বাঁকুড়া: সকালবেলা বাঁকুড়ার বাজারে এতদিন ফল, সবজি, মাছ মাংস কেনার সময় মানুষকে ভিড় করে বাছতে দেখা যেত। আর বর্ষাকালের ভোরবেলা থেকেই যে ভিড়টা দেখা যাচ্ছে তার কারণ ভিন্ন। ভোরবেলা থেকে ছাতু অর্থাৎ মাশরুম বাছাই করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন বাঁকুড়াবাসী। কারণ একটাই যে এই সময় পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু ছাতু অর্থাৎ ছত্রাক।
অন্যতম হল কুরকুরে ছাতু। ছোট ছোট গোল গোল দেখতে এই ছাতু যেন হার মানাবে মাছ-মাংসকেও। স্বাদেও দুর্দান্ত তবে দামও বেশ চড়া। কয়েকদিন আগে পর্যন্ত এই ছাতুর দাম প্রায় ৮০০ টাকা কেজি চলছিল। তবে শুক্রবার সকালে বাঁকুড়ার মুখ্য দুই বাজার মাচানতলা এবং লালবাজারে কুরকুরে ছাতুর দাম ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম একটু কমায় বেশ খুশি সাধারন মানুষ। নিজের পছন্দমত বেছে নিচ্ছেন ছাতু।
বাঁকুড়া জেলার তথা জঙ্গলমহলে ছাতু খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। দেশের অন্যান্য জায়গায় যেটিকে মাশরুম নামে চেনা হয়, জঙ্গলমহলে তা ছাতু নামে পরিচিত। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অতি জনপ্রিয় সুস্বাদু একটি খাবার। মূলত এই কুরকুরে ছাতুটি পাওয়া যায় বাঁকুড়া জঙ্গলমহল এলাকা অর্থাৎ রাণীবাঁধ এবং খাতড়ার জঙ্গলে। তারপর এই ছাতু গুলিকে বাজারজাত করে বিক্রি করা হয়। কুরকুরে ছাতু খুব সহজেই রান্না করা যায়। মূলত বাজার থেকে কিনে কুরকুরে ছাতু বাড়ি নিয়ে গিয়ে ভালো করে ধুয়ে পেঁয়াজ, সরষে এবং ঝিঙে দিয়ে রান্না করা হয়। বর্ষাকালের এই সময়টাতে বাঁকুড়ার ঘরে ঘরে কুরকুরে ছাতু রান্না করার গন্ধ পাওয়া যায়।
বাঁকুড়ার আনাচে কানাচে যেরকম রয়েছে শিল্পবৈচিত্র্য, জীব বৈচিত্র্য, বনজ বৈচিত্র তেমনই বাঁকুড়া জঙ্গলমহলের খাদ্যাভাসেও রয়েছে বিপুল বৈচিত্র। জঙ্গলমহলের ছাতু অর্থাৎ মাশরুম একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। বিভিন্ন ধরনের মাশরুম পাওয়া যায় যেমন শিতাকে মাশরুম, ওয়েস্টার মাশরুম, পোঁয়াল মাশরুম এবং বালি মাশরুম। কখনও শুধুমাত্র মশলার সঙ্গে মিশিয়ে মুখরোচক ছাতু খান স্থানীয়রা। আবার ঝোল করে কিংবা পকোড়া করেও খাওয়া হয় জঙ্গলমহলের ছাতু। এবং সেই চিত্রই ধরা পড়লবাঁকুড়া শহরের মুখ্য বাজারে।
নীলাঞ্জন ব্যানার্জী