পুজো মণ্ডপে ফুটে উঠতে চলেছে দলমা পাহাড়ের কথা

Durga Puja 2024: কেন হাতি চলে আসছে জঙ্গলমহলে? পুজো মণ্ডপেই এবার দলমা পাহাড়ের কথা!

ঝাড়গ্রাম : এবার পুজো মণ্ডপে ফুটে উঠতে চলেছে জঙ্গলমহলে জ্বলন্ত সমস্যার কথা। যেখানে হাতি এবং মানুষ উভয়ই বিপদের মুখে। একে অপরকে রক্ষা করতে মরিয়া। হাতি এবং মানুষের উভয়েরই অস্তিত্ব সংকটে। পুজোর মন্ডপে ফুটে উঠতে চলেছে দলমা পাহাড়ের কথা। দলমা পাহাড়ে বসবাস করা হাতিদের কথা। দলমা পাহাড় ছেড়ে জঙ্গলমহলের সমতলে কেনই বা চলে আসে হাতির দল। আর তার ফলে হাতির হানায় মানুষের মৃত্যু, ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং একাধিক কারণে হাতির মৃত্যুও ঘটছে। সবই ফুটে উঠতে চলেছে পূজা মন্ডপে।

ঝাড়গ্রাম থানার অন্তর্গত পায়রাচালী এলাকায় পিন্ডরা মোড় সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির এই বছরের থিম  “দলমা হিল”। যেখানে দেখান হয়েছে দলমায় শান্তিতে বসবাস করছে হাতির দল। খনিজ পদার্থ উত্তোলনের জন্য দলমায় পাহাড় কাটা হচ্ছে এবং লরিতে লোড করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্যত্র। ফলে বাসস্থান হারিয়ে যাচ্ছে হাতিদের। দেখা দিচ্ছে খাদ্যাভাব। তাই হাতি দলমা ছেড়ে জঙ্গলমহলের সমতলে চলে আসছে। জঙ্গলমহলের আসার পর রেললাইন পারাপার করতে গিয়ে রেলের ধাক্কায় কাটা পড়ছে হাতি, তখন আবার বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হচ্ছে ,কখনো আবার নদী পারাপার করতে গিয়ে নদীর জলে ডুবে মৃত্যু হচ্ছে হস্তীশাবকে। ফলে হাতির বেঁচে থাকা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে, জঙ্গলমহলের এই সমতলে হাতি চলে আসায় জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলির মানুষজনের বসবাস দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। হাতির হানায় প্রায় মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। জঙ্গলে কাঠ,পাতা সংগ্রহ করতে গিয়ে, আবার কখনও বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় হাতির হানায় মৃত্যু হচ্ছে নিরিহ গ্রামবাসীদের। অপরদিকে হাতির হানায় প্রতিনিয়ত ভাঙছে ঘরবাড়ি নষ্ট হচ্ছে ফসল। সবই ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে পুজোমন্ডপে। জোর কদমে চলছে তার কাজ। এছাড়াও জঙ্গলমহলের জনপ্রিয় হাতি রামলালের কথাও ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। চলন্ত গাড়ি দাঁড় করে খাবারের সন্ধান করছে রামলাল তাও দেখা যাবে এই পুজো মন্ডপে।

পুজো মন্ডপের ভাবনা বাস্তব থেকেই নেওয়া। পুজোকমিটির সঙ্গে জড়িত থাকা দশটি গ্রাম জঙ্গল লাগোয়া । তাই প্রতিনিয়ত তাদের এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পুজো কমিটির সদস্য বিশ্বরূপ মল্লদেবের পরিকল্পনায় শিল্পী সীমন্ত সিংহ ও অন্যান্য শিল্পী সহযোগিতায় বাস্তবের রূপ দেওয়া হচ্ছে হাতি এবং মানুষের সমস্যার কথাকে।

পুজো কমিটির সভাপতি প্রবীর শ্যামল বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামগুলি চারিদিক থেকে জঙ্গলে ঘেরা। তাই প্রতিনিয়ত এলাকায় হাতি খাবারের সন্ধানে প্রবেশ করছে। ফলে হাতির হানায় মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি ঘরবাড়ি ভাঙচুর এবং ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। অপরদিকে রাস্তা পারাপারের সময় ট্রেনে কাটা পড়ে হাতির মৃত্যু হচ্ছে , বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে, কখন আবার নদী পারাপার করতে গিয়ে জলে ডুবে হস্তিশাবকের মৃত্যু হচ্ছে। ফলে হাতি এবং মানুষ উভয়েই সংকটে রয়েছে। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হল তার কারণ হচ্ছে দলমা পাহাড় এখন হাতিদের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। খনিজ সম্পদ সংগ্রহের জন্য ধ্বংস করা হচ্ছে দলমার পাহাড়গুলিতে। যার ফলে হাতি এই এলাকায় ঢুকে পড়ছে এবং তারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ফলস্বরূপ মানুষের জীবনযাত্রাতেও তার প্রভাব পড়ছে। তাই মানুষের কাছে সমস্যার কথা তুলে ধরার জন্যই আমাদের এই মন্ডপের ভাবনা চিন্তা।’’

হাতি এবং মানুষের সমস্যার কথা পুজোমণ্ডপের মধ্য দিয়ে তুলে ধরায় পুজোর উদ্যোক্তাদের একমাত্র লক্ষ্য। পুজো কেবলমাত্র আনন্দ নয় তার পাশাপাশি তাদের সমস্যার কথাও মানুষের কাছে তুলে ধরা এবং রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার হাতির সমস্যা সমাধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে পুজোর উদ্যোক্তারা।

বুদ্ধদেব বেরা