কলতানের গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন

Kalatan Dasgupta: ‘দু’জনেই স্বীকার করেছেন!’ কলতান দাশগুপ্তের গ্রেফতারি নিয়ে পাল্টা রাজ্যকে প্রশ্ন হাইকোর্টের! রিপোর্ট পেশের নির্দেশ

কলকাতা: ডিওয়াইএফআই নেতা কলতান দাশগুপ্তের গ্রেফতারি নিয়ে এবার প্রশ্ন কলকাতা হাইকোর্টের। আগামিকাল, বৃহস্পতিবার রাজ্যকে রিপোর্ট পেশ করতে নির্দেশ দিলেন বিচারপতি রাজর্ষী ভরদ্বাজ। আগামীকাল সকাল সাড়ে দশটায় পরবর্তী শুনানি। ”কেউ যদি আমাকে ফোন করেন এবং আমি যদি ফোন ধরি তাহলে যিনি ফোন করেছেন, তিনি তার যা ইচ্ছা বলতে পারেন। তার ওপর তো আমার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। আমি তো ভয় পাচ্ছি, তাহলে কি কোনও অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসলে ধরতে পারব না?” রাজ্যকে প্রশ্ন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের।

কলতান দাশগুপ্তের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ”চিকিৎসককদের আন্দোলনের মধ্যে শাসক দলের এক নেতা একটি অডিও রেকর্ডিং সামনে নিয়ে আসেন। পুলিশ FIR দায়ের করে। আন্দোলনে গণ্ডগোল পাকানোর পরিকল্পনা করছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ দায়ের করে FIR করে। কার কাছ থেকে পেনড্রাইভ সংগ্রহ করা হয়েছে, তার কোনও উল্লেখ নেই। কোনও রকম নোটিস দেওয়া হয়নি। অডিও ক্লিপে থাকা কথোপকথন কখনই কলতানের সঙ্গে হয়নি। সঞ্জীব দাসের থেকে কোনও ফোন কলতান পাননি। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেওয়া যায় যে কলতানের সঙ্গে সঞ্জীব দাসের কথা হয়েছে, তাহলেও যেখানে তিন বছরের কম সাজা রয়েছে, সেক্ষেত্রে কি এভাবে গ্রেফতার করা যায়?”

আরও পড়ুন: তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ষড়যন্ত্রে যুক্ত সন্দীপ-অভিজিৎ? সিবিআই-কে প্রশ্ন বিচারকের! মিলল চমকে দেওয়া উত্তর

বিচারপতি তখন প্রশ্ন করেন, ”জামিনের আবেদন করেছেন?” বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য উত্তর দেন, ”নিম্ন আদালতে আমাকে পেশ করা হয়েছিল। সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করা যায়নি।” রাজ্যকে এরপর ফের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ প্রশ্ন করেন, ”কেউ যদি আমাকে ফোন করেন এবং আমি যদি ফোন ধরি তাহলে যিনি ফোন করেছেন তিনি তার যা ইচ্ছা বলতে পারেন। তার ওপর তো আমার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। আমি তো ভয় পাচ্ছি, তাহলে কি কোনও অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসলে ধরতে পারব না?” বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ”কন্ঠস্বর পরীক্ষা করা হোক। কণ্ঠস্বর সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কীভাবে গ্রেফতার করা হল? ধরুন আমি সারাদিনে ত্রিশটি ফোন ধরি। সেখানে কেউ যদি আমাকে এসব বলে তাহলে তার ভিত্তিতে কি আমাকে গ্রেফতার করা যায়?”

যদিও রাজ্যের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, ”সঞ্জীব দাস জেরায় কলতান দাশগুপ্তর নাম বলেন। দুজনের কল রেকর্ড থেকে খতিয়ে দেখা হয়। দেখা যায় সঞ্জীবের ফোন থেকে কলতানের ফোনে ফোন গিয়েছে। সঞ্জীবের বয়ানের ভিত্তিতে কলতানকে গ্রেফতার করা হয়।” যদিও কলতান দাশগুপ্তের আইনজীবী পাল্টা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ”পুলিশ অন্য মামলায় জড়িয়ে দিতে পারে।” রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল পাল্টা বলেন, ”এই ধরনের সন্দেহ অমূলক। পুলিশ চাইলে আরও ১০০টা মামলায় জড়িয়ে দিতে পারে, সেটা কখনই হয় না। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় দুজনেই জানায় যে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে। দুটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তদন্তে কলতান সহযোগিতা করছেন না। মোবাইল আনলক করছেন না।”

রাজ্যকে উদ্দেশ করে বিচারপতি বলেন, ”সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে গ্রেফতারির পরে, কিন্তু এখানে তো গ্রেফতারিকেই চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত যে তথ্য প্রমাণ আছে তার ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার করা যায়? আপনাদের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, প্রথমে আপনারা সঞ্জীব দাসকে গ্রেফতার করেন। তার বয়ান রেকর্ড করেন। সেখান থেকে কল রেকর্ড খতিয়ে দেখেন এবং তারপর কলকাতা দাশগুপ্তকে গ্রেফতার করেন।” রাজ্যের তরফে বলা হয়, ”দুজনেই জেরায় তাদের অপরাধ স্বীকার করেন। এটা নিম্ন আদালতের নির্দেশনামায় আছে।”

রাজ্যকে পাল্টা প্রশ্ন করেন বিচারপতি। বলেন, ”এই দুজন কী ধরনের পরিকল্পনা করেছিল? তারা হামলা চালাবে যাতে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই তো? কলতান দাশগুপ্তর অপরাধের কোন পূর্ব ইতিহাস আছে?” কলতানের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, ‘না’। রাজ্যের তরফে বলা হয়, ”কেউ প্রথম বারের জন্য কোনও অপরাধ করতেই পারেন।”