জঙ্গলে হাতিটি

Elephant Death: মর্মান্তিক মৃত্যু স্ত্রী হাতির! জ্বলন্ত শলাকা ছুড়ে হত্যা, প্রতিবাদে গর্জে উঠল জঙ্গলমহল

ঝাড়গ্রাম: বন্যেরা বনে সুন্দর। তবে ধীরে ধীরে জীবন নিয়ে আশঙ্কায় প্রাণীকূল। জঙ্গলমহলেই ঘটে গেল এক ভয়ানক ঘটনা, শুনলে গা শিউরে উঠবে। দিকে দিকে শুরু হয়েছে আন্দোলন। কার গাফিলতিতে এত বড় ঘটনা, জবাব চাইছে সাধারণ মানুষ থেকে পশুপ্রেমীরা। জ্বলন্ত শলাকা বিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল এক পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী হাতির। যা নিয়ে রীতিমত হতবাক বন্যপ্রাণ প্রেমীরা। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শুধু জঙ্গলমহল নয় পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। রাস্তায় নেমেছে বিভিন্ন সংগঠন।

খাবারের খোঁজে জঙ্গল ছেড়ে শহরে ঢুকে পড়েছিল হাতিটি। আর সেই কারণেই বড় মাশুল গুনতে হল একটি স্ত্রী হাতিকে। জ্বলন্ত শলাকায় বিদ্ধ হয়ে কাতর যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল স্ত্রী হাতিটি। হাতির মৃত্যুর পর গর্জে উঠেছে জঙ্গলমহল ঝাড়গ্রাম। ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল সংঘটিত হচ্ছে ঝাড়গ্রামে। সামাজিক মাধ্যমে গর্জে উঠছে নেটিজেনেরা।

অভিযোগ, হাতি তাড়ানোর সময় হুলা পার্টির কোনও এক সদস্য হাতিটিকে লক্ষ্য করে জ্বলন্ত শলাকা ছুড়ে দেয়। যা হাতিটির মেরুদণ্ডে গিয়ে আটকে যায়। মেরুদণ্ডে জ্বলন্ত হুলার শলাকা ঢুকে যেতেই কাতর চিৎকার শুরু করে স্ত্রী হাতিটি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার পেছনের দু’টি পা অকেজ হয়ে যায়। দীর্ঘ চেষ্টার পর নিজে শুঁড় দিয়ে শলাকাটিকে ধরে শরীরের বাইরে থেকে বার করে ছুড়ে ফেলে স্ত্রী হাতিটি। কাতর চিৎকার করতে করতে হামাগুড়ি দিতে থাকে। এই অবস্থায় হাতিটি অচৈতন হয়ে গেলে তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কে।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন অর্থাৎ ১৬ অগাস্ট মৃত্যু হয়। ১৭ আগস্ট হাতিটির ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তের পরেই সোশ্যাল মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, হুলা পার্টির জ্বলন্ত শলাকায় বিদ্ধ হয়ে কেবলমাত্র একটি হাতির নয় দু’টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। হাতিটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল বলেও দাবি করা হয়। যদিও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে হাতিটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল কি না সেই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেনি বনদফতর।

স্বাধীনতা দিবসের সকালে দুবরাজপুর হয়ে শাবক-সহ পাঁচটি হাতির একটি দল ঝাড়গ্রাম শহরের বিদ্যাসাগরপল্লী এলাকায় ঢুকে পড়ে। হাতির দলে থাকা একটি পুরুষ হাতির আক্রমণে একজন শহরবাসীর মৃত্যু হয়। তারপরেই বনদফতর ঘুমপাড়ানি গুলি করে পুরুষ হাতিটিকে পাকড়াও করে জঙ্গলে ছেড়ে দেয়। বাকি চারটি হাতি আশ্রয় নেয় নতুন জেলা শাসকের অফিসের পাশে থাকা পরিত্যক্ত প্রাণিসম্পদ দফতরের পাঁচিল ঘেরা একটি ছোট্ট জঙ্গলে।

হাতি দেখার জন্য শহরবাসীর ভিড় উপচে পড়েছিল চারিদিকেই। এই অবস্থায় বনদফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সূর্যের আলো নামার পর এই চারটি হাতিকে ড্রাইভ করে জঙ্গলে পাঠানো হবে। কিন্তু বিকেলের পর চিত্রটা বদলে যায়। হুলা পার্টির সদস্যরা হাতিগুলিকে জঙ্গলে পাঠানোর জন্য কাজে নেমে পড়ে। দলটির সঙ্গে শাবক থাকায় স্ত্রী হাতিটি উত্তেজিত অবস্থায় ছিল।

আরও পড়ুন: এক ফোন কলেই সুরক্ষা মিলবে মহিলাদের, আরজি কর কাণ্ডের পর এলাকার যুবকদের উদ্যোগ

হাতিটিকে বাগে আনার জন্য হুলা পার্টির এক সদস্য পরিত্যক্ত একটি একতলা বাড়ির উপর উঠে স্ত্রী হাতিকে জ্বলন্ত শলাকা ছুড়ে মারে। যার ফলেই মৃত্যু হয় হাতিটি। এমনই অভিযোগ সামনে আসছে। অভিযোগকে সামনে রেখে প্রতিবাদ মিছিল করা হয় ঝাড়গ্রাম শহরে। কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গের ডাকে প্রতিবাদ মিছিল সংঘটিত হলেও প্রতিবাদ মিছিলে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পা মেলান শহরের বহু মানুষ। তবে অবিলম্বে দোষীদের শাস্তি দাবি তুলেছেন সকলে। গোটা ঘটনার তদন্তে বনদফতর। যদিও এ বিষয়ে বন আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি কোনও প্রতিক্রিয়া।

রঞ্জন চন্দ