Tag Archives: Freedom Fighter

Howrah News: স্বাধীনতা সংগ্রামে স্থানীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইতিহাস জানাতে স্কুলে প্রদর্শনী 

স্বাধীনতা সংগ্রামে স্থানীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদান জানাতে বিদ্যালয়ে প্রদর্শনী! ৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে অভিনব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে সিরাজ বাটি চক্রের আমতা আওড়গাছি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্বাধীনতা সংগ্রামে স্থানীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদান জানাতে বিদ্যালয়ে প্রদর্শনী! ৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে অভিনব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে সিরাজ বাটি চক্রের আমতা আওড়গাছি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
প্রদর্শনীর বিষয় - স্বাধীনতা সংগ্রামে আমতা এবং বাগনান এলাকার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং এই এলাকার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা তুলে ধরা হয়েছে প্রদর্শনীর মাধ্যমে।
প্রদর্শনীর বিষয় – স্বাধীনতা সংগ্রামে আমতা এবং বাগনান এলাকার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং এই এলাকার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা তুলে ধরা হয়েছে প্রদর্শনীর মাধ্যমে।
আমতার রসপুরের শ্রীশ মিত্র ওরফে হাবু মিত্রের লুন্ঠন করা অস্ত্র নিয়ে বুড়ী বালামের তীরে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন বীর বিপ্লবী বাঘা যতীন। তখনকার বাগনান স্কুলে আত্মগোপন করেছিলেন বাঘা যতীন। তারই কিছু লেখা ও ছবি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।
আমতার রসপুরের শ্রীশ মিত্র ওরফে হাবু মিত্রের লুন্ঠন করা অস্ত্র নিয়ে বুড়ী বালামের তীরে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন বীর বিপ্লবী বাঘা যতীন। তখনকার বাগনান স্কুলে আত্মগোপন করেছিলেন বাঘা যতীন। তারই কিছু লেখা ও ছবি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।
আমতা অমরাগড়ির পুলিন বিহারী রায় লাহোরে জেলবন্দী ভগৎ সিং - কে জেল ভেঙে উদ্ধার করার জন্য লাহোর গিয়েছিলেন। তিনি অবশ্য সে সময় সফল হননি। ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে যান তিনি। টিটাগড় ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম নায়ক আনুলিয়ার কার্তিক সেনাপতি। বাগানানে জনসভায় ভাষণ দেন নেতাজী সুভাষ। বাগনানের আগুন্সীতে কাজী নজরুল ইসলাম স্বরচিত দুটি সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন তরুণদের স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে।
আমতা অমরাগড়ির পুলিন বিহারী রায় লাহোরে জেলবন্দী ভগৎ সিং – কে জেল ভেঙে উদ্ধার করার জন্য লাহোর গিয়েছিলেন। তিনি অবশ্য সে সময় সফল হননি। ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে যান তিনি। টিটাগড় ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম নায়ক আনুলিয়ার কার্তিক সেনাপতি। বাগানানে জনসভায় ভাষণ দেন নেতাজী সুভাষ। বাগনানের আগুন্সীতে কাজী নজরুল ইসলাম স্বরচিত দুটি সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন তরুণদের স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে।
বাগনানে দামোদর নদীর উপর নির্মিত সেতুটির নাম বিভূতি সেতু।এটি বাঙালপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামী বিভূতি ভূষণ ঘোষ- এর নামে।১৯৪৭- এর ১৫ ই আগস্ট বাগনান থানায় প্রথম বার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন স্বাধীনতা সংগ্রামী চন্ডী দাস ঘোষ।
বাগনানে দামোদর নদীর উপর নির্মিত সেতুটির নাম বিভূতি সেতু।এটি বাঙালপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামী বিভূতি ভূষণ ঘোষ- এর নামে।১৯৪৭- এর ১৫ ই আগস্ট বাগনান থানায় প্রথম বার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন স্বাধীনতা সংগ্রামী চন্ডী দাস ঘোষ।
নানা অজানা তথ্য সচিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রধান শিক্ষক প্রদীপ রঞ্জন রীত জানালেন , বর্তমান প্রজন্মের মানুষ জনদের কাছে স্থানীয় ভূমি সন্তান যাঁরা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন তাঁদের কথা তুলে ধরাই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য। এঁরা বিস্মৃতপ্রায়,'আনসাং হিরো'। প্রদর্শনীর মাধ্যমে একদিকে যেমন এঁদেরকে স্মরণ করে ওঁনাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা। এই প্রদর্শনী চলবে ২১/৮/২৪ বুধবার পর্যন্ত।
নানা অজানা তথ্য সচিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রধান শিক্ষক প্রদীপ রঞ্জন রীত জানালেন , বর্তমান প্রজন্মের মানুষ জনদের কাছে স্থানীয় ভূমি সন্তান যাঁরা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন তাঁদের কথা তুলে ধরাই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য। এঁরা বিস্মৃতপ্রায়,’আনসাং হিরো’। প্রদর্শনীর মাধ্যমে একদিকে যেমন এঁদেরকে স্মরণ করে ওঁনাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা। এই প্রদর্শনী চলবে ২১/৮/২৪ বুধবার পর্যন্ত।

Independence Day 2024: দণ্ডায়মান অবস্থায় দহকার্য হয়েছিল এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর! শেষদিনেও মাথা নত করেননি

পূর্ব মেদিনীপুর: অবিভক্ত মেদিনীপুর গোড়া থেকেই স্বাধীনতা আন্দোলনের ঘাঁটি ছিল। ইংরেজদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে তাদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন এখানকার বহু মানুষ। স্বাধীনতা আন্দোলনের সেই লড়াইয়ে আমজনতাকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁরা কখনই ব্রিটিশ শক্তির ভয়কে তোয়াক্কা করেননি। সেরকমই একজন হলেন বীরেন্দ্রনাথ শাসমল। তিনি মৃত্যুর পরেও ব্রিটিশের কাছে মাথা নত করেননি। কিন্তু বর্তমানে তাঁর‌ই জন্মভিটে অবহেলায় পড়ে রয়েছে।

বীরেন্দ্রনাথ শাসমল দেশের অন্যতম অগ্রণী স্বাধীনতার সংগ্রামী। মেদিনীপুরের মাটি তাঁর চরণ স্পর্শে ধন্য হয়েছে। মেদিনীপুরের এক লৌহ মানব যার তেজ দীপ্তমানতায় ইংরেজ সরকার বারবার হার মেনেছে। এই লৌহ পুরুষ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল৷ জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮১ সালের ২৬ অক্টোবর অবিভক্ত মেদিনীপুরের কাঁথি মহাকুমার চন্দ্রভেটি গ্রামের জমিদার পরিবারে। গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে কলকাতায় আসেন পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। কলকাতার তৎকালীন মেট্রোপলিটন কলেজে ভর্তি হন। কলেজে পড়াকালীন রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের বিভিন্ন বক্তৃতা তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। আইনপাস করার পর কলকাতা হাইকোর্টে বা অন্যান্য জেলার আদালতে স্বদেশী বিপ্লবীদের হয়ে তিনি মামলার লড়তেন। প্রয়োজনে সেইসব স্বদেশীদের আর্থিক সাহায্য‌ও করতেন।

আর‌ও পড়ুন: আদিবাসীদের ধামসা-মাদল উপহার, কেন জানেন?

স্বদেশী ও বিপ্লবীদের পীঠস্থান মেদিনীপুর। ইংরেজরা বিপ্লবীদের শায়েস্তা করার লক্ষ্যে মেদিনীপুর জেলাকে দু’ভাগ করে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে। ইংরেজদের এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে মেদিনীপুরবাসী। গর্জে ওঠেন বীরেন্দ্রনাথ শাসমল। ১৯১৯ সালে ইংরেজরা সিদ্ধান্ত নেয় মেদিনীপুর জেলায় ইউনিয়ন বোর্ড তৈরি করার। বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে শুরু হয় ইউনিয়ন বোর্ড প্রতিরোধ আন্দোলন। এই আন্দোলনে বীরেন্দ্রনাথ প্রতিজ্ঞা করেন যে, যতদিন না তিনি ইউনিয়ন বোর্ড তুলতে পারবেন, ততদিন পর্যন্ত তিনি খালি পায়ে ঘুরে বেড়াবেন। জুতো ছাড়াই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়ে ইউনিয়ন বোর্ডের খারাপ দিক সব শ্রেণির মানুষের কাছে তুলে ধরেন। এই আন্দোলনের চাপে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ সরকার ইউনিয়ন বোর্ডগুলি তুলে নেয়।

১৯২১ সালে কংগ্রেস দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়। কংগ্রেসের বঙ্গীয় সম্পাদক হিসেবে কলকাতায় হরতাল সংগটিত করেন বীরেন্দ্রনাথ শাসমল। চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষচন্দ্র বসু ও বীরেন্দ্রনাথ শাসমলকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ। বিচারে ছ’মাস কারাভোগ করেন বীরেন্দ্রনাথ শাসমল। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ফিরে আসেন মেদিনীপুরে। মেদিনীপুরের মানুষ তাঁকে ‘দেশপ্রাণ’ উপাধিতে ভূষিত করে। দেশপ্রাণ বীরেন্দ্র শাসমলের জনপ্রিয়তা সহ্য করতে পারত না ইংরেজ সরকার। তাঁর তেজস্বিতাকে সহ্য করতে না পেরে ইংরেজ সরকার তাঁকে ‘ব্ল্যাক বুল’ বলত।

চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলায় তিনি স্বদেশীদের পাশে দাঁড়িয়ে মামলা লড়েছিলেন হাইকোর্টে। মেদিনীপুরের জেলাশাসক ডগলাস হত্যা মামলায় তিনি আসামিদের পক্ষ হয়েই লড়াই করেছিলেন মেদিনীপুর আদালতে। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ২৪ নভেম্বর ১৯৩৪ সালে মারা যান। তিনি কারাবাসের সময় লিখেছিলেন “স্রোতের তৃণ” নামে আত্মজীবনীমূলক বই। সেই বইয়ে তিনি লিখেছিলেন, “আমি কখনও কারও কাছে মাথা নত করিনি। তাই আমার মৃত্যুর পর আমার মাথা যেন অবনত করা না হয়।” তাই বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের মৃত্যুর পর তাঁর ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে, তাঁর দেহকে দণ্ডায়মান অবস্থায় দাহ করা হয়। কিন্তু এই বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের জন্মভিটে আজ চূড়ান্ত অবহেলায় পড়ে আছে। মানুষ ভুলতে বসেছে এই মহান বীর দেশনেতাকে।

সৈকত শী

Independence Day 2024: ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে চিরকাল উজ্জ্বল দক্ষিণ ২৪ পরগণার প্রত্যন্ত! জানুন অজানা ইতিহাস

নবাব মল্লিক, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: দক্ষিণ ২৪ পরগনা, প্রায় কলকাতার গা ঘেঁষে অবস্থান এই জেলার। এই জেলা স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ঘাঁটি ছিল। এদিক থেকে দেখতে গেলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা অনেকটাই স্বতন্ত্র।

ইতিহাস, অবস্থান, ভূ-পরিচয় থেকে শুরু করে রাজনীতি, অর্থনীতি, পর্যটন-দক্ষিণ ২৪ পরগনার অনেক তথ্যই হয়তো সাধারণের কাছে অজানা। এই অজানাকে জানানোর উদ্দেশ্য এই ইতিহাস পরিচয়।

অনেকেই ভাবেন এই জেলার স্বাধীনতা সংগ্রাম কলকাতাকেন্দ্রিক বা এলিট শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে আদতে তা নয়। এই জেলার প্রান্তিক অঞ্চলে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছিল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন।

আরও পড়ুন : পড়েছিল নেতাজির পদধূলি, সুভাষচন্দ্র বসুর স্মৃতি অনুরণিত নবদ্বীপের রাধারমণ আশ্রমে

বজবজ থেকে কাকদ্বীপ সমস্ত অঞ্চলেই বিস্তৃত ছিল এই আন্দোলন। ১৭৬০ দিকে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ থেকে শুরু করে ১৯৪৬ সালের তেভাগা আন্দোলন কার্যত সব প্রতিবাদেই অংশ নিয়েছিলেন এই এলাকার বাসিন্দারা। অংশ নিয়েছিলেন নীল বিদ্রোহ, মহাবিদ্রোহেও।

স্বদেশী আন্দোলনের ধারায় ডায়মন্ড হারবার, নামখানা-সহ একাধিক জায়গায় শুরু হয়েছিল লবণ তৈরির কাজ। চলত খাদি বস্ত্র তৈরি। সহিংস আন্দোলনেও অংশ নিয়েছিলেন এই এলাকার বাসিন্দারা।

কানাইলাল ভট্টাচার্য, নিশিকান্ত মজুমদার, চারুচন্দ্র ভান্ডারী থেকে শুরু করে অনেক বড় স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম যেমন রয়েছে। তেমন রয়েছে নাম না জানা অনেক বিপ্লবীও। এই সমস্ত অনেক অজানা ইতিহাস আমাদেরকে জানিয়েছেন রায়দিঘি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রধান জাহান আলি পুরকাইত।

Independence Day 2024: বোমা তৈরি করতে গিয়ে হারান চোখ, এই স্বাধীনতা সংগ্রামীই পরবর্তীতে হন ছাত্রদরদী অধ্যাপক

রাহী হালদার, হুগলি: বোমা তৈরি করতে গিয়ে নষ্ট হয়েছিল কালুর চোখ, স্বাধীনতা সংগ্রামীর আট বছর কেটেছে ব্রিটিশদের কারাগারে। ২০০ বছর ধরে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে ১৯৪৭ সালের ১৫  অগাস্ট ভারত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে উন্মোচিত হয়েছিল। অত্যাচার, পরাধীনতার বেড়াজাল থেকে ভারতকে মুক্ত করতে আত্মবলিদান দিয়েছেন বহু বীর।

মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস, মহাত্মা গান্ধী, ভাগত সিং, রাজগুরু, ক্ষুদিরাম বসু, মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতি লতা ওয়াদ্দেদার, মাতঙ্গিনী হাজরা, জওহরলাল নেহরু-সহ অগণিত। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে অন্যতম এক সদস্য ছিলেন সুরেশপ্রসাদ রায়চৌধুরী ওরফে কালু। ১৯০৮ সালে অবিভক্ত পূর্ববঙ্গের পাবনা জেলার শক্তিপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পরে তাঁর বাবা মায়ের সঙ্গে রংপুরে চলে আসেন।

তাঁর মা ছিলেন কিরণবালাদেবী। তিনি রংপুর জেলা মহিলা কংগ্রেসের নেত্রী ছিলেন। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সুরেশ। তিনিও ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। বলা ভাল, মায়ের অনুপ্রেরণাতেই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বাদ পেতে যুগান্তর দলে নাম লিখিয়েছিলেন কালু।

১৯২০ সালে রংপুরের রায়চৌধুরী পরিবারের বসতভিটেটি হয়ে ওঠে বিপ্লবীদের গোপন আস্তানা। প্রায়ই ব্রিটিশ পুলিশ ঘেরাও করে রাখত এই বাড়িটিকে। কিন্তু বিপ্লবী সুরেশের মায়ের তখন বুদ্ধির কাছে বার বার হার মেনেছে ব্রিটিশ বাহিনী। কালুর বয়স যখন ২১, তখন ১৯২৭ সালে রংপুরের প্রাদেশিক যুব সম্মেলনে যুগান্তর দলের অবিভক্ত বাংলাদেশের রংপুর জেলার অন্যতম সংগঠক ছিলেন কালু। ১৯২৭ সালে প্রাদেশিক যুব সম্মেলনে কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে গেছিলেন কালু।

আরও পড়ুন : বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবসে কলকাতায় মেট্রো পরিষেবা কেমন থাকবে? প্রথম ও শেষ মেট্রোর সময় জানুন

তার কিছুদিন পরেই বোমা তৈরি করতে গিয়ে কালুর একটি চোখ নষ্ট হয়। সেই সময় মাস্টারদা সূর্য সেনের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ধাঁচেই জেলায় জেলায় সশস্ত্র আক্রমণের ছক ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কালু ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়েন বেঙ্গল অর্ডিন্যান্স আইনে। শুরু হয় পুলিশের অত্যাচার। বিচারাধীন বন্দি হিসেবে সুরেশ প্রেসিডেন্সি জেল ,বহরমপুর জেল, হিজলি রাজস্থানের দেউলী ডিটেনশন ক্যাম্পে কাটে তার আটটি বছর।

জেলের মধ্যেই টানা ২৪ দিন অনশন ধর্মঘট করেন সুরেশ ও তাঁর সঙ্গীরা। বিনয় বাদল দীনেশের আত্মবলিদান দিবসে হিজলি জেলের মধ্যে স্মরণ সভার আয়োজন করেছিলেন সুরেশ-সহ সমস্ত বন্দি। তখন ব্রিটিশ পুলিশ তাঁদের উপর গুলি চালায়। সেই গুলিতেই মৃত্যু হয় সন্তোষ মিত্র, তারকেশ্বর সেনগুপ্তের। যদিও সুরেশ বেঁচে গিয়েছিল। জেলে বসেই তিনি বিএ পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এরপরে দেশ স্বাধীন হয়। ৮ বছর পর জেল থেকে মুক্তি পান সুরেশ।

সুরেশপ্রসাদ ও তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যাদেবী অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বাবা তথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছের মানুষ শিক্ষাবিদ ক্ষিতিমোহন সেনের। সুরেশের স্কুলজীবনের বন্ধু ছিলেন সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর বাবা মনা গুহ। জেল থেকে মুক্ত হয়ে এবং স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর সুরেশ প্রথমে রঙপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। পরবর্তীকালে দেশভাগের সময় সুরেশ প্রথম চলে আসেন কলকাতায়। ১৯৫০ সালে গোপালচন্দ্র মজুমদারের হাত ধরে হুগলির খন্যানের ইটাচুনা বিজয় নারায়ণ মহাবিদ্যালয়ে ফিজিক্সের ডেমনস্ট্রেটর হিসাবে কাজে যোগদান তিনি। এবং কলেজ হস্টেলের সুপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি খন্যানের মুলটি মোড় এলাকায় বাড়ি তৈরি করেন। তাঁর দুই ছেলে সুখেশপ্রসাদ রায়চৌধুরী, সোমেশপ্রসাদ রায়চৌধুরী এবং দুই মেয়ে শিবানী রায়চৌধুরী ও সর্বাণী রায়চৌধুরী। বর্তমানে সুখেশবাবু কলকাতায় থাকলেও তাঁদের বসতভিটাতে থাকেন নাতিরা।

সুরেশপ্রসাদ রায়চৌধুরীর ছেলে সুখেশপ্রসাদ বলেন, ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। স্কুলের মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। পরে ভূপেন্দ্রকুমার দত্তের হাত ধরেই যুগান্তর দলের সঙ্গে যুক্ত হন। এই দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ, ডক্টর ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রফুল্ল চাকীরা। স্বাধীনতা সংগ্রামে সুরেশ প্রসাদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে তাম্রপত্র দিয়ে তাকে সম্মানিত করা হয়। এবং ভাতাও মঞ্জুর করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ১৯৭৫ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি প্রয়াত হন।

সুরেশবাবুর কলেজের দর্শন বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক সুনীলেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘১৯৬৩ সালে ইটাচুনা কলেজে দর্শনের অধ্যাপক হিসেবে আমি যোগদান করি। আমি তাঁকে সুরেশদা বলেই ডাকতাম। কলেজে আসার পথে প্রায়ই তাঁর কাছে বসতাম।তবে তিনি সাম্যবাদে বিশ্বাস করতেন। সেই সাম্যবাদ তাঁর জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত নিয়ে এসেছিল, এসব কথায় কথায় তিনি মাঝে মাঝে বলতেন। তিনি অত্যন্ত ছাত্রদরদী ছিলেন। কলেজে ছাত্রদের পড়ানোর সময় ভালবেসে পড়াতেন।

Indian Independence Movement: ‘কারার ওই লৌহকপাট ভেঙে ফেল কর রে লোপাট’… পরাধীন ভারতে কারাগার ভাঙল তাঁরা, জেনে নিন দেশপ্রেমের অনন্য নজির

মধ্যপ্রদেশ, নিমার:১৯৪২ সাল৷ সারা ভারত তখন উত্তাল৷ ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সমগ্র দেশ জুড়ে৷ গান্ধি-সহ একের পর এক শীর্ষস্থানীয় নেতারা জেল বন্দি৷ এরপরও দমানো যায়নি আন্দোলনের ঝাঁজ৷

শহর গ্রামের কত নাম না জানা ব্যক্তিত্বরা স্বাধীনতার যজ্ঞে নিজেকে সঁপে দিয়েছিল৷ ভরে গিয়েছিল ইংরেজদের কারাগার৷ এমনই এক জায়গার নাম মধ্যপ্রদেশের নিমার জেলা৷

আরও পড়ুন:মুম্বইতে ভয়ঙ্কর ঘটনা, মহিলাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা, সন্দেহের তির প্রেমিকের দিকে

স্বাধীনতার আকাঙ্খায় বুঁদ ৬৮ জন ব্যক্তি নেমে পড়ল আন্দোলনে৷ চোখে স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন৷ গান্ধীর আদর্শে তাঁরা আন্দোলনে জড়ালো৷ অবশ্যম্ভাবী ফল জেল বরণ৷ তাই ঘটল তাঁদেরও ভাগ্যে৷

এতো ১৯৪২ সালের হাজার হাজার ভারতীয়ের কাহিনি৷ তবে তাঁরা আলাদা হল কীভাবে? গান্ধিজীর প্রতি ভালবাসায় এঁরা অসাধ্য সাধন করেছিলেন৷

আরও পড়ুন: ফল চাষ করে লাভ ৯৫ লাখ টাকা, জেনে নিন কোন ফল চাষ করে হতে পারেন লাখপতি?

ইতিহাসবিদ দুর্গেশ কুমার জানিয়েছেন, ১৯৪২ সালের ২ অক্টোবর, গান্ধিজীর জন্মদিন পালন করার জন্য জেল থেতে বেরোতে চেয়েছিলেন তাঁরা৷

সেই মতো তাঁরা হোলকারের কাছে আবেদন করেছিলেন৷ কিন্তু অনুমতি মেলেনি৷ উপায়? সিদ্ধান্ত হল ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ ভেঙে ফেলার৷

যেমন ভাবা তেমন কাজ৷ ভেঙে ফেলা হল, বন্দি কাঠের দরজা৷ ২ অক্টোবর, সন্ধে ৭টায় কারাগারে পশ্চিম দিকের কাঠের দরজা ভেঙে স্লোগান দিতে দিতে বেড়িয়ে গেল ৬৮ জন ব্যক্তি৷

জেল থেকে বেরিয়ে তাঁরা হাঁটা শুরু করল৷ জেল রোড, কিটন রোড, এমজি মার্গ হয়ে ঐতিহাসিক ঘন্টাঘর চকে এসে পৌঁছান ৬৮জন দেশপ্রেমী৷

তবে তাঁরা আবার জেলে ফিরেও গিয়েছিলেন৷ পরের দিন সকালে তেরঙ্গা ইত্তোলন করে আবার জেলে পিরে যায় এই ৬৮জন৷

তাঁরা যখন জেল থেকে বেরোচ্ছিলেন, খবর যায় ইংরেজ পুলিশদের কাছে৷ জেল ভাঙার খবর পেয়ে আসে বিশাল পুলিশ বাহিনী৷ শূন্যে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিও চালায় তাঁরা৷

কিন্তু স্বাধীনতা মন্ত্রে দীক্ষিত ব্যক্তিরা কবেই বা ভয়ে পেয়েছেন৷ বরং তাঁদের অদম্য জেদের কাছে হার মানতে হয়েছিল পুলিশদের৷

এমন কত নাম, কত ব্যক্তিরা নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন দেশ স্বাধীনের যজ্ঞে৷ তাঁদের কতটুকু কথাই বা আমরা জানি৷

Indipendence Day 2024: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়ে বিপন্ন জীবন, বীরাঙ্গনা হয়েও ব্রাত্য সাবিত্রীবালা

তমলুক : ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের এক অজানা নাম সাবিত্রী দেবী। তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী হাজরাকে সবাই চেনেন। কিন্তু আর এক বীরাঙ্গনার কথা খুব একটা মানুষ জানে না। কিন্তু ৪২-এর অগাস্ট আন্দোলনের সময়েরও ভূমিকা ছিল অপরিহার্য! পেশাগত কারণে তাঁরা সমাজে ‘পতিতা’ ছিলেন। কিন্তু তা সত্বেও দেশসেবায় নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্বদেশি আন্দোলনে। এই মহিলার জীবনকাহিনি শুনলে অবাক হবেন। তাঁর নামও উল্লেখের দাবি রাখে ইতিহাস। তিনি হলেন সাবিত্রীবালা দেবী।

ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে সেদিন অসংখ্য দেশপ্রেমিক রক্তাক্ত হয়ে, আহত হয়ে মাটিতে পড়ে একফোঁটা জলের জন্য বুকফাটা কান্নায় কাতরাচ্ছেন। সেই আর্তনাদের খবর পেয়েই স্থানীয় এক গ্রাম্য মহিলা, যাঁর নাম সাবিত্রী দেবী, তিনি সমস্ত মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে, ছুটে গিয়েছিলেন তমলুক থানার কাছে শঙ্করআড়া পোলেতে এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকা আহত, রক্তাক্ত বিপ্লবী দেশপ্রেমিকদের মুখে তুলে দিয়েছিলেন পরম যত্নে পিপাসার জল। নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন সেই দেশমাতৃকার সন্তানদের সেবা-শুশ্রূষায়। আহতদের নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্তও তিনি করেছিলেন।

সাবিত্রীদেবী যখন আহতদের সেবা-শুশ্রূষা করছেন, তখন ব্রিটিশ পুলিশকর্মীরা  রাইফেল উঁচিয়ে সাবিত্রীদেবীকে ভয় দেখিয়ে গুলি করে মেরে ফেলার হুঙ্কারও দিয়েছিল বার বার। ইংরেজ পুলিশবাহিনী বন্দুক উঁচিয়ে তেড়ে আসে। সাবিত্রীদেবীও বাড়ি থেকে ঝাঁটা ও বঁটি হাতে ইংরেজ বাহিনীর দিকে এগোতে থাকেন। তাঁর সঙ্গে আরও অনেক বীরাঙ্গনা  বঁটি ও ঝাঁটা হাতে ইংরেজ বাহিনীকে ধাওয়া করে। অকুতোভয় সাবিত্রীদেবীকে তাঁরা সেদিন দমাতে পারেনি। তাঁর সেই রণংদেহী মূর্তি দেখে ইংরেজ পুলিশ বাহিনীও সেদিন থমকে গিয়েছিল। অথচ বীরাঙ্গনা সাবিত্রী দেবী ছিলেন তথাকথিত সমাজচ্যুত এক বারাঙ্গনা নারী। এই ঘটনা সেদিন সারা বাংলা তথা সারা ভারতবর্ষকে বিস্মিত করেছিল। একজন অবহেলিত, অপমানিত, উপেক্ষিত, গ্রাম্য দরিদ্র মহিলা কীভাবে বীরাঙ্গনায় রূপান্তরিত হন— তার প্রামাণ্য নিদর্শন দেখে।

আরও পড়ুন : ঢাকায় ক্ষোভের আগুনে ভস্মীভূত জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড ‘জলের গান’-এর প্রধান শিল্পী রাহুল আনন্দের বাড়ি, পুড়ে ছাই দলের সব বাদ্যযন্ত্র, গানের নথি থেকে আসবাবপত্র

এই প্রসঙ্গে সেই যুগের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এই খবর প্রকাশিত হয়েছিল। পত্রিকাগুলিতে সাবিত্রীদেবীর বীরগাথা নিয়ে চারণকবির একটি কবিতাও প্রকাশ হয়।যদিও এহেন বীরাঙ্গনা নারীর শেষ জীবন ছিল অত্যন্ত কষ্টের। চরম দারিদ্রে কাটে তাঁর জীবন। একটি হতশ্রী মাটির ঘরে, মাটির উনুন, ভাঙা তোবড়ানো একটি অ্যালুমিনিয়ম থালা, শতচ্ছিন্ন কাপড়জামা, কোনওদিন খেতে পেতেন, আবার কোনওদিন ছিল নিরম্বু উপোস। এই ছিল তাঁর দৈনন্দিন জীবন। সবশেষে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা সেই বীরাঙ্গনা ১৯৯২ সালে চিরঘুমে পাড়ি দেন ফেরার দেশে।

West Medinipur News: মেদিনীপুরের এই স্কুলে পড়েছেন বহু বিপ্লবী, দেশের জন্য বরণ করেছেন মৃত্যুকে

মেদিনীপুর: মেদিনীপুরের পরতে পরতে লেগে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস। যে আন্দোলনে ব্রিটিশদের অপশাসন থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য অংশ নিয়েছিলেন তরুণ-তরুণীরা। স্কুলজীবন থেকেই তাঁরা যোগ দিয়েছিলেন স্বদেশী আন্দোলনে। কেউ কেউ আবার প্রাণও বলিদান দিয়েছেন দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে। মেদিনীপুর শহরে অবস্থিত এই ঐতিহ্যমণ্ডিত বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন বহু বিপ্লবী।

সামনেই ভারতের স্বাধীনতা দিবস। দেশবাসী আনন্দের সঙ্গে উৎযাপন করবেন এই বিশেষ দিনটিকে। এই বিশেষ দিনটির জন্য অবদান রয়েছে এই বিশেষ স্কুলটির। অবিভক্ত মেদিনীপুরের মাটিতেই জন্মেছিলেন ক্ষুদিরাম বসু, মাতঙ্গিনী হাজরা, হেমচন্দ্র কানুনগো, অনাথবন্ধু পাঁজা থেকে অনেকেই। তখন ব্রিটিশ শাসন। ১৮৮৩ সালে মেদিনীপুর শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় মেদিনীপুর টাউন স্কুল।

আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার থেকে দক্ষিণের কিছু জেলায় তুমুল বৃষ্টি! বিপর্যয়ের সম্ভাবনা উত্তরবঙ্গেও

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশ নিয়েছিলেন হেমচন্দ্র কানুনগো, অনাথবন্ধু পাঁজা, মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত, রামকৃষ্ণ রায়, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী প্রমুখ এই বিদ্যালয়ে বিশিষ্ট প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। এরা প্রত্যেকেই ছিলেন ভারতবর্ষের চরমপন্থী স্বাধীনতা আন্দোলনের পথিকৃৎ।

আরও পড়ুন: ইরানে ‘ইজরায়েলি হানায়’ হত হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ে

স্বাভাবিকভাবে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সদর, মেদিনীপুর শহরে অবস্থিত এই টাউন স্কুলের প্রতিটি ইটে লেখা রয়েছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রদের ভূমিকা। এই স্কুলের ছাত্ররাই মেদিনীপুরে আসা তিনজন ব্রিটিশ জেলাশাসককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। স্মৃতি বিজড়িত এই বিদ্যালয় আজও স্মরণ করে তাঁদের এই স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ দেওয়া ছাত্রদের।

Freedom Fighter: অত্যাচারী ব্রিটিশ জজের প্রাণ নেওয়া বীর সন্তানের আত্মহুতি আজও স্মরণ করে জয়নগর

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: শহিদ স্বাধীনতা সংগ্রামী কানাইলাল ভট্টাচার্যের (১৯০৯-১৯৩১) নাম অনেকেই জানেন। কিন্তু যেটা জানেন না তা হল এই শহিদ স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন জয়নগর-মজিলপুরের বাসিন্দা। আজও তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এলাকার মানুষ। ২৯ জুলাই দিনটি তাঁর আত্মহুতি দিবস হিসেবে পালিত হয়। এর জন্য গোটা সপ্তাহব্যাপী নানান কর্মসূচি পালিত হয় জয়নগরে।

শহিদ স্বাধীনতা সংগ্রামী কানাইলাল ভট্টাচার্যের আত্মহুতি সপ্তাহ উপলক্ষে বিশাল পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। জয়নগর-মজিলপুরের ভট্টাচার্য পাড়ার সন্তান কানাইলাল ভট্টাচার্য। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা রাইটার্সের অলিন্দের যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন বিনয় বসু ও বাদল গুপ্ত, বেঁচে গিয়েছিলেন দীনেশ গুপ্ত। কিন্ত অত্যাচারী বৃটিশ শাসকরা তাঁকে বাঁচতে দেয়নি। বিচারের প্রহসনে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে ১৯৩১-সালের ৭ জুলাই। আর ১৯৩১-এর ২৭ জুলাই দীনেশ গুপ্তর ফাঁসির হুকুমদাতা আলিপুরের তদানীন্তন দায়রা জজ্ আর আর গর্লিককে আদালতেই গুলি করে হত্যা করে বিচারপতির শেষ বিচার করেছিলেন জয়নগরের বীর সন্তান কানাইলাল ভট্টাচার্য।

আর‌ও পড়ুন: রাত নামলেই আতঙ্ক, সাফ হয়ে যাচ্ছে চা বাগান! এ কী কাণ্ড

গালির্ক সাহেবকে হত্যা করার পরই তীব্র বিষ পটাসিয়াম সায়ানাইডের ক্যাপসুল খেয়ে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন কানাইলাল ভট্টাচার্য। মৃত কানাইলাল ভট্টাচার্যের পকেটে সেই সময় পাওয়া গিয়েছিল একটি ছোট চিরকুট। তাতে লেখা ছিল, ‘ধ্বংস হও; দীনেশ গুপ্তকে ফাঁসি দেওয়ার পুরস্কার লও। ইতি বিমল গুপ্ত।’

নিজের নাম প্রচারের আলোয় না এনে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করতে আত্মবলিদানের এক বিরল নিদর্শন স্থাপন করেছিলেন কানাইলাল ভট্টাচার্য। শহিদের স্মৃতিরক্ষার্থে জয়নগরে তাঁর পৈতৃক ভিটের কাছে আবক্ষ মূর্তি ও জয়নগর-মজিলপুর পুরসভা প্রাঙ্গনে শহিদের স্মারকফলক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছর অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে সারা জয়নগর মজিলপুর জুড়ে এই মহান শহিদের আত্মহুতি দিবস স্মরণ করা হয়।

সুমন সাহা

Jalpaiguri News: এই বাড়িতেই চলত গুপ্ত সমিতির গোপন বৈঠক! জলপাইগুড়িতে আজও তাজা স্বাধীনতার সেই ইতিহাস

জলপাইগুড়ি: আজও ইতিহাসের স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলছে উত্তরবঙ্গের এই জেলা। স্বাধীনতা আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ। বাংলায় সেই আন্দোলনের তীব্রতা ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি।

আরও পড়ুন: ব্যাটে সূর্য, বলে রিয়ান! শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয় দিয়েই গম্ভীর যুগের সুচনা করল ভারত

তৎকালীন স্থানীয় রাজা, প্রজা, থেকে শুরু করে সদ্য নবম শ্রেণীতে ওঠা ছাত্রযুব, ক্ষেতে কাজ করা রাজবংশী কিংবা ডুয়ার্সের জঙ্গল কেটে গজিয়ে ওঠা চা বাগানের আদিবাসী যুব সম্প্রদায়। এমনই দেশপ্রেমীদের নিয়ে শহরের বর্তমান জেলা পরিষদ ভবনের উল্টো দিকের হিন্দু নিবাস হোটেল লাগোয়া একটি ঘরে চলত গুপ্ত সমিতির গোপন বৈঠক। তবে ব্রিটিশ শাসকের কড়া নজর থাকত।

আরও পড়ুন: অলিম্পিক্সে পদকের হাতছানি! মেয়েদের এয়ার পিস্তল বিভাগের ফাইনালে মনু ভাকের

এক সময় সেই কড়া নজরদারির ফাঁদে আটকে যায় ১৮৮৮ সালের ১৩ মে জন্ম নেওয়া সদ্য জেলা স্কুলের নবম শ্রেণীতে পড়া বিপ্লবী বীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত। বিচারে ফাঁসির সাজা হয় জেলার প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদের। আজও সেই বীর সন্তানের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানায় নতুন প্রজন্মের স্বাধীন দেশের নাগরিকেরা।

স্বাধীনতা আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়তেই এই শহরে পা রেখেছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু থেকে মহত্মা গান্ধি-সহ অনেকে। সেই স্মৃতি আজও জেলার কারও কারও মধ্যে তাজা। সেই স্মৃতিই বয়ে নিয়ে চলছে জলপাইগুড়ি জেলা।

Freedom Fighter: স্বাধীনতার পর হয়েছিলেন বাংলার প্রথম খাদ্যমন্ত্রী, গান্ধি ঘনিষ্ঠ চারু ভান্ডারীর নাম শুনেছেন?

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: প্রয়াণ দিবসে স্বাধীনতা সংগ্রামী চারুচন্দ্র ভান্ডারীকে স্মরণ করল ডায়মন্ডহারবাসী। ২৪ জুন, ১৯৮৫ সালে আজকের দিনেই প্রয়াত হন তিনি। মহাত্মা গান্ধির সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। ১৮৯৬ সালের ১৯ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নিজের গোটা জীবন দেশের জন‍্য কাজ করে গিয়েছিলেন এই মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী।

চারুচন্দ্র ভান্ডারী’র স্মৃতিতে ডায়মন্ডহারবারে রয়েছে চারুচন্দ্র ভান্ডারী সরনী। তাঁর প্রতিষ্ঠা করা স্বরাজ ভবন এখনও রয়েছে ডায়মন্ড হারবারের নুনগোলায়। এক সময় তাঁর তৈরি খাদি মন্দির সুন্দরবনের গ্রামীণ এলাকার অর্থনীতির ভিত্তি হয়ে উঠেছিল। সেখানে তৈরি হত চরকায় কাটা সুতোর বস্ত্র। বর্তমানে সেই চারুচন্দ্র ভান্ডারীর তৈরি খাদি মন্দির আজ আগাছায় ঢেকে গিয়েছে।

আর‌ও পড়ুন: ছাদের দিকে তাকালেই আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হওয়ার যোগাড়! প্রাণ হাতে নিয়েই চলছে চিকিৎসা

তাছাড়াও তিনি যে বাড়িটিতে থাকতেন সেই বাড়িটিরও আজ বেহাল দশা। যেন তেন প্রকারে দাঁড়িয়ে আছে সেটি। সেজন‍্য খাদি মন্দিরের সংস্কারের আর্জি জানিয়েছে চারুচন্দ্র ভান্ডারী স্মৃতিরক্ষা কমিটি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলায় প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের মন্ত্রিসভায় চারুচন্দ্র ভান্ডারী প্রথম খাদ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাঁর মৃত্যুর পর সংস্কারের অভাবে খাদি মন্দির পুরোপুরি নষ্ট হতে বসেছে। এ নিয়ে চারুচন্দ্র ভান্ডারী স্মৃতিরক্ষা কমিটির সহ-সম্পাদক সিদ্ধানন্দ পুরকাইত বলেন, চারুবাবু দেশের গৌরব। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত খাদি মন্দির আজ ধ্বংসের পথে। আমারা চেষ্টা করছি সেটাকে রক্ষণাবেক্ষণ করার। এ নিয়ে খাদি মন্দিরের কর্মী গুনধর মণ্ডল জানান, চারুবাবু ডায়মন্ডহারবারের গর্ব। তিনি স্বদেশী আন্দোলনের ভাবধারা এলাকায় প্রসার করেন। সেই ধারা আজও ডায়মন্ডহারবারে বহন করে নিয়ে চলেছে খাদি মন্দির। এই খাদি মন্দিরেই এসেছিলেন মহাত্মা গান্ধি।

নবাব মল্লিক