পাঁচমিশালি GK: বলুন তো, পৃথিবীতে কোন প্রাণী প্রথম পোষ মানিয়েছিল মানুষ? শুনলে কিন্তু চমকে উঠতে বাধ্য হবেন Gallery August 15, 2024 Bangla Digital Desk মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি বড় ধাপ ছিল কৃষিকাজের সূচনা, যা মানুষের বসবাসে স্থায়িত্ব নিয়ে আসে, আর প্রায় সব মরশুমে খাদ্য লাভের নিশ্চয়তাও দেয়। তাই সভ্যতার ইতিহাসে কৃষিকাজের অবদান কোনও দিন ভোলার নয়। তবে কৃষিকাজের সূচনার ফলে সাময়িকভাবে অন্য একটি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল মানুষকে। কী সেটি? কৃষিকাজের মাধ্যমেই খাদ্যের নিশ্চয়তা থাকায়, তারা পশু শিকার অনেকাংশেই বন্ধ করে দিয়েছিল। কৃষিকাজ করেই যদি সারা বছর খাদ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়, তাহলে আর কষ্ট করে বন্য পশু শিকার করতে যাওয়ার কী দরকার, এমনটিই ছিল সেসময়ের অনেক মানুষের চিন্তা। এর ফলে তাদের প্রাত্যহিক খাদ্য চাহিদা হয়তো মিটছিল, কিন্তু সেই খাদ্যে একটি বিশেষ পুষ্টি উপাদানের অভাব রয়েই যাচ্ছিল। সেটি হল আমিষ। তবে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ জন্মগতভাবেই দারুণ বিচক্ষণ, সে কারণেই তারা এই সমস্যারও একটি কার্যকর সমাধান করে ফেলতে খুব বেশি সময় নেয়নি। তারা ভেবে দেখল, কষ্ট করে বন্যপ্রাণী শিকার আর না-ই বা করলাম, কিছু পশুকে পোষ তো মানানো যায়, যারা সময়ে-অসময়ে দুধ ও মাংসের মাধ্যমে আমাদের আমিষের অভাব পূরণ করবে! এবং এভাবে নিজেদের প্রয়োজনেই মানুষ কেবল কৃষিকাজেই সীমাবদ্ধ না থেকে, পশুপালনেও ব্রতী হল। গবাদি পশুপালন মানবসভ্যতায় নতুন মাত্রা যোগ করে। এবং অনেকেই জেনে অবাক হবেন, গবাদি পশুপালনের ইতিহাস কিন্তু খুব সাম্প্রতিক কিছু নয়। মানুষের সঙ্গে বন্য গবাদি পশুর সম্পৃক্ততা হাজার বছর ধরে চলে এসেছে। আনুমানিক গত ১০,৫০০ বছর ধরে মানুষ গবাদি পশুকে ঘরোয়াভাবে পালন করে চলেছে। আর এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রভূত উন্নতি সাধন হয়েছে মানুষের সভ্যতার। একদিকে যেমন তাদের দুধ ও মাংসের মাধ্যমে আমিষের অভাব দূর হয়েছে, অন্যদিকে এসব গবাদি পশুকে দিয়ে লাঙল, গাড়ি ও বোঝা টানানোও সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি পশুর চুল, চামড়া, খুর, হাড় দিয়ে পোশাক ও কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি, এবং গোবর দিয়ে কৃষিজমিতে সার প্রয়োগ করা গেছে। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, ঠিক কবে থেকে পালন শুরু হলো গবাদি পশু, এবং এরাই কি মানুষের পোষ মানা প্রথম বন্যপ্রাণী? পরের প্রশ্নটির উত্তর আগে দেওয়া যাক। না, গবাদি পশুই মানুষ প্রথম পালন করেনি। মানুষের প্রথম পোষ মানা প্রাণী ছিল কুকুর। প্রস্তরযুগ শেষ হওয়ার আগেই, এমনকি কৃষিকাজ ও অন্যান্য পশুপালনেরও আগে, পোষ মেনেছিল কুকুর। তবে মেসোপটেমিয়ায় কৃষিকাজের সূচনা ঘটার পর, ওই একই সময়ের দিকে সেখানকার মানুষ কিছু পশুদেরও পোষ মানাতে শুরু করে। প্রথম পোষ মেনেছিল ছাগল, আর এর অব্যবহিত পরেই ভেড়াও। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মুরগিও পালন শুরু হয়েছিল। ইউরোপে এখনও যেসব নব্যপ্রস্তরযুগীয় খামারের নিদর্শন অবশিষ্ট রয়েছে, সেগুলো থেকে জানা যায়, গবাদি পশুরা মূলত দুইটি পথে ইউরোপে পৌঁছেছিল: একটি ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল, অপরটি দানুবে নদী। এই দুই পথ দিয়ে তারা খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের দিকে প্রথম উত্তরসাগরীয় উপকূলে পদার্পণ করে। এছাড়া ধারণা করা হয়, গবাদি পশুরা উত্তর এশিয়ায় বসতি স্থাপন করতে ব্যবহার করেছিল ককেশাস রুট। আফ্রিকায় এই পশুরা প্রথম পা রেখেছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০-৪০০০ অব্দের দিকে। এছাড়া গবাদি পশুর অপর সর্ববৃহৎ অভিবাসন ঘটেছিল পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য পতনের সময়ে, জার্মানদের হাত ধরে।