সাবিত্রীবালা দে ও তাঁর নামাঙ্কিত সেতু

Indipendence Day 2024: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়ে বিপন্ন জীবন, বীরাঙ্গনা হয়েও ব্রাত্য সাবিত্রীবালা

তমলুক : ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের এক অজানা নাম সাবিত্রী দেবী। তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী হাজরাকে সবাই চেনেন। কিন্তু আর এক বীরাঙ্গনার কথা খুব একটা মানুষ জানে না। কিন্তু ৪২-এর অগাস্ট আন্দোলনের সময়েরও ভূমিকা ছিল অপরিহার্য! পেশাগত কারণে তাঁরা সমাজে ‘পতিতা’ ছিলেন। কিন্তু তা সত্বেও দেশসেবায় নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্বদেশি আন্দোলনে। এই মহিলার জীবনকাহিনি শুনলে অবাক হবেন। তাঁর নামও উল্লেখের দাবি রাখে ইতিহাস। তিনি হলেন সাবিত্রীবালা দেবী।

ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে সেদিন অসংখ্য দেশপ্রেমিক রক্তাক্ত হয়ে, আহত হয়ে মাটিতে পড়ে একফোঁটা জলের জন্য বুকফাটা কান্নায় কাতরাচ্ছেন। সেই আর্তনাদের খবর পেয়েই স্থানীয় এক গ্রাম্য মহিলা, যাঁর নাম সাবিত্রী দেবী, তিনি সমস্ত মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে, ছুটে গিয়েছিলেন তমলুক থানার কাছে শঙ্করআড়া পোলেতে এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকা আহত, রক্তাক্ত বিপ্লবী দেশপ্রেমিকদের মুখে তুলে দিয়েছিলেন পরম যত্নে পিপাসার জল। নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন সেই দেশমাতৃকার সন্তানদের সেবা-শুশ্রূষায়। আহতদের নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্তও তিনি করেছিলেন।

সাবিত্রীদেবী যখন আহতদের সেবা-শুশ্রূষা করছেন, তখন ব্রিটিশ পুলিশকর্মীরা  রাইফেল উঁচিয়ে সাবিত্রীদেবীকে ভয় দেখিয়ে গুলি করে মেরে ফেলার হুঙ্কারও দিয়েছিল বার বার। ইংরেজ পুলিশবাহিনী বন্দুক উঁচিয়ে তেড়ে আসে। সাবিত্রীদেবীও বাড়ি থেকে ঝাঁটা ও বঁটি হাতে ইংরেজ বাহিনীর দিকে এগোতে থাকেন। তাঁর সঙ্গে আরও অনেক বীরাঙ্গনা  বঁটি ও ঝাঁটা হাতে ইংরেজ বাহিনীকে ধাওয়া করে। অকুতোভয় সাবিত্রীদেবীকে তাঁরা সেদিন দমাতে পারেনি। তাঁর সেই রণংদেহী মূর্তি দেখে ইংরেজ পুলিশ বাহিনীও সেদিন থমকে গিয়েছিল। অথচ বীরাঙ্গনা সাবিত্রী দেবী ছিলেন তথাকথিত সমাজচ্যুত এক বারাঙ্গনা নারী। এই ঘটনা সেদিন সারা বাংলা তথা সারা ভারতবর্ষকে বিস্মিত করেছিল। একজন অবহেলিত, অপমানিত, উপেক্ষিত, গ্রাম্য দরিদ্র মহিলা কীভাবে বীরাঙ্গনায় রূপান্তরিত হন— তার প্রামাণ্য নিদর্শন দেখে।

আরও পড়ুন : ঢাকায় ক্ষোভের আগুনে ভস্মীভূত জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড ‘জলের গান’-এর প্রধান শিল্পী রাহুল আনন্দের বাড়ি, পুড়ে ছাই দলের সব বাদ্যযন্ত্র, গানের নথি থেকে আসবাবপত্র

এই প্রসঙ্গে সেই যুগের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এই খবর প্রকাশিত হয়েছিল। পত্রিকাগুলিতে সাবিত্রীদেবীর বীরগাথা নিয়ে চারণকবির একটি কবিতাও প্রকাশ হয়।যদিও এহেন বীরাঙ্গনা নারীর শেষ জীবন ছিল অত্যন্ত কষ্টের। চরম দারিদ্রে কাটে তাঁর জীবন। একটি হতশ্রী মাটির ঘরে, মাটির উনুন, ভাঙা তোবড়ানো একটি অ্যালুমিনিয়ম থালা, শতচ্ছিন্ন কাপড়জামা, কোনওদিন খেতে পেতেন, আবার কোনওদিন ছিল নিরম্বু উপোস। এই ছিল তাঁর দৈনন্দিন জীবন। সবশেষে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা সেই বীরাঙ্গনা ১৯৯২ সালে চিরঘুমে পাড়ি দেন ফেরার দেশে।