মুর্শিদাবাদ: মুর্শিদাবাদ জেলার কাঁসা এবং পিতল বিখ্যাত। বহরমপুর শহরের খাগড়ার কাঁসা পিতলের নাম সকলেই জানেন। বর্তমানে মেশিন ব্যবহার করে তৈরি হয় নকশা। কিন্তু আজও অনেকেই হাতে করেই নকশা তৈরী করে থাকেন কাঁসার বাসনের ওপর। কলসি হোক বা হাঁড়ি এমনকী থালা, নির্দিষ্ট কিছু নকশা তৈরি করে থাকেন কয়েকজন শিল্পী। তাঁরাই বাঁচিয়ে রেখেছেন এই ঐতিহ্যকে।
বিয়ের দানসামগ্রী, নবজাতকের অন্নপ্রাশন, এমনকী সাংসারিক কাজকর্ম থেকে পুজো-পার্বণে চাহিদার যোগান দিতে গিয়ে একসময় হিমশিম খেতেন কাঁসা-পিতলের কারিগররা। বর্তমানে অতীতের ঐতিহ্য আর কৌলিন্য কোনওরকমে বজায় থাকলেও নব্য আধুনিকতার ছোঁয়ায় কাঁসা-পিতল শিল্পের অস্তিত্বও চরম সঙ্কটের মুখে।
বর্তমানে সময় বদলেছে। তার সঙ্গেই তাল মিলিয়ে বদলে গিয়েছে আধুনিকতার সংজ্ঞা। তাই কাঁসা-পিতলের বিকল্প হিসেবে জায়গা দখল করে নিয়েছে ফাইবার, স্টেইনলেস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, কাচ, চিনেমাটি ও সেরামিকের তৈরি আধুনিক হাল ফ্যাশনের বাসনপত্র। নব্য আধুনিকতার ধাক্কায় সঙ্কট নেমে এসেছে মুর্শিদাবাদ জেলার কাঁসা-পিতল শিল্পেও। যাঁরা এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তারা আজকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আর বাকিরা অসুবিধা নিয়েও বংশানুক্রমিকভাবে এই শিল্পের সঙ্গে টিঁকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ভারতের ১ টাকা মানে এই দেশের ৫০০, ইতিহাস সমৃদ্ধ এই দেশে ঘুরতে গেলে বিপুল লাভ
ফলে বর্তমানে চাহিদার অভাবে বিলুপ্তির মুখে মুর্শিদাবাদের কাঁসাশিল্প। এক সময়ে জগৎজোড়া সুখ্যাতি থাকলেও, চাহিদা আর আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে এখন ধুঁকছে মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত কাঁসা শিল্প। জেলার বহু শিল্পী তাই কাজ হারিয়ে পেটের টানে বিকল্প রুজি বাছছেন। আর হাতেগোনা কয়েক জন যাঁরা এখনও বাপ-ঠাকুরদার আমলের এই ঐতিহ্যকে কোনও রকমে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তাঁদের অবস্থাও সঙ্গীন। কয়েকজন এখন হাতের কাজ করেই সংসার চালান।
সরকারি কোনও রকম সাহায্য মিললে টিকে যেতে পারে প্রাচীন কালের এই ঐতিহ্যশালি নবাবি আমলের কাঁসা শিল্প, এমনটাই মত শিল্পীদের। মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার, বহরমপুর, লালবাগে এক সময় রমরমিয়ে ছিল প্রাচীন এই গ্রামীণ কাঁসা শিল্পের বাজার। আজ তা ক্রমশ ছোট হয়ে এসেছে। সামান্য কিছু এলাকাতেই এখন জীবিত জেলার এই প্রাচীন কাঁসা শিল্প।