদূর। তখন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র তৈরি না হওয়ায়, বেশ কিছুটা অংশ ছিল বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম দফা ভোটগ্রহণ

২০০৪ সালে এই লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে ছিল বাগদা, বনগাঁ, গাইঘাটা বিধানসভা কেন্দ্র। ২০০৯ সালে এই লোকসভা কেন্দ্রের চিত্র অনেকটাই পাল্টে যায়। এরপর বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের আয়তন অনেকটা কমিয়ে, নদিয়া জেলার দুটি বিধানসভা নিয়ে আলাদাভাবে তৈরি হয় বনগাঁ লোকসভা। বাকি হাবড়া, অশোকনগর, রাজারহাট, নিউটাউন, বিধাননগর, মধ্যমগ্রাম, বারাসত এবং দেগঙ্গা বিধানসভা নিয়ে থেকে যায় বারাসত লোকসভা কেন্দ্র।

আরও পড়ুনঃ প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত রেল পরিষেবা! বাতিল হল একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন, রইল তালিকা

১৯৫৭ সাল এবং ১৯৬২ সালে কংগ্রেসের অরুণ চন্দ্র গুহ এই কেন্দ্র থেকে প্রথম জয়লাভ করেছিলেন। এরপর, এই কেন্দ্রে বাম মনস্ক রাজনীতির প্রভাব বাড়তে শুরু করে। ১৯৬৭ এবং ৭১ সালের নির্বাচনে সিপিআইয়ের রণেন্দ্রনাথ সেন জয়লাভ করেন। পরবর্তীতে, বারাসত হয়ে ওঠে ফরওয়ার্ড ব্লকের শক্ত ঘাঁটি। বারাসতের রাজনীতির আনাচে কানাচে আজও যেন ঘুরে বেড়ায় প্রয়াত ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা চিত্ত বসুর কথা। বারাসত থেকে পাঁচবার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। যদিও মাঝে একবার বদল হয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। কংগ্রেসের তরুণকান্তি ঘোষ ফরওয়ার্ড ব্লকের চিত্ত বসুকে পরাজিত করেন। তারপর অবশ্য আবারও বেশ কয়েকবার ফরওয়ার্ড ব্লকের চিত্ত বসুই জয়লাভ করেন।

এরপর থেকেই ধীরে ধীরে এই কেন্দ্রে সিংহের গর্জন থেমে, ঘাসফুলের জোয়ার আসে। বাড়তে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাব। ১৯৯৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ডঃ রঞ্জিত কুমার পাঁজা এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন। কিন্তু, ২০০৪ সালে ফের এই কেন্দ্রটি নিজেদের দখলে নেয় বামফ্রন্ট। ২০০৪ সালে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী সুব্রত বোস তৃণমূল কংগ্রেসের ডাঃ রাঞ্জিত কুমার পাঁজাকে পরাজিত করেন। ২০০৯ সালের পর থেকে এই কেন্দ্রে ফের তৃণমূল কংগ্রেস তার প্রভাব বিস্তার শুরু করে। তৎকালীন তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেন্দ্র থেকে লোকসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য বেছে নেন ডঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে।

আরও পড়ুনঃ ফলে গেল প্রিয়জনের ‘কু’ডাক’, ভাগীরথীতে শেষ পড়ুয়ার জীবন! ভয়ঙ্কর এক ঘটনা

২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে প্রায় ১ লক্ষ ২২ হাজার ৯০১ ভোটের বিশাল ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছিলেন কাকলি। ২০১৪ সাধারণ নির্বাচনে বারাসত লোকসভা কেন্দ্র পুনরায় নির্বাচিত হন সেই কাকলি। সেবার তিনি ভোট পেয়েছিলেন মোট ৫ লক্ষ ২৫ হাজার ৩৮৭ টি, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফরওয়ার্ড ব্লকের মোর্তজা হোসেনকে পরাস্ত করে আবারও ফের সাংসদ নির্বাচিত হন কাকলি ঘোষ দস্তিদার। ২০১৯ সাধারণ নির্বাচনে এই এক‌ই লোকসভা কেন্দ্র থেকে পুনঃনির্বাচিত হন এবং কার্যত হ্যাট্রিক করেন কাকলি। এ বার তিনি মোট ৬ লক্ষ ৪৮ হাজার ৪৪৪ টি ভোট পান। সেইবার তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিজেপির মৃণাল কান্তি দেবনাথ।

রাত পোহালেই ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেবে বারাসাত লোকসভা কেন্দ্রের ভোটাররা। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ১৯ লক্ষ ৫ হাজার ৪০০ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ৯ লক্ষ ৫৮ হাজার ৮৯২ এবং মহিলা ভোটার ৯ লক্ষ ৪৬ হাজার ৪৪৩ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার মাত্র ৬৫। এই লোকসভা কেন্দ্রে মোট ভোট গ্রহণ কেন্দ্র ১৯৯১টি, যার মধ্যে অতি স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা মাত্র ২৭০। কেন্দ্রে মোট ১২ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হবে।

এ বারের নির্বাচনে রাজ্যের শাসক দল তথা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার দাবি করছেন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে জয়ী হবেন তিনিই। তবে বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদার এর পাশাপাশি ফরওয়ার্ড ব্লক ও আইএসএফ প্রার্থীও যথেষ্টই ভোট টানবে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। ফলে যে কোনও সময়ে ঘুরে যেতে পারে পাল্লা। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে শেষ হাসি কে হাসে তার জন্য অপেক্ষা ভোট গণনা পর্যন্ত। বারাসত লোকসভা কেন্দ্রে গত তিনবারের মতো ঘাসফুল ফোটে নাকি, গেরুয়া আবিরে পদ্ম ফোটে তা অবশ্য বলবে মানুষের রায়।

Rudra Narayan Roy