শ্রীরামপুর: শ্রীরামপুরের গোস্বামী বাড়ির দুর্গাপূজা। প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন এই বনেদি বাড়ির পুজো। এই দুর্গাপুজো প্রচলিত ‘বুড়িমার দুর্গা’ নামে। বৈষ্ণব রীতিতে দেবী দশভুজার পুজোপাঠ হয়। রীতি মেনেই দুর্গা পূজার ঠাকুরদালানে একচালার ঠাকুর পুজো হয়। এক সময় এই পুজোতেই চারদিন ভিয়েন বসত। পাত পড়ত সবার জন্য। পালাগানের আসর বসত রাতভর। এখন আর সেই জৌলুস নেই। তবে রীতি মেনে পুজো হয়। কুমারী পুজো থেকে সন্ধিপুজো-নিয়মনিষ্ঠায় খামতি থাকে না।
দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন হলেও কাঠামো থেকে যায় বছর বছর। জাঁক জমক কমেছে আগের তুলনায়, তবে নিয়ম নিষ্ঠা এখনো আছে আগের মতোই।শ্রীরামপুরের গোস্বামী বাড়িকে সিনেমায় দেখেছেন অনেকেই। ভূতের ভবিষ্যতের কথা মনে আছে? সেইখানে ভূতেদের যে বাড়িটি ছিল সেটি হল হুগলি শ্রীরামপুরের গোস্বামীবাড়ি। শ্রীরামপুর শহরের মধ্যে এটি শ্রীরামপুর রাজবাড়ি নামেও বিখ্যাত।
সুবিশাল বৃহৎ এই অট্টালিকার তৈরির পেছনে রয়েছে এক ইতিহাস।নবাব আলিবর্দির খাঁ শাসনকালের সময়ের ঘটনা। কথিত, পরিবারের পূর্বপুরুষ রামগোবিন্দ গোস্বামী একদিন পাটুলি থেকে গঙ্গাবক্ষে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা করেন। পথে তাঁর স্ত্রী মনোরমা দেবীর প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। তাই শ্রীরামপুরে থামতে বাধ্য হন। নৌকা থেকে নেমে শ্রীরামপুর তাঁর খুব পছন্দ হয়। শেওড়াফুলির তৎকালীন রাজা মনোহর রায় জানতে পেরে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করেন। রামগোবিন্দ দুর্গাপুজো শুরু করেন যা বড় বাড়ির পুজো নামে পরিচিত হয়।
আরও পড়ুন : এ বছর কালীপুজো কবে? কতক্ষণ থাকছে অমাবস্যা তিথি? রইল নিশীথ পূজার সময়
পরবর্তীকালে রাম গোবিন্দর নাতি হরিনারায়ণ গোস্বামীর আমলে পরিবার ভাগ হয়। তিনি ও তাঁর পুত্র রঘুরাম গোস্বামী চাতরায় বিশাল অট্টালিকা তৈরি করেন। বিরাট নাটমন্দির ঠাকুরদালান তৈরি হয়। সেখানেই শুরু হয় দুর্গাপুজো।বর্তমানে, পারিবারের অনেকেই বিদেশে থাকেন। তবে পুজোতে সবাই নিজের আদি বাড়িতে আসার চেষ্টা করেন। যাঁরা আসতে পারেন না তাঁদের জন্যই প্রতিবছর সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং করা হয় গোস্বামী বাড়ির ফেসবুক পেজ থেকে। যাতে দূরে থেকেও আপনজনরা পুজোর আনন্দ একইভাবে অনুভব করতে পারে।