Folk Culture: গাভী বাছুরের জন্ম দিলেই শুরু হত হাচো গীত জারির গান! বিলুপ্তির মুখে আরেক লোকগান

মুর্শিদাবাদ: একসময় হাচো গীত জারির গানের ব্যাপক প্রচলন ছিল। এই গান আনন্দে-উল্লাসে ভাসিয়ে দিত গোটা গ্রামকে। আজ সেই হাচো নতুনভাবে দেখা গেল জলঙ্গিতে।

হাচো গীত জারি মূলত গাভীর বাছুর হওয়াকে কেন্দ্র করে গৃহস্থের বাড়িতে হয়ে থাকে। এটি একটি আনন্দ সঙ্গীত। তবে এটা আনন্দ উল্লাসের পাশাপাশি গাভীর দুধ, গোয়াল ঘরে ঢোকা নিয়ে এবং সেই বাড়ির গৃহস্থের কী করনীয় তা গানের কথার মধ্যে দিয়ে তুলে ধরে। একসময় এই হাচো গীত জারির প্রচলন ছিল গ্রামে গ্রামে। আজ সেই লোকগান বিলুপ্তির পথে। প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর পর আবার জলঙ্গির ঝাউদিয়া গ্রামে কবিরুল মণ্ডলের বাড়িতে শোনা গেল প্রাচীন হাচো গীত জারির গান।

আর‌ও পড়ুন: উত্তরবঙ্গের এই বাদ্যযন্ত্রের সুর আপনাকে মোহিত করবেই

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাচো মূলত শত বছর আগে প্রচলন ছিল। ধীরে ধীরে তার চাল কমতে শুরু করে। গ্রামে যাদের গরু থাকত এবং কোন‌ও গরুর বাছুর হলেই সেই বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই হাচো গীত জারি গাওয়া হত।

তবে হাচো গীত গাইতে কিছু উপকরণ লাগে- পান-সুপারি, দুর্বা ঘাস, তেল, হলুদ, মাটির প্রদীপ, জল, গরুর দুধ, লাল গামছা সহ আরও কয়েকটি জিনিস। এসব সামগ্রী দিয়ে গৃহস্থের উঠানে দুটো গর্ত করা হয়। এক গর্তে থাকে জল অপর গর্তে থাকে সেই গরুর দুধ। আর সামনে বসানো থাকে সারি সারি ৫ টি কুলো। সেই কুলতে গরুর দুধ ও চালের ময়দা দিয়ে বানানো নাড়ু থাকে। আর সেই নাড়ু ঘটনাস্থল থেকে চুরি যেন না হয়ে যায় সেই কারণে পাহারা দেন কয়েকজন। তারপরেই শুরু হয় সেখানে উচ্চস্বরে হাচো গীত জারি। যা মুগ্ধ করে আট থেকে আশি সকলকে। তবে জারি শেষে, সেই গর্তের দুধ কে খাবে এই নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা।

হাচো গীত জারির উস্তাদ খাদিম মণ্ডল বলেন, আমার দাদু সেই সময় এইসব করে থাকত। তারপরে আমি ৩০ বছর যাবৎ এই হাচো গীত জারি করে আসছি। বাড়িতে প্রথম গরুর বাছুর হওয়ার এক মাসের মধ্যেই এর আয়োজন করে থাকেন বাড়ির মালিক। আমাদের নিমন্ত্রণ করলে আমরা সেই বাড়িতে গিয়ে এই হাচো সুন্দরভাবে পরিবেশন করে থাকি। এতে মানুষ যেমন আনন্দ পায় তেমন‌ই এর অনেক উপকারিতাও আছে বলে দাবি করেন তিনি ।

কৌশিক অধিকারী