বনোয়ারীলাল চৌধুরী, পূর্ব বর্ধমান: হাসপাতালেই বড় হচ্ছে কথা। জন্মগ্রহণের পর বর্তমানে কথার সঙ্গী এখন হাসপাতালের নার্স এবং ডাক্তাররা। তবে কে এই কথা ? আসলে এক ছোট্ট শিশুর নাম হল কথা। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে, কালনা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অন্তরা বিশ্বাস নামের তরুণী। হাসপাতালেই তিনি জন্ম দেন এক কন্যাসন্তানের। তবে পরবর্তীতে মারা যান অন্তরা। ভাগ্যের এমন পরিহাস, যে তার কিছুদিনের মধ্যে অন্তরা দেবীর স্বামীরও মৃত্যু হয়। হাসপাতালের নার্স এবং চিকিৎসকরাই হয়ে উঠেছেন এই ছোট্ট শিশুর অভিভাবক।
ভালবেসে নার্সরা তার নাম রেখেছেন কথা। এই প্রসঙ্গে কালনা হাসপাতালের নার্স রমলা রক্ষিত বলেন, “কথা জন্মের পর খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তবে এখন মোটামুটি সুস্থ আছে। ওর সঙ্গে আমাদের একটা ভাল বন্ডিং তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমরা চাইবও বড় হোক, ভালভাবে পড়াশোনা করে শিক্ষিত হয়ে উঠুক। “
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে কথার জন্মের পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে হাসপাতালের ডাক্তার এবং এসএনসিইউ ইউনিটের নার্সদের তৎপরতায় ধীরে ধীরে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। মাতৃস্নেহে কথাকে বড় করে তুলছে কালনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। খাওয়ানো থেকে শুরু করে ঘুম পাড়ানো, কথার সমস্ত দায়িত্বই এখন তাঁদের। এই প্রসঙ্গে হাসপাতালের নার্স রমলা রক্ষিত আরও বলেন, “ও কখন খাবে , কখন ঘুমোবে সবকিছুই আমরা দেখাশোনা করছি। নামও রেখেছি কথা। ওর চোখ খুব সুন্দর, এত মায়াভরা চোখ যে তাকালে চোখ ফেরানো যাবে না।”
তবে বর্তমানে হাসপাতালের নার্সদের মন এখন খারাপ। কারণ আর কিছুদিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে চলে যেতে হবে কথাকে। হাসপাতালের তরফে কথার জন্য একটা সেফ হোমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে জেলা চাইল্ড প্রোটেকশন ওয়েলফেয়ার কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হবে কথাকে। বাবা-মাকে হারানোর পরে নার্সরাই আপন করে নিয়েছিলেন কথাকে। ছোট্ট দুধের শিশুর দায়িত্ব নিতে চায়নি তার পরিবারের সদস্যরাও। স্নেহ ভালবাসা দিয়ে এক মাসেরও বেশি সময় তার দেখভাল করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই। তবে এবার কথার চলে যাওয়ার পালা , সে কারণেই মন খারাপ হাসপাতালের সকলেরই।