বীরভূম: এ এক অভিনব রথযাত্রা। আগেই বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা রাস্তার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। এই পথ দিয়েই যে মা তারা রাজবেশে রাজ-রাজেশ্বরী সাজে রথে চেপে বের হবেন।ঘুরে দেখবেন গোটা তারাপীঠবাসী। যদি রথের চুড়ো ঠেকে কোথাও, তাহলেই তো ঘটবে বিপত্তি। আর সেই কারণেই কোনও বিঘ্ন ঘটার আগেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মায়ের আগমনের আগেই।
ঘড়ির কাঁটা দুপুর তিনটে ছুঁতেই চিঁড়ে, পাঁচ রকম মিষ্টি, ফল, কাঁঠাল আম আনারস দিয়ে ভোগ নিবেদনের পরে বিশেষ পুজো। রথ উপলক্ষে দেবীকে জিলিপির ভোগও নিবেদন করা হয়। রথ বের করানোর আগে বেনারসি কাপড় পরানো হয়। প্রাচীন প্রথা মেনে মা তারাকে অপরাজিতা, জবা, রজনীগন্ধা ফুলের বড় বড় মালা দিয়ে সাজানো হয়। তারপরে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে মাকে বের করে মন্দিরের মূল প্রবেশ দ্বারের নীচে দাঁড়িয়ে থাকা সুসজ্জিত রথে চাপানো হয়। শুরু হয় যাত্রা।
প্রথমে রীতি মেনে মা তারাকে মূল প্রবেশ দ্বার থেকে উত্তরমুখে নিয়ে যাওয়া হয়। উত্তর মুখে রথে চেপে দ্বারকা সেতু সংলগ্ন রামপুরহাট-সাঁইথিয়া রাস্তা ধরে রথ তারাপীঠের তিন মাথা মোড় হয়ে এগিয়ে যায়। এবং মা তারাকে রথে চাপিয়ে আবারও মন্দিরের মূল প্রবেশ দ্বারেই নিয়ে আসা হয়।
সাধারণত দেখা যায় রথের মধ্যে জগন্নাথ বলরাম এবং সুভদ্রাকে চড়িয়ে দেশ তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রথযাত্রা পালন করা হয়। কিন্তু তারাপীঠে দেখা যায় অন্য ছবি। তাই রথ যাত্রার দিনেও জগন্নাথ বলরাম এবং সুভদ্রা নয় বরং মা তারাকে এই তিন রূপে রথে চাপিয়ে তারাপীঠ পরিক্রমা করানো হয়।
সোজা রথ থেকে উল্টো রথ সবেতেই মা তারা অধিষ্ঠিত হন। পাশাপাশি দুর্গাপুজোর পরে চতুর্দশীর দিন মা তারাকে বাইরে এনে বিশ্রাম মঞ্চে রাখা হয়। তারাপীঠের ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় আনুমানিক ১৭৮০ সালে নাটোরের রানী ভবানীর দত্তক পুত্র রাজা রামকৃষ্ণ প্রথম তারাপীঠে রথের প্রচলন করেছিলেন। পরবর্তীকালে কলকাতার আশালতা সাধু খাঁ নামে এক ভক্ত রথ ঘর নির্মাণ করেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে তা উদ্বোধন করা হয়েছিল।
সেই সময় কাঠের তৈরি একটি রথে মা তারাকে বসিয়ে গোটা চন্ডীপুর বর্তমানে যার নাম তারাপীঠ প্রদক্ষিণ করানো হত। সেই সময় রথের দড়িতে টান দেওয়ার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা ভিড় করতেন। হরিনাম সংকীর্তন এর পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের বাজনা ও জয় তারা ধ্বনি দিয়ে তারাপীঠ ভ্রমণ করানো হত। তবে ধীরে ধীরে সময় যত গড়িয়েছে তারা মায়ের রথের সাজ ততই বেড়েছে। সব মিলিয়ে এই দিন রথযাত্রা উপলক্ষে সাজ সাজ রব বীরভূমের তারাপীঠে।
সৌভিক রায়