ভগবানের পাদপদ্ম

Doi Chida Utsav: মহাপ্রভুর নির্দেশে আজও দই-চিঁড়ে বিতরণ হচ্ছে! দণ্ড মহোৎসবে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড়

উত্তর ২৪ পরগনা: সাড়ম্বরে জেলায় পালিত হল দই-চিঁড়ে উৎসব। পানিহাটির চিঁড়ে মহোৎসবের সূচনা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সময় থেকে এই চিঁড়ে উৎসব বা দণ্ড উৎসবের প্রথা চলে আসছে। সেই প্রথা মেনে এই বছর ৫০৮ তম দণ্ড মহোৎসব পালিত হল পানিহাটি গঙ্গার তীরবর্তী মহোৎসবতলা ঘাটে।

এই মহোৎসবে শুধু পানিহাটি নয়, সারা জেলা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বৈষ্ণব ধর্মালম্বী ভক্তরা ভিড় করেন। এমনকি ভিন রাজ্য থেকেও বহু ভক্ত আসেন এখানে। কথিত আছে, ঐশ্বর্যমণ্ডিত সপ্তগ্রামের রাজার একমাত্র পুত্র ছিলেন রঘুনাথ দাস গোস্বামী। তিনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মহিমায় আকৃষ্ট হয়ে বিপুল ঐশ্বর্য ও তার রূপসী পত্নীকে পরিত্যাগ করেন। মহাপ্রভুর দেখা পেতে তিনি নানা জায়গায় ঘুরতে থাকেন। একদিন প্রভু নিত্যানন্দ পানিহাটি গ্রামে এসেছেন শুনে রঘুনাথ দাস গোস্বামী সেখানে যান। সেখানে ভক্তদের ভিড় থাকায় তিনি দর্শনলাভের জন্য আকুল আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন। গঙ্গার তীরে যেখানে ভক্তদের সাথে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু বসে ছিলেন, সেখানে তিনি উপস্থিত হয়ে দূর থেকে দেখলেন গঙ্গাতট আলোকিত করে একটি বৃক্ষমূলে ভক্তপরিবৃত হয়ে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু বসে আছেন। শ্রী রঘুনাথ তাঁকে দেখেই দূর থেকে ষাষ্টাঙ্গে দণ্ডবৎ জানালেন।

আর‌ও পড়ুন: যোগ দিবসে বাংলার জন্য বিরাট খুশির খবর, চমক রায়দিঘির কিশোরের!

জমিদার শ্রী গোবর্ধন দাসের পুত্র রুঘুনাথ পানিহাটিতে এসেছেন, সেই খবর পেয়ে সারা গ্রামে সাড়া পড়ে গেল। ভক্তরা সেই সমাচার শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর শ্রীচরণে নিবেদন করেছিলেন। তিনি রঘুনাথের নাম শুনে বলে ওঠেন, ‘‘ওরে চোরা, এতদিনে দর্শন দিলি! আয়, আয়, আজ তোরে দণ্ড দেব।’’ নিত্যানন্দ প্রভু এভাবে আদর করে ডাক দিলেও শ্রী রঘুনাথ দ্বিধায় সঙ্কোচে দূরে দূরে থাকছিলেন। তখন শ্রীনিত্যানন্দ তাঁকে জোর করে কাছে টেনে এনে তাঁর মাথায় তাঁর শ্রীপাদপদ্ম স্পর্শ করান৷ এর পর মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য দেব উপস্থিত ভক্ত বৃন্দকে বলেছিলেন, রঘুনাথ দাস গোস্বামীকে শাস্তিস্বরূপ এখানে উপস্থিত সকলকে আহার হিসেবে দই-চিঁড়ে খাওয়াতে হবে। সেইই থেকে শুরু এই দই-চিঁড়ে উৎসবের।

প্রতি বছর পানিহাটির মহোৎসবতলা ঘাটে দণ্ড মহোৎসব পালিত হয়। এ বছরেও যথারীতি মহা ধুমধাম করে সেই প্রথা পালিত হয়েছে। তবে কয়েক বছর আগে এই দণ্ড মহোৎসব ঘিরে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, ভিড়ের চাপে বহু মানুষ পদপৃষ্ঠ হন। তারপর থেকেই প্রশাসনের তরফে বাড়তি সর্তকতা নেওয়া হয়েছে এই উৎসব ঘিরে। এদিনও তাই উৎসব পালনে ভক্তদের ভিড় লক্ষ্য করা যায় পানিহাটি মহোৎসব তলা ঘাটে। কোন‌ও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সেদিকে কড়া নজর ছিল প্রশাসনের। আগত ভক্তদের যাতায়াত ও যোগাযোগের সুবিধার দিকেও বাড়তি নজর রাখা হয়েছে এবছর। এদিন এই উৎসব উপলক্ষে ভক্ত সমাগমের মধ্যে দিয়ে পানিহাটি মহোৎসব তলা ঘাটে চলছে দন্ড মহোৎসব পালন।

রুদ্রনারায়ণ রায়